বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

পণ্য রপ্তানিতে চার প্রতিষ্ঠানের ৩৭৯ কোটি টাকা পাচার

নিজস্ব প্রতিবেদক

পণ্য রপ্তানিতে ব্যবহার করা হয়েছে ভুয়া ইএক্সপি (এক্সপোর্ট পারমিশন) ও সেলস কন্ট্রাক্ট। ১ হাজার ৭৮০টি পণ্য চালানে জালিয়াতি করা হয়। জালিয়াত চক্র বিল অব এক্সপোর্টে ব্যবহার করে শুল্কমুক্ত সুবিধার কোড নম্বর। এভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কাতার, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, নাইজেরিয়াসহ অন্তত সাতটি দেশে বিপুল পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করেছে দেশের চারটি প্রতিষ্ঠান। ভুয়া কাগজপত্রে রপ্তানি হওয়া ১৮ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন পণ্যের টাকা দেশে আসেনি। অথচ এ রপ্তানির মাধ্যমে অন্তত ৩৭৯ কোটি টাকা পাচার করার তথ্য পেয়েছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এর সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান চারটি হলো- রাজধানীর দক্ষিণখানের সাবিহা সাইকি ফ্যাশন ও ইমু ট্রেডিং করপোরেশন, উত্তরার ইলহাম এবং কাকরাইলের এশিয়া ট্রেডিং করপোরেশন। গতকাল সকালে কাকরাইলে আইডিইবি ভবনে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ ফখরুল আলম। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যখন কোনো জালিয়াত চক্র অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে রপ্তানি করে, তখন তার উদ্দেশ্যই থাকে রপ্তানিমূল্য কোনোভাবেই দেশে আসবে না। সেক্ষেত্রে তারা পণ্যের মূল্য কোনো না কোনোভাবে কম দেখানোর চেষ্টা করে। তার প্রধান লক্ষ্যই হলো টাকা বিদেশে পাচার করা। সেক্ষেত্রে তারা পণ্য রপ্তানির কথা বললেও উদ্দেশ্য হলো পণ্যের বিপরীতে টাকা আর দেশে আসবে না। বৈদেশিক মুদ্রা বৈধ পন্থায় দেশে প্রত্যাবাসিত হওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় মানি লন্ডারিং সংঘটিত হয়।

ডিজি বলেন, রপ্তানি দলিল জালিয়াতি করে বিদেশে পণ্য রপ্তানির অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত করে অর্থ পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গায় অভিযান চালিয়ে সাবিহা সাইকি ফ্যাশনের জালিয়াতির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। সেখানে সাতটি ৪০ ফিট কনটেইনারে রক্ষিত ৯টি পণ্য চালান পরীক্ষা করে ঘোষণা বহির্ভূত একাধিক পণ্য পাওয়া যায়। রপ্তানিকারকের ঘোষণা অনুযায়ী, টি-শার্ট ও লেডিস ড্রেস রপ্তানির কথা। কিন্তু পাওয়া গেছে বেবি ড্রেস, জিনস প্যান্ট, লেগিংস, শার্ট, শালসহ ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য। পরে কাস্টমস গোয়েন্দার চট্টগ্রামের যুগ্ম পরিচালককে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে দেখা যায়- সাবিহা সাইকি ফ্যাশন বিভিন্ন সময়ে ৮৬টি পণ্য চালান রপ্তানি করেছে। এ প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি করা পণ্যের বিনিময় মূল্য প্রায় ১৮ কোটি টাকা। পণ্যের চালানগুলোর নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তারা যে রপ্তানির অনুমতিপত্র (ইএক্সপি) দিয়েছিল, সেগুলো ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে। একটি অনুমতিপত্র একাধিক রপ্তানির চালানে ব্যবহারের সুযোগ নেই। ফলে এসব ইএক্সপির কার্যকারিতা নেই। এতে বৈধ পথে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, সাবিহা সাইকি ফ্যাশনসহ চারটি প্রতিষ্ঠান একই কৌশলে জালিয়াতি করেছে। এশিয়া ট্রেডিং করপোরেশন ২৮২ কোটি টাকা, ইমু ট্রেডিং করপোরেশন ৬২ কোটি টাকা ও ইলহাম করপোরেশন ১৭ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে। কাগজপত্র জালিয়াতি করায় ফৌজদারি মামলা হবে। আর রপ্তানির অর্থ দেশে না আনায় মানি লন্ডারিং মামলা হবে। এ রপ্তানির সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। এদিকে কাস্টমস গোয়েন্দার উপপরিচালক শাকিল খন্দকার জানিয়েছেন, সাবিহা সাইকি ফ্যাশন বিভিন্ন সময় মোট ৮৬টি চালানের মাধ্যমে ৯৯৭ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- মেনস ট্রাউজার, টি-শার্ট, বেবি সেট, ব্যাগ, পোলো শার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট ও হুডি। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব ও নাইজেরিয়ায় রপ্তানি করা হয়। রপ্তানিতে ব্যবহার করা ইএক্সপি অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড ও ব্যাংক থেকে যাচাই করা হয়। ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে- রপ্তানিকারক সাবিহা সাইকি অন্য রপ্তানিকারকের ইএক্সপি ব্যবহার করেছে। যার কারণে রপ্তানির অর্থ দেশে আসেনি। জাল ইএক্সপি ব্যবহার করায় অ্যাসাইকুডাতে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিন নম্বরের সঙ্গে অটো মিল হয়নি। এশিয়া ট্রেডিং করপোরেশন নামে প্রতিষ্ঠানটি সাবিহা সাইকির মতো একই কায়দায় ইএক্সপি জালিয়াতি করে বিভিন্ন সময় ১ হাজার ৩৮২ চালানে ১৪ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি করেছে। আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কাতার ও যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে- টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস। রপ্তানি করা পণ্যের মূল্য প্রায় ২৮২ কোটি টাকা। এশিয়া ট্রেডিংয়ের লিয়েন ব্যাংক ব্র্যাক ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছে- এ প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালের পর কোনো রপ্তানি করেনি। আর ইমু ট্রেডিং করপোরেশন ও ইলহামের তদন্তে দেখা গেছে, এ দুই প্রতিষ্ঠানও একই কায়দায় ২৭৩টি চালানে ২ হাজার ৫২৩ মেট্রিক টন টি-শার্ট, ট্রাউজার, টপস সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও আরব আমিরাতে রপ্তানি করেছে। যার মূল্য প্রায় ৬২ কোটি টাকা। তাদের লিয়েন ব্যাংক সোনালী ব্যাংক থেকে জানানো হয়, এ দুই প্রতিষ্ঠানের নামে রপ্তানিতে ব্যবহৃত ইএক্সপি সোনালী ব্যাংক থেকে ইস্যু করা হয়নি।

 

সর্বশেষ খবর