বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ও প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেছেন, ধর্ষণ, পারিবারিক সহিংসতা এবং বাল্যবিয়ে বন্ধ না করলে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা যাবে না। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে এসেছে। এই সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেমন অবস্থান নেবে, একই সঙ্গে সরকারের সংস্কৃতি হবে কোথায়ও যেন কোনো বৈষম্য না থাকে। আমরা যুুগ যুগ ধরে সমাজে বৈষম্য দেখে আসছি। যেহেতু এ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বৈষম্যবিরোধী, সেখানে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও অনুরোপ চিন্তাভাবনা করবে এ জায়গাগুলোতে নারী-পুরুষের মধ্যে যে বৈষম্য আছে তা দূর করতেও তারা দৃষ্টি দেবে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সম্পত্তি এবং বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে আইনগতভাবে অনেক অধিকার সুরক্ষিত নেই। এই জায়গাগুলোতে নতুন সরকার হাত দিতে পারবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। কারণ এই আইন সংসদে পাস করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার এগুলোর উদ্যোগ নিতে পারে। তারা উদ্যোগ নিলে ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে তারা পাস করে দেবে। যেহেতু প্রসেফর ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক কর্মকান্ডে র মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়েছেন, সে জায়গা থেকে আমার আশা, তিনি নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবেন।এলিনা খান আরও বলেন, দেশে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি বেশ কঠিন হবে। বাল্যবিয়ে আমরা বন্ধ করতে পারছি না। আমরা ধর্ষণের মতো অপরাধ বন্ধ করতে পারছি না। আমরা পারছি না পারিবারিক সহিংসতাও বন্ধ করতে। এই বিষয়গুলো বন্ধ করতে হলে যে এনজিওগুলো এ-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করছে তাদের নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করা যেতে পারে। সেখান থেকে একটি সিদ্ধান্তে এসে সেটি বাস্তবায়নের ওপর জোর দিলেই নারীর ওপর এ ধরনের নির্যাতন বন্ধ হবে। না হলে সরকার বদল হলেই যে নারীর ওপর নির্যাতন এবং বাল্যবিয়ে বন্ধ হয়ে যাবে এমনটি মনে করার কারণ নেই। যতক্ষণ না সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মেয়েদের দেওয়া না হবে, ততক্ষণ এসবের পরিবর্তন হবে না। তিনি বলেন, গ্রামের মেয়েরা এখনো নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে অবস্থান করছে।
তিনি বলেন, বন্যায় এবার কী গরিব কী ধনী সবাই আশ্রয় কেন্দ্রে চলে এসেছে। নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। নারীদের এ পরিস্থিতিতে শুকনো কাপড়ের দরকার। আবার শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য কাপড় লাগে। এই বন্যায় অনেক কন্যাশিশু অভিভাবক হারিয়েছে। যেসব কমবয়সী মেয়ে অভিভাবক হারিয়েছে তারা কোথায় যাবে? এই জায়গাগুলো থেকে শুরু হয় পাচার। শুরু হয় প্রলোভন দেখানো। এসব মেয়েকে তখন শহরে ভালো রাখার টোপ দিয়ে এনে পাচার করা হয়। আর মেয়েগুলো পেটের তাগিদে এই ফাঁদে পা দেয়। সুতরাং এই জায়গাগুলোতে এখনই আমাদের কাজ করা দরকার।