মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

পচা-গলা লাশ উদ্ধারের পর অপমৃত্যুর মামলা

তদন্তে মিলল হত্যার রহস্য, ব্যাগের সূত্র ধরে হত্যাকারী শনাক্ত

মাহবুব মমতাজী

সবজি বিক্রি করার জন্য বাড়ি থেকে ভ্যান নিয়ে বের হয়েছিলেন মেছের আলী। রাতে সবজি বিক্রি করে বাসায় ফেরেন। রাত ১১টায় মেছের আলী তার নাতি নাইমকে বলেন যে তিনি বাসার বাইরে যাচ্ছেন। রাতে বাসায় ফিরবেন না বলেও জানান। নাতিকে বাসায় তালা লাগিয়ে ঘুমিয়ে যেতে বলেন। এরপর মেছের আলী আর বাসায় ফেরেননি। এ ঘটনা ২০ মে’র। দুই বছর আগেও কয়েকবার তিনি এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আর বাসায় ফেরেননি। তাই স্বজনদের কাছে ঘটনাটি স্বাভাবিক বলেই মনে হয়েছিল। ২৩ মে রাজধানীর খিলক্ষেতে আশিয়ান হাউজিং প্রজেক্টের বালুর চরে মেছের আলীর পচা-গলা লাশ শনাক্ত করেন স্বজনরা। লাশে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তাই এটিকে দুর্ঘটনায় মৃত্যু ভেবে খিলক্ষেত থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন মেছের আলীর ছেলে আল আমিন। অপমৃত্যু মামলাটির তদন্তের সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ক্যান্টনমেন্ট জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলামসহ তদন্তসংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, পরিদর্শনের সময় ঘটনাস্থলে একটি ব্যাগ পাওয়া যায়। সেই ব্যাগের ভিতর থেকে কাস্তে, কম্বলসহ কিছু নতুন-পুরান কাপড় এবং মিনা নামে একজনের জন্মনিবন্ধন ও টিকা কার্ড পাওয়া যায়। ওই ব্যাগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলের আশপাশের সব সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ করে বিশ্লেষণ করা হয়। ব্যাগের ভিতর থেকে পাওয়া জন্মসনদের পরিপ্রেক্ষিতে মিনা ও তার স্বামী শাহাবুদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়। মিনা ও শাহাবুদ্দিন জানান, ঈদুল ফিতরের কয়েক দিন আগে শাহাবুদ্দিন তাদের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় যাচ্ছিলেন। যখন তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসেন, তখন এক বয়স্ক লোক তাকে বলেন, ‘ভাতিজা, আমিও নেত্রকোনায় যাব। চলো আমরা একসঙ্গেই যাই। আমরা যদি এখানে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করি তাহলে আমাদের অনেক সময় লেগে যাবে।’ বয়স্ক লোকটি একটি বিকল্প রাস্তার কথা বলেন। তা হলো, কারওয়ান বাজার থেকে বাসে করে যাওয়া। শাহাবুদ্দিন কমলাপুর থেকে সরল বিশ্বাসে রমজান নামে বয়স্ক লোকটির সঙ্গে কারওয়ান বাজারে যান। সেখানে দুজনে চা পান করেন। রমজান চা পানের পর শাহাবুদ্দিনকে বলেন, ‘তোমার ব্যাগটি তুমি আমার কাছে দিয়ে দাও। এটা মানুষজন নিয়ে নিতে পারে তোমার কাছ থেকে।’ এ ছাড়া তার কাছে কোনো টাকা থাকলে তাও রমজান আলীর কাছে দিয়ে দিতে বলেন। এই কথা বলে শাহাবুদ্দিনের কাছে থাকা ৪০০ টাকা এবং তার ব্যাগটি রমজান আলী তার নিজের কাছে রাখেন। তখন শাহাবুদ্দিন রমজান আলীর মোবাইল ফোন থেকে স্ত্রী মিনাকে কল দিয়ে জানান, তিনি এই চাচার সঙ্গে তার গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন, এই চাচাও একই এলাকায় যাবেন। শাহাবুদ্দিনের চোখে একটু ঘুম এলে তার ব্যাগ ও টাকা নিয়ে পালিয়ে যান রমজান। পরে তিনি সাধারণদের সাহায্য নিয়ে ট্রেনে গ্রামের বাড়ি পৌঁছান এবং স্ত্রী মিনাকে ফোন করে জানান, তিনি ঠিকমতো গ্রামের বাড়ি পৌঁছেছেন। রমজান আলী তার ব্যাগ ও টাকা নিয়ে চলে গেছেন- এ কথাও জানান। মিনা তখন তাকে বিকাশের মাধ্যমে ৫০০ টাকা পাঠান। তদন্ত কর্মকর্তা জানান, লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে পাওয়া ব্যাগটি শাহাবুদ্দিনকে দেখানো হলে তিনি ব্যাগটি শনাক্ত করেন। পরে তথ্যপ্রযুক্তি এবং সিসিটিভি পর্যালোচনা করে বোঝা যায় রমজান আলী খুনের ঘটনায় সম্পৃক্ত। রমজান আলীকে রবিবার রাত সাড়ে ১২টায় গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এডিসি ইফতেখায়রুল ইসলাম জানান, মেছের আলীকে নিয়ে খিলক্ষেতের রেলগেটের সামনে চা পান করেন রমজান। চা পান করার সময় রমজান আলী চায়ের মধ্যে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে দেন। মেছের আলীর কাছে থাকা ৪ হাজার টাকা নেওয়াই রমজান আলীর মূল উদ্দেশ্য ছিল। চা পান করার পর দুজন বালুর চরে উপস্থিত হওয়ার কিছুক্ষণ পরই মেছের আলী অজ্ঞান হয়ে যান। এরপর তাকে একটু দূরে বড় বড় ঘাসের মাঝখানে রেখে পালিয়ে যান রমজান। পালানোর সময় ভুল করে শনাক্ত হওয়া ব্যাগটি ঘটনাস্থলে রেখে চলে যান।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর