রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

কৌশলী অবস্থানে হেফাজতে ইসলাম

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

কৌশলী অবস্থানে হেফাজতে ইসলাম

দেশের আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ২০৩টি মামলা দ্রুত উঠে যাবে না কি ঝুলন্তই থাকবে তা নিশ্চিত হতে পারছে না সংগঠনটি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, মামলাগুলো নিয়ে সরকার ও হেফাজত কৌশলগত অবস্থান নিয়েছে। হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতৃত্ব চাইছে, জাতীয় নির্বাচনকে পুঁজি করে মামলাগুলো প্রত্যাহার করিয়ে নিতে। কিন্তু নির্বাচন সামনে থাকায় সরকার মামলাগুলো নিয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে চায় না।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ হলে চার্জশিট দেওয়া হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মামলার গতি শ্লথ করতে কিংবা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়ে কোনো অফিশিয়াল নির্দেশনা নেই। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যও করতে পারব না।’

তবে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, ‘মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতার নেতাদের জামিনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে আলাপ হয়েছে। তিনি বিষয়টা দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।’

হেফাজতে ইসলামের এক নেতা বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই মামলাগুলো প্রত্যাহার কিংবা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন করা দরকার। কারণ নির্বাচনের আগে তা যত সহজ হবে, নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে তা অনেক কঠিন হয়ে যাবে।’ জানা যায়, ২০২১ সালের ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করেন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর চালান হেফাজতের কর্মীরা। এ ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় ১৫৪টি মামলা দায়ের হয়। এ আগে ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে দেশের বিভিন্ন থানায় ৫৩টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ৪৯টি মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। ২০২১ সালের ঘটনার পর অভিযানে কেন্দ্রীয় নেতাসহ সারা দেশ থেকে কয়েক শ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর হেফাজতের অবস্থান পরিবর্তন হয়। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হেফাজতে ইসলামের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর হেফাজত নেতারা দাবি করে আসছেন কারাগারে বন্দি সংগঠনের নেতাদের মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ওই বৈঠকের পর কয়েকবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেন হেফাজত নেতারা। এরপর একে একে জামিনে কারাগার থেকে মুক্ত হন হেফাজতের প্রায় সব নেতা। যদিও হেফাজতের কট্টরপন্থি হিসেবে পরিচিত ১৫ নেতা এখনো কারাগারে রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, সাবেক অর্থ সম্পাদক মুনির হুসাইন কাসেমী, সহকারী মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেন রাজি, মাহমুদুল হাসান গুনবী উল্লেখযোগ্য। এ বিষয়ে কথা হয় হেফাজত ইস্যু দেখভাল করেন এমন কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে সরকারের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো সম্পর্ক বিরাজ করছে। তাই এ মুহূর্তে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো নাড়াচাড়া করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চাই না। এরই মধ্যে মামলার তদন্তে ধীরগতি কৌশল অবলম্বন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের সংকেত দেওয়া হয়েছে ঊর্ধ্বতন মহল থেকে। তুলনামূলক কম কট্টরপন্থিদের জামিন দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে কট্টরপন্থি কয়েকজন ছাড়া গ্রেফতার প্রায় সব নেতাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মামলার বিষয়ে নির্বাচনের আগে কোনো সিদ্ধান্ত না-ও হতে পারে।

সর্বশেষ খবর