শুক্রবার, ১৯ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
মোখার তাণ্ডব

লড়াই বিশুদ্ধ পানির জন্য

কক্সবাজার প্রতিনিধি

লড়াই বিশুদ্ধ পানির জন্য

ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতের পর গতকাল পঞ্চম দিনেও স্বাভাবিক হয়নি সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ। এ দুই জায়গার অর্ধেকের বেশি নলকূপ পানিশূন্য। বাকি অর্ধেকে পানি মিললেও তা লবণাক্ত। ফলে এ দুই দ্বীপের বাসিন্দারা বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া ছাড়া অন্যান্য এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও সেন্টমার্টিনে বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনো বন্ধ। ঘূর্ণিঝড় মোখায় তার ছিঁড়ে যাওয়ায় জেনারেটর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এক মাসের আগে স্বাভাবিক হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য হাবিব খান। তিনি আরও জানান, কয়েকটি নলকূপের পানি দ্বারা পুরো দ্বীপবাসীর চাহিদা মিটাতে হচ্ছে। এ ছাড়া বিধ্বস্ত ঘর তৈরির কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি অন্তত ২ হাজার পরিবার। গতকাল দুপুরে সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের সদস্য (মেম্বার) খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, মোখা-পরবর্তী দ্বীপে প্রধান সমস্যা খাবার পানি। দ্বীপের বেশির ভাগ নলকূপ নষ্ট হয়ে গেছে। যে কয়েকটি নলকূপ থেকে পানি আসছে তা লবণাক্ত। দ্বীপের পানি এর আগে লবণাক্ত ছিল না। এটিই প্রথম। এখন নতুন করে নলকূপ স্থাপন করা জরুরি। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে নতুন করে নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ২০০ পরিবারের জন্য ৪০০ বান্ডিল টিনসহ নানা উপকরণ ট্রলারযোগে পাঠানো হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সবার কাছে পাঠানো হবে। পানি সংকট নিরসনে স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেন্টমার্টিনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, দ্বীপে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। মোখার আঘাতে ব্যাপক গাছ ভেঙে যাওয়ায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। বিদ্যুৎ চালু হলে মোটরের মাধ্যমে উত্তোলন করলে পানির সমস্যা কিছুটা দূর হবে। এখন অন্তত পাঁচটি নলকূপ স্থাপন জরুরি। তিনি জানান, দ্বীপে এখনো ১ হাজার পরিবার খোলা আকাশের নিচে।

এদিকে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া ছাড়া অন্যান্য এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। এ দ্বীপের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা জাসিম মাহমুদ জানান, নলকূপের পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। অনেক দূর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ঘর তৈরির জন্য সহায়তা পৌঁছেনি। জালিয়াপাড়ার একটি এলাকায় ৩০০ পরিবারসহ দ্বীপের ১ হাজার পরিবার এখনো খোলা আকাশের নিচে। সাবরাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর হোছাইন জানিয়েছেন, শাহপরীর দ্বীপের পানি সমস্যা জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা প্রয়োজন। এর জন্য বেশ কিছু নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে ঘর তৈরিতে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী প্রকৌশলী আবুল মঞ্জুর জানান, সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপে অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। মোখার জোয়ারে লবণাক্ত পানি ওই স্তরের সঙ্গে মিশে গেছে। বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে তা এখনো লবণাক্ত আছে। গতকাল সকাল থেকে যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে, কয়েক দিন থাকলে পানি আবারও আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। যেসব নলকূপ থেকে পানি আসছে না তা থেকেও পানি মিলবে। এসব এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের পরামর্শ দেন তিনি। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তালিকা হলেও চূড়ান্ত তালিকা এখনো হয়নি। তা হাতে পেতে আরও কয়েক দিন লাগবে। তালিকা পেলে বলা যাবে কোথায়, কী ধরনের সহায়তা পৌঁছানো দরকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর