বিভিন্ন সময় যারা পদোন্নতি পায়নি এমন বঞ্চিত কর্মকর্তারা পদোন্নতির আশায় আবেদন করছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। কেউ মানবিক কারণে পুনর্বিবেচনা চাচ্ছেন, কেউ নিজেদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য কর্মকর্তার উল্লেখ করে বিভিন্ন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর আধা-সরকারিপত্র (ডিও) জমা দিচ্ছেন আবেদনের সঙ্গে। যদিও আবেদন করে পদোন্নতি পাওয়া যায় কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় ওইসব কর্মকর্তা। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিও দিয়ে আবেদন জানানো সরকারি চাকরির আচরণ বিধিমালার পরিপন্থি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব তদবিরের কারণে প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি অনেকগুলো আবেদন জমা হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। যা সিনিয়র সচিব বা মন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। বেশির ভাগই পদোন্নতি না পেয়ে পুনর্বিবেচনা চেয়েছেন। সম্প্রতি ঈদের আগে ও পরে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য অসংখ্য ডিও জমা হয় জনপ্রশাসনে। এ ছাড়াও যারা বিভিন্ন ব্যাচে উপসচিব পদোন্নতি পায়নি তারাও পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছেন। সূত্র জানায়, সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন পদোন্নতি ও পোস্টিং দিতে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় সংসদ সদস্যদের ডিও লেটার (আধাসরকারিপত্র) দেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের আধাসরকারিপত্র চালাচালি সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত। এতে প্রশাসনের ওপর এক ধরনের ‘চাপ’ সৃষ্টি হয়। উপরন্তু নিরপেক্ষতা বাধাগ্রস্ত হয় ও যোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। জানা গেছে, প্রশাসনে বিভিন্ন স্তরে পদোন্নতির জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) সুপারিশ করে থাকে। পদোন্নতি বিধিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে এ সুপারিশ করা হয়। এরপর প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
গত নভেম্বরে ২৪০ কর্মকর্তাকে উপসচিব পদোন্নতি দেওয়া হয়। যারা পদোন্নতি পাননি এমন কর্মকর্তাসহ অন্যান্য সময়ে বঞ্চিতরাও আবেদন করছেন এখনো। ১৭ ব্যাচের কর্মকর্তা মো. ফিরোজ সরকারকে উপসচিব পদোন্নতির জন্য গত ১৮ এপ্রিল সিনিয়র সচিবকে ডিও দিয়েছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। দক্ষ, অভিজ্ঞ, পেশাদার উল্লেখ করে পদোন্নতির সুপারিশ করেছেন চিঠিতে। ১৭ ব্যাচের অনেক কর্মকর্তা বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব হলেও মো. ফিরোজ সরকার এখনো উপসচিবই হতে পারেননি।
এ ধরনের ডিও কাজে লাগে কি না জানতে চাইলে ফিরোজ সরকার বলেন, এটা আমি জানি না। যেহেতেু বঞ্চিত তাই ডিও দিয়ে আবেদন করেছি। একটা গুরুত্ব হয়তো থাকে কেননা অন্যরাও জমা দেয়।
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে কর্মরত ২৯ ব্যাচের কর্মকর্তা পল্লব কুমার হাজরা পদোন্নতি না পেয়ে আবেদন করেছেন পুনর্বিবেচনার জন্য। তবে কোনো ডিও দেননি তিনি। আবেদনে কর্মজীবনের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করেছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরকম পরিস্থিতিতে কখনো পরিনি তাই আমি জানি না আমার আবেদন বিবেচনা করা হবে কি না। এটা স্যারদের বিবেচ্য বিষয়। ২৯ ব্যাচের আরও কয়েকজন মানবিক বিবেচনায় আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিবের কাছে বিভিন্ন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর এক ডজনের বেশি ডিও রয়েছে। ডিও চাপে জনপ্রশাসনের অনেক কর্মকর্তারা কিছুটা বিরক্ত। পদোন্নতির জন্য যোগ্যতা, মেধা, জ্যেষ্ঠতা, সততা, কর্মদক্ষতাই মাপকাঠি। এসব ডিও প্রতিদিনই আসে, জমা হয়ে থাকে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একজন কেন পদোন্নতি পেল না, অযোগ্যতা কী সেটি জানানো হয় না। সিস্টেমটা স্বচ্ছ না। তাই কেউ চাইলে সরকারের কাছে ব্যক্তিগত আবেদন করতে পারেন। তবে যারা ডিও লেটার সংগ্রহ করে জমা দেন এটা সরকারি চাকরি বিধিমালার পরিপন্থি। বর্তমানে এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে, এই ডিও ছাড়া কোনো কাজ হয় না। তাই সিস্টেম না বদলালে এটা চলতেই থাকবে। পদোন্নতি ও পদায়নের জন্য যারা ‘ডিও’ দেন তারা অবশ্যই জানেন এটা দেওয়া বেআইনি, শপথের বিরোধী। ডিওতে কাজ হয় কি না জানতে চাইলে সাবেক এই সচিব বলেন, হয়তো কিছুটা হয় নয়তো লোকজন এর পেছনে কেন দৌড়ায়? এসএসবি বোর্ডকে বিশ্বাস করে না বলেই তো ডিওর জন্য ছুটে।