শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্বরূপে ছুটির দিনের বইমেলা

মোস্তফা মতিহার

স্বরূপে ছুটির দিনের বইমেলা

গতকাল ছিল ছুটির দিন। লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছিল অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। শাহবাগ থেকে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে রমনা কালীমন্দির, মৎস্য ভবন থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট- সর্বত্রই ছিল বইপ্রেমীদের বিশাল জটলা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে মেলায় প্রবেশে বিরক্তি ছিল না বইপ্রেমীদের।

বাংলা একাডেমির বিপরীতে রমনা কালীমন্দির গেট, টিএসসি ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট গেটসহ সবগুলো প্রবেশপথেই ছিল বইপ্রেমীদের বাঁধভাঙা স্রোত। উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনার সেই ঢেউ আঁছড়ে পড়েছিল স্টল ও প্যাভিলিয়নের সামনে। এদিনের মেলায় প্রতিটি স্টল ও প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মীরা ব্যস্ত ছিলেন বিকিকিনিতে। বিকাল থেকে শুরু করে মেলার প্রবেশদ্বার বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছিলেন না প্রতিটি স্টল ও প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মীরা।  গত  কয়েকদিনের ভাটা দেখে প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা প্রত্যাশা করেছিলেন শুক্রবার বইপ্রেমী ও দর্শনার্থীদের ঢল নামবে। গতকাল মেলার দশম দিনে বইপ্রেমী ও দর্শনার্থীদের বাঁধভাঙা জোয়ারে প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীদের প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির সমন্বয় ঘটেছে। স্টল ও প্যাভিলিয়নে বইপ্রেমীদের জটলা ও বইয়ের বিকিকিনিতে অমর একুশে বইমেলা চিরচেনা রূপ ফিরে পেয়েছে। লোকে লোকারণ্য বইমেলায় সবগুলো মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কেও জ্যাম লেগে গিয়েছিল। এমন মেলা প্রতিদিন হোক- সেরকম প্রত্যাশা প্রায় সব প্রকাশকের। এদিন বিকাল থেকে রাত অবধি তারুণ্যের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে এবারের বইমেলাকে সফলতার পথে একধাপ এগিয়ে নিয়েছে। বিকালে কথা হয় দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্যর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজলের সঙ্গে। তিনি জানান, ঐতিহ্য এবার ২০৩টি নতুন বই মেলায় এনেছে। সবগুলো বই সুপাঠ্য হওয়ায় তাদের প্যাভিলিয়নের বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে, প্রকাশনা সংস্থার অবসর-এর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, আজ (গতকাল) মেলায় যেভাবে জনস্রোত নেমেছে বিক্রিও সেরকম হয়েছে। প্রকৃত বইপ্রেমীরা মেলাকে সফলতার পথে এগিয়ে রেখেছেন। কথা প্রকাশের ব্যবস্থাপক ইউনুস আলী বলেন, আজকের (গতকালের) মেলার চিত্র দেখে প্রাণটা জুড়িয়ে গেল। কয়েকদিন ধরে যে প্রত্যাশা করেছিলাম সেই প্রত্যাশার পরিস্ফুরণ ঘটেছে। আহ! এরকম বিকিকিনি ও লোকে লোকারণ্য মেলা যদি প্রতিদিন হতো তাহলে লেখক, পাঠক, প্রকাশক সবাই মানসিকভাবে তৃপ্তি পেতেন। ছুটির দিনের এ ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে সেটাই চাই। অন্যদিকে, দ্বিতীয় শুক্রবারের তৃতীয় ছুটির দিন সকাল ১১টায় মেলার প্রবেশদ্বার খোলা হয়। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল মেলার তৃতীয় শিশুপ্রহর। এ প্রহরের শিশুচত্বরের সিসিমপুরে টানা দুই ঘণ্টা ইকরি, শিকো, হালুম ও টুকটুকির সঙ্গে দূরন্তপনায় মেতে ওঠার পাশাপাশি অভিভাবকের কাছ থেকে নিজেদের প্রিয় কমিকস, কার্টুন ও গল্পের বই আদায় করে নেয় খুদে পাঠকরা। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এতে ক-শাখায় ১৯৫, খন্ডশাখায় ১৮৩ এবং গ-শাখায় ৬৮ জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন শিল্পী হাশেম খান। আর সকাল সাড়ে ৯টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তেন শিশু- কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২ শতাধিক প্রতিযোগী অংশ নেয়।

স্যামুয়েল হকের ‘কবিতায় স্যামুয়েল’ : জি সিরিজ প্রকাশ করেছে স্যামুয়েল হকের কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতায় স্যামুয়েল’। লেখক জানান, বইটির প্রত্যেকটি কবিতা সহজ ভাষায় চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সবগুলো কবিতায় ফুটে উঠেছে জীবন-জগতের ভাববিন্যাস। বইটি ইতোমধ্যেই পাঠকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। খাদেমুল জাহানের প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণে ৫০টি কবিতা দিয়ে সাজানো বইটির দাম ২৫০ টাকা। পাওয়া যাচ্ছে বাতিঘর প্রকাশনীর স্টলে।

নতুন বই : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মেলার দশম দিনে নতুন বই এসেছে ২৬০টি। এর মধ্যে গল্পের বই ৩০টি, উপন্যাস ৪৬, প্রবন্ধ ১৩, কবিতা ৭৯, গবেষণা চার, ছড়ার আট, শিশুসাহিত্য ১৮, জীবনী ছয়, রচনাবলি দুই, মুক্তিযুদ্ধ তিন, নাটক তিন, বিজ্ঞান এক, ভ্রমণ আট, ইতিহাস পাঁচ, রাজনীতি এক, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য এক, বঙ্গবন্ধু এক, রম্য/ধাঁধা দুই, ধর্মীয় তিন, অনুবাদ দুই, সায়েন্সফিকশন ছয় ও অন্যান্য ১৮টি বই। গত দশ দিনে মোট বই প্রকাশ পেয়েছে ১ হাজার ২৫টি।

মূল মঞ্চ : বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদ এবং জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : এস এম সুলতান’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মলয় বালা এবং সৈয়দ নিজার। আলোচনায় অংশ নেন ইমাম হোসেন সুমন, নাসির আলী মামুন, সুশান্ত কুমার অধিকারী এবং নীরু শামসুন্নাহার। সভাপতিত্ব করেন মুনতাসীর মামুন। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন বায়তুল্লাহ কাদেরী, সঞ্জীব পুরোহিত, ফারহানা রহমান এবং রুহ রুহেল। আবৃত্তি করেন ডালিয়া আহমেদ, নুরুজ্জামান, মাসুদ রানা, মাহমুদুল হাকিম তানভীর। দলীয়নৃত্য পরিবেশন করে জিনিয়া নত্যৃকলা একাডেমি, নিক্কন পারফরমিং আর্ট সেন্টার, শান্তি ভাবদর্শন চর্যাকেন্দ্র এবং আনসার ড্যান্স একাডেমির শিল্পীরা। দলীয় আবৃত্তি করেন বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ এবং ত্রিলোক বাচিক পাঠশালার শিল্পীরা।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর