মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভারতজুড়ে বাড়ছে বিজেপির আধিপত্য কমছে কংগ্রেসের

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

২০১৪ সালে ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত প্রায় এক দশক ধরে দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে মোদি ম্যাজিক, সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে বিজেপির আধিপত্য। নয় বছর আগে মোদি সরকার যখন দিল্লিতে ক্ষমতায় আসে, তখন কেবলমাত্র রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ছত্রিশগড় মিলে হাতেগোনা কয়েকটি রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে তত বিভিন্ন রাজ্যে প্রভাব বিস্তার করেছে পদ্মফুল শিবির। সেই সঙ্গে দেশটির জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রীদের তালিকায় নিজের স্থান পাকা করেছেন নরেন্দ্র মোদি। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতের ভূখণ্ডের ৫৮ শতাংশ বিজেপির দখলে, ৪১ শতাংশ ভারত ভূখণ্ড কংগ্রেসের দখলে। গত রবিবারই ভারতের চার রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল সামনে এসেছে। এর মধ্যে বিজেপি তিনটি রাজ্যে ক্ষমতা দখল করেছে, কংগ্রেস একটিতে। এই জয়ের ফলে ভারতের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে ১২টি রাজ্যে এককভাবে ক্ষমতায় রয়েছে দেশটির সর্ববৃহৎ জাতীয় রাজনৈতিক দল বিজেপি। এগুলো হলো- মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্রিশগড়, উত্তরা , হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, গুজরাট, গোয়া, আসাম, ত্রিপুরা, মণিপুর এবং অরুণাচল প্রদেশ। এ ছাড়া মহারাষ্ট্র, নাগাল্যান্ড, সিকিম ও মেঘালয়- এই চার রাজ্যে জোট সরকারের ক্ষমতায় রয়েছে গেরুয়া শিবির। মোদির নয় বছরের শাসনকালে সবচেয়ে বড় অর্জন উত্তর-পূর্ব ভারতে তাদের উপস্থিতি। কারণ ২০১৪ সালে সেখানে কোনো রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল না তারা। আর ২০২৩ সালের শেষে এসে একাধিক রাজ্যে এককভাবে সরকারে রয়েছে, কিছু রাজ্যে তারা জোট সরকারে রয়েছে। অন্যদিকে মাত্র তিনটি রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতীয় দল কংগ্রেস। এগুলো হলো তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক ও হিমাচল প্রদেশ। এ ছাড়া জোট সরকারে রয়েছে বিহার, ঝাড়খণ্ড রাজ্যে। তবে তাদের জোটশরিক দল ‘দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাজাকাম’ (ডিএমকে) তামিলনাড়ুতে ক্ষমতায় থাকলেও কংগ্রেস ওই সরকারে অংশ নেয়নি। দেশটিতে তৃতীয় বৃহত্তম জাতীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে রয়েছে আম আদমি পার্টি (আপ), তারা ক্ষমতায় রয়েছে দিল্লি এবং পাঞ্জাব রাজ্যে। আর রবিবারের এই ফলাফলে কংগ্রেসের খর্ব কমায় জাতীয় রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আপের ভিত আরও মজবুদ হয়েছে। দলের নেতা জেসমিন শাহ টুইট করে লিখেছেন, ‘এদিনের নির্বাচনী ফলাফলের পর আম আদমি পার্টি উত্তর ভারতে বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।’ বর্তমানে দেশটিতে ছয়টি জাতীয় রাজনৈতিক দল রয়েছে, এগুলো হলো- বিজেপি, কংগ্রেস, বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি), সিপিআইএম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) এবং আপ। আগামী বছর ২০২৪ সালে বিভিন্ন সময়ে একাধিক রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে রয়েছে সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ, ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ। পাশাপাশি রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পেলে নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে জম্মু-কাশ্মীরেও। যদিও তার আগে আগামী বছরের গোড়ার দিকে (এপ্রিল-মে) লোকসভা ভোট হতে চলেছে। স্বাভাবিকভাবেই আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে যথেষ্ট সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিজেপি। পরিসংখ্যান বলছে রবিবার তিনটে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর লোকসভার নিরিখে দেশটির ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে প্রায় অর্ধেক আসনেই এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। তাছাড়া ভারতীয় রাজনীতিতে প্রচলিত কথা অনুযায়ী ‘গো বলয় যার, ভারত তার’। তার ওপর আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় ‘রাম মন্দির’-এর উদ্বোধন হতে চলেছে। রাম মন্দির উদ্বোধনের পর থেকে প্রায় দেড় মাস ধরে ভারতজুড়েই একাধিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিজেপিসহ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। এর উদ্দেশ্য একটাই, ভোটের আগে দেশজুড়ে হিন্দুত্ব ভাবাবেগকে উসকে দেওয়া- অন্তত এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

সর্বশেষ খবর