বুধবার, ৭ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাতের আঁধারে কেন গেল রোমানিয়ার ভিসার মিশন

তদন্ত দাবি সংশ্লিষ্ট জনশক্তি রপ্তানিকারকদের

জুলকার নাইন

রোমানিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠাতে ভিসা দেওয়ার কনস্যুলার মিশনের রাতের আঁধারে চলে যাওয়ার কারণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুধুই বাংলাদেশি কর্মীদের রোমানিয়া ছেড়ে ইউরোপের অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়া নাকি অন্য কোনো কারণ আছে তা নিয়ে সন্দেহের ডালপালা ছড়িয়ে গেছে নানান দিকে। আসল কারণ অনুসন্ধানের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে মিশনের চলে যাওয়া নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন সংশ্লিষ্ট জনশক্তি রপ্তানিকারকরা। তাদের দাবি, মিশন চলে যাওয়ার পেছনে সরকারি কোনো কোনো কর্মকর্তার ভূমিকার দায় রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে তদন্ত করলেই প্রকৃত সত্য উঠে আসবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

জানা যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ঢাকায় রোমানিয়ার ভিসা ইস্যুর সুযোগ তৈরি হয়েছিল। গত বছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সফরের পর রোমানিয়া ঢাকায় কনস্যুলার সার্ভিসের জন্য প্রতিনিধি পাঠায়। গত বছর তিন মাস অবস্থান করে সাড়ে ৫ হাজার ভিসা ইস্যু করে রোমানিয়ার কনস্যুলার দল। এ বছরও এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় মাস অবস্থান করে ইস্যু করার কথা ছিল ১৫ হাজার ভিসা। সে হিসাবে তাদের সব ব্যবস্থাও করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রবাসী ভবনে সরকারের দেওয়া জায়গায় শুরুও হয়েছিল কনস্যুলার ক্যাম্প। ইস্যু করা শুরু হয় ভিসা। কিন্তু কয়েক দিনের মাথায় হঠাৎ করেই ক্যাম্প গুটিয়ে চলে যায় রোমানিয়ার প্রতিনিধিরা। পরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশিরা রোমানিয়ায় কাজের জন্য গিয়ে পালিয়ে ইতালিসহ ইউরোপের অন্য দেশে চলে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ রোমানিয়া। রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, শুধু বাংলাদেশিদের পালিয়ে রোমানিয়া ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার বাইরেও কনস্যুলার মিশন চলে যাওয়ার কারণ থাকতে পারে। কারনণ এবার মিশন শুরুর পরপরই ভিসার সাক্ষাৎকার ও ইস্যুর জন্য কাছে তদবির ও কনস্যুলার কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টির অভিযোগ আছে একটি পক্ষের বিরুদ্ধে। এমনকি ভিসাপ্রতি ১ হাজার ডলার আদায় করতে গড়ে উঠেছিল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি বিশেষ গং। এই গংয়ের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ আছে বিএমইটির এক শাখা প্রধানের বিরুদ্ধে। তাদের মাধ্যমে ভিসার জন্য সাক্ষাৎকার দেওয়াদের বড় একটি অংশের ভিসা রিফিউজ হলে হুমকি ধমকি দেওয়া হয়েছে রোমানিয়ার প্রতিনিধিদের। ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বিদেশি এসব প্রতিনিধিদের জন্য। তাদের ওপর হামলা হতে পারে, এমন খবরও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এসব বিষয় তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন। তদন্ত করলেই আসল সত্য বেরিয়ে আসবে বলে মন্তব্য রপ্তানিকারকদের। রোমানিয়ান অভিবাসন বিভাগের তথ্যানুযায়ী, সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৫ লাখ কর্মী নেওয়ার পরিকল্পনা করে। গত বছর রোমানিয়ার সরকার ১ লাখ ২০ হাজার কর্মী নিয়েছে। চলতি বছর ও আগামী বছর ইউরোপের এই দেশ আরও ৪ থেকে ৫ লাখ কর্মীকে অভিবাসন সুবিধা দেবে। রপ্তানিকারকদের মতে, ঢাকার পরিবর্তে আগের মতো দিল্লি থেকেই ভিসা ইস্যু হলে বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজার হাতছাড়া হয়ে যাবে। কারণ রোমানিয়ার আইন অনুযায়ী, যে কেউ চাইলেই কর্মী আমদানি করতে পারে না। জনশক্তি আমদানির জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কাজ করে। একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির চুক্তি হলেই তারা কর্মী নিয়োগে কাজ শুরু করতে পারে। তখন এজেন্সিগুলো আগ্রহী কর্মী খুঁজে বের করে এবং কাজের অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারে অভিবাসন বিভাগে। কিন্তু অভিবাসন বিভাগ থেকে কাজের অনুমতি প্রস্তুত হয়ে আসতে প্রায় তিন মাস বা তারও বেশি সময় লেগে যায়। এরপর ভারতে গিয়ে ভিসা নিতে আরও তিন থেকে চার মাস সময় লেগে যায়। সব মিলিয়ে লেগে যায় সাত মাস। যেসব কৃষি খামারের মালিক লোক নিয়োগে আগ্রহী তারা সাত মাস পরে কর্মী উপস্থিত হলে তাদের কাজ দিতে পারেন না। কারণ তখন মৌসুম শেষ হয়ে যায়। শীতে রোমানিয়াতে কোনো চাষাবাদ হয় না। এতে কর্মী নিয়োগে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে অথবা অধৈর্য হয়ে ওঠে।

সর্বশেষ খবর