শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

দেশের ১৩ ভাগ নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক

জনস্বাস্থ্য প্রকল্পের প্রতিবেদন

হাসান ইমন

দেশের ৫৪টি জেলায় ১ লাখ ৬৬ হাজার নলকূপের আর্সেনিক পরীক্ষা করা হয়েছে। এসব নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ধরা পড়েছে গড়ে ১৩ ভাগ। আর ২০০৩ সালে পরীক্ষায় ২৯ ভাগ আর্সেনিক পাওয়া যায়। গত ২০ বছরে নলকূপে আর্সেনিকের পরিমাণ কমেছে ৫০ ভাগের বেশি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের ‘পানি সরবরাহে আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন’ প্রকল্পের সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে আসে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দেশে দ্বিতীয়বারের মতো ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ‘পানি সরবরাহে আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নেয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। পার্বত্য জেলাগুলোসহ ১০টি জেলা ছাড়া বাকি ৫৪টিতে কমবেশি আর্সেনিকের প্রকোপ রয়েছে। এ প্রকল্পের অধীনে দেশের ৫৪ জেলার নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি আছে কি না তা পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২১ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এক বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালে শেষ করা হয়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। প্রকল্পটিতে ৫৪ জেলায় মোট ১ কোটি ৬০ লাখ নলকূপের আর্সেনিক পরীক্ষা করা হয়েছে। এসব নলকূপে আর্সেনিক ধরা পড়েছে ১৩.০৯২ ভাগ । এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আর্সেনিক রয়েছে গোপালগঞ্জ জেলায়। যেখানে আর্সেনিকের পরিমাণ ৫৩ ভাগ। আর্সেনিকের পরিমাণ গড়ে ৩০ ভাগের বেশি পাওয়া জেলাগুলো হলো- চাঁদপুর ৪৮, সাতক্ষীরা ৪৩, কুমিল্লা ৪০, লক্ষ্মীপুরে ৩৯, বাগেরহাটে ৩৫ ও মাদারীপুরে ৩২ ভাগ নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে। আর কক্সবাজার ও দিনাজপুর জেলায় আর্সেনিক নেই। সবচেয়ে কম আর্সেনিকযুক্ত নলকূপ রয়েছে গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নওগাঁ, নাটোর ও রংপুরে।

এর আগে ২০০৩ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে দেশের ২৭১টি উপজেলার ৫০ লাখ নলকূপের আর্সেনিক পরীক্ষা করেছে। যার মধ্যে ১৪.৫ লাখ অর্থাৎ ২৯ ভাগ নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া যায়। এ বিষয়ে আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্পের পরিচালক বিধানচন্দ্র দে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রকল্পে ৫৪টি জেলায় ১ লাখ ৬৬ হাজার টিউবওয়েলের পানির আর্সেনিকের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। সেখানে গড়ে আর্সেনিকের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩ ভাগ। আর ২০০৩ সালে আর্সেনিক নির্ণয়ে সমীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে ২৯ ভাগ আর্সেনিকের পরিমাণ শনাক্ত করা হয়। অর্থাৎ ৫০ ভাগের বেশি আর্সেনিকের পরিমাণ কমেছে।  আর্সেনিকের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। একই সঙ্গে অগভীর নলকূপের চেয়ে গভীর নলকূপের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে গত ২০ বছরে আর্সেনিক দূষণের পরিস্থিতি অনেকটা ভালো হয়েছে।

জানা যায়, আর্সেনিক মূলত একপ্রকার রাসায়নিক উপাদান। পানিতে স্বল্প মাত্রায় আর্সেনিক সব সময়ই থাকে। যখন এই মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন মানবদেহে নানা রোগের উপসর্গ তৈরি করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৬০ সালে প্রতি লিটার পানিতে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা নির্ধারণ করে দশমিক শূন্য ৫ মিলিগ্রামে। এরপর ১৯৯৩ সালে তা দশমিক শূন্য ১ মিলিগ্রামে কমিয়ে আনা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ১৯৬৩ সালের সেই মাত্রা আর পরিবর্তন করেনি। বাংলাদেশ সরকার নির্ধারিত মান অনুযায়ী প্রতি লিটার পানিতে দশমিক শূন্য ৫ মিলিগ্রামের বেশি আর্সেনিক থাকলে সে পানি পান করা কিংবা রান্নার কাজে ব্যবহার করা যাবে না।

যাদের শরীরে আর্সেনিকের বিষক্রিয়া ধরা পড়ে, তাদের ‘আর্সেনিকোসিসে’ আক্রান্ত রোগী বলা হয়। দেশে আর্সেনিকের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বা তাদের চিকিৎসা পরিস্থিতি নিয়ে হালনাগাদ কোনো তথ্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) ২০১৯ সালের গুচ্ছ জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১১ দশমিক ৮ ভাগ মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে। সেই হিসেবে প্রায় ২ কোটি মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে।

সর্বশেষ খবর