বিতর্ক জমে উঠেছে ব্রিটেনের নির্বাচন ঘিরে। বিবিসিতে প্রথম লাইভ টিভি বিতর্কে অংশ নেন প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতা। ৪ জুন সন্ধ্যায় কনজারভেটিভের দলনেতা ঋষি সুনাক ও লেবার লিডার কিয়ার স্টারমারের মধ্যে বিতর্ক হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শেষ হয়েছে। বিতর্ক নিয়ে করা দুটি জরিপের ফল প্রকাশ পেয়েছে।
ইউগোভ পুল বলছে, ৫১ শতাংশ কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ঋষি সুনাকের পক্ষে গেছে আর ৪৯ শতাংশ গেছে স্যার কিয়ার স্টারমারের পক্ষে। অন্যদিকে আইটিভি পরিচালিত সাভান্থা জরিপ বলছে, স্যার কিয়ার স্টারমার এগিয়ে ছিলেন ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আর ঋষি সুনাক পেয়েছেন ৩৯ শতাংশ সমর্থন। এ বিতর্কে মূলত ট্যাক্স নিয়ে তর্ক হয়েছে। ঋষি সুনাক দাবি করেছেন, স্যার কিয়ার স্টারমারের ট্যাক্স পরিকল্পনা প্রতি কর্মীর বছরে ২ হাজার পাউন্ড ট্যাক্স বাড়াবেন। এদিকে কিয়ার স্টারমার ঋষি সুনাকের এ বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছেন। অন্যদিকে স্যার কিয়ার স্টারমার ঋষি সুনাকের এনএইচএস ওয়েটিং টাইম ও একই সঙ্গে ন্যাশনাল সার্ভিস পরিকল্পনার সমালোচনা করেন। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরপরই প্রচারে নেমে পড়েন তিনি। অন্যদিকে লেবার পার্টি নেতা কিয়ার স্টারমারও থেমে নেই। দুই নেতাই ভোটারদের নিজের দলে ভোট দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন।
কিন্তু আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে খানিকটা বিপদেই রয়েছেন ঋষি সুনাক। কারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর তাঁর দল কনজারভেটিভ পার্টির ৭৮ জন সংসদ সদস্য জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তাঁরা চাইছেন নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হোক। এ নিয়ে তাঁদের নিজেদের মধ্যেই এক ধরনের কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে। গত আট বছরে ঋষি সুনাকের দলের ভিতর কোন্দল শেষই হচ্ছে না। যেটা এ মুহূর্তে লেবার পার্টির জন্য একটি বড় সুযোগ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রধানমন্ত্রী সুনাক এমন একটা সময়ে নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন যখন কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা বলতে গেলে তলানিতে এসে ঠেকেছে। অন্যদিকে লেবার পার্টি মনে করে, ব্রিটেনে এখন নির্বাচনের প্রয়োজন ছিল। আর ৬১ বছর বয়সি বাম নেতা স্টারমার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য যোগ্য নেতা।
চার বছর ধরে স্টারমার বিরোধী নেতা হিসেবে আছেন। ভোটারদের কাছে একটাই বার্তা-লেবার সরকার দেশের পরিবর্তন আনবে। দেশের এ বেহাল পরিস্থিতিতে শুধু তারাই দেশটিকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্বস্তি থেকে বের করে আনতে পারবে। যুক্তরাজ্যের জনমত জরিপ বলছে, কনজারভেটিভ পার্টি বিরোধী লেবার পার্টির চেয়ে প্রায় ২০ পয়েন্টে পিছিয়ে আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে তাদের প্রয়োজন ৩২৬ আসন। আবার গার্ডিয়ানে প্রকাশিত জরিপ বলছে, লেবার পার্টি অন্তত ৪৭২টি আসন পাবে। ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ পার্টির পাওয়ার কথা ৮৫টির মতো আসন। লিবারেল ডেমোক্র্যাট ও স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি যথাক্রমে ৫০ ও ১৯টির মতো আসন পেতে পারে। বাকি ছোট দলগুলো মিলে পেতে পারে ২৪টির মতো আসন। যেখানে ২০১৯ সালের নির্বাচনে লেবার পেয়েছিল ২০২টি আসন ও কনজারভেটিভ পার্টি ৩৬৫টি। লিবারেল ডেমোক্র্যাট ও স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি যথাক্রমে ১১ ও ৪৮টি আসন পায়। অন্য ছোট দলগুলো পেয়েছিল ২৩টির মতো আসন। যুক্তরাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে সাধারণ নির্বাচন কার্যক্রম শেষ করতে হবে। যুক্তরাজ্যের বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত ছয় মাস আগে আগাম জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। নানা জল্পনাকল্পনার পর গতকাল বিকালে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট থেকে ৪ জুলাই জাতীয় নির্বাচনের এ ঘোষণা দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী কে হবেন-তা নিয়ে এখনই বলা না গেলেও, দলগুলোর জনপ্রিয়তা, ঐক্য, কোন্দল সবকিছু পর্যবেক্ষণ করলে একটা প্রশ্ন থেকেই যায় যে, সুনাক কি পারবেন আবারও প্রধানমন্ত্রী হতে? নাকি নির্বাচনের দৌড়ে এবার স্টারমারই আসন পাবেন?