বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

পর্যটক বাড়লেও সংকট কাটেনি কুয়াকাটায়

সঞ্জয় দাস লিটু, পটুয়াখালী ও উত্তম কুমার হাওলাদার, কলাপাড়া

পর্যটক বাড়লেও সংকট কাটেনি কুয়াকাটায়

কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটায় পর্যটকের ভিড় বেড়েই চলেছে। তবে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত আর সাগরের বিশালতা উপভোগ করতে এসে নানা বিড়ম্বনা ও ভোগান্তিতে পড়তে হয় ভ্রমণপিপাসুদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়ায় এখানে পরিকল্পিত উন্নয়ন হচ্ছে না। বিকশিত হয়নি পর্যটন। অভিযোগ রয়েছে, দর্শনীয় স্পটগুলোর কথা শুনে আর প্রকৃতির খেয়াল উপভোগ করতে পর্যটকরা কুয়াকাটায় আসেন। তবে ফেরার সময়ে কুয়াকাটার প্রতি নেতিবাচক ধারণা নিয়ে যেতে হচ্ছে।

জানা গেছে, এখানে পর্যটকদের থেকে হোটেল-মোটেলগুলোর বাড়তি ভাড়া আদায়, নিম্নমানের খাবার সরবরাহ ও অধিক মূল্য আদায় এবং বাসযাত্রীদের হয়রানি হামেশাই ঘটছে। বাসে আসা পর্যটকদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়। রাস্তায় বাস দাঁড় করিয়ে রাখা, খারাপ ব্যবহার, মাঝপথে নামিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীদের। সৈকতে আরেক বিড়ম্বনা মোটরসাইকেলের উৎপাত। প্রশাসন বারবার নিষেধ করলেও মানছে না স্থানীয় মোটরসাইকেল সিন্ডিকেট।

আরও জানা গেছে, সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে কুয়াকাটা রক্ষায় সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে কিছু এলাকা বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড; যা এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যত্রতত্র। অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে পর্যটকদের চলাফেরায় বিঘ্ন ঘটছে। কুয়াকাটা ঘুরে পর্যটকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সৈকতের অবস্থা এখন শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। সেখানে রাতে ঘুরতে গিয়ে প্রায়ই আহত হন পর্যটকরা। পর্যটনসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এখনই পরিস্থিতির পরিবর্তন না ঘটালে মুখ থুবড়ে পড়বে কুয়াকাটার পর্যটনশিল্প। সম্প্রতি নরসিংদীর বাবুরহাট থেকে ব্যবসায়ী রুবেল তার পরিবারের আট সদস্য নিয়ে ছন্দা পরিবহনের একটি বাসে কুয়াকাটা রওনা হন। পথিমধ্যে রুবেলের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন সুপারভাইজার। এতেও থেমে থাকেনি। বাসটি কুয়াকাটার তুলাত?লি পৌঁছ?ালে বা?সের স্টাফরা তাদের ওপর হামলা ও মারধর ক?রেন। তারা রুবেল ও তার স্বজনদের মোবাইল ভেঙে ফেলেন। পরে হামলার শিকার রুবেল ৯৯৯-এ ফোন করে এ ঘটনা জানালে মহিপুর থানা পুলিশ বাসচালক মো. কামাল ও সুপারভাইজার জামালকে থানায় নিয়ে যায়। মারধরের শিকার ওই পর্যটক বলেন, ‘কুয়াকাটা এসে এমন বিপদে পড়তে হবে জানলে আসতাম না। এত কষ্ট আগে কখনো পাইনি।’ কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এম বাচ্চু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পর্যটকদের ওপর হামলা এর আগেও বহুবার হয়েছে। বাসমালিকদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে।’ পর্যটক আবদুস সালাম আরিফ বলেন, এ বিষয়ে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত। না হলে পর্যটনশিল্পে ধস নামবে।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল খালেক বলেন, ‘আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

খুলনা থেকে ঘুরতে আসা চাকরিজীবী ইশরাত হোসেন, শামিমা হক, সাব্বির হোসেনসহ বহু পর্যটকের অভিযোগ, কুয়াকাটায় অধিকাংশ হোটেল-মোটেলের মান ভালো না। ভাড়া অনেক বেশি। মাঝেমধ্যেই পচাবাসি খাবার সরবরাহ করা হয়। খাবারের তালিকার চেয়ে বাড়তি দাম রাখা হয়। পর্যটকরা আরও বলেন, খাওয়ার পর মূল্য পরিশোধ করতে গেলে তারা নানান টালবাহানা করে। চাহিদামতো টাকা না পরিশোধ করলে খারাপ আচরণ করেন দোকানিরা।

ঢাকা থেকে আগত পর্যটক ডা. নুসরাত জাহান বলেন, ‘খাবারের মান তেমন ভালো না, দামও অনেক। থাকার হোটেলের সেবাও তেমন ভালো না।’ কুয়াকাটা গেস্টহাউসের পরিচালক ও কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব শরিফ বলেন, ‘আমাদের তালিকাভুক্ত হোটেল-মোটেলগুলোয় ভাড়া নির্ধারণ করা রয়েছে এবং চার্ট টাঙানো আছে। এসব হোটেল পর্যটকদের থেকে বেশি ভাড়া নেয় এমন প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ পটুয়াখালী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মোহম্মদ সেলিম জানান, সম্প্রতি কুয়াকাটার বেশ কয়েকটি খাবার হোটেল ও আবাসিক হোটেলকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যসচিব শংকর চন্দ্র বৈদ্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কুয়াকাটার পরিকল্পিত উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যানটি বর্তমানে নগর উন্নয়ন বরিশাল আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে রিভাইজ হচ্ছে। নগর উন্নয়নের বরিশাল আঞ্চলিক অফিসের সিনিয়র প্ল্যানার আসাদুজ্জামান জানান, ২০১৭ সালে সাতটি উপজেলা নিয়ে কুয়াকাটার মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ হাতে নেয় নগর উন্নয়ন সংস্থা।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে আমরা একটি বিচ ম্যানেজমেন্ট টিম গঠন করতে যাচ্ছি। টিমের সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি করবেন।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর