গাজীপুর ও আশুলিয়ায় বিভিন্ন দাবিতে পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করলে ৮-৯ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রচ- গরমে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও সাধারণ মানুষসহ পরিবহন শ্রমিকরা। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, জয়দেবপুর থানা পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তারা শ্রমিকদের বুঝিয়ে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হন। শ্রমিকরা মহাসড়ক থেকে সরে গেলে সড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ছাড়া কালিয়াকৈরে কারখানার কর্মকর্তাদের মারধর করায় ১৮ শ্রমিককে আটক করা হয়।
গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকার পলমল গ্রুপের মন্ডল ইন্টিমিটস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরে হাজিরা বোনাস বাড়িয়ে ন্যূনতম ১ হাজার টাকা ও রাত্রিকালীন ভাতা ১০০ টাকা বৃদ্ধি, মোবাইল নিয়ে কারখানায় প্রবেশের অনুমতি, অর্ধ বেলা ছুটি অথবা দুই ঘণ্টা গেট পাস নিলে হাজিরা বোনাস কেটে না নেওয়া এবং অসুস্থ হলে কারখানার মেডিকেল সেন্টারে বিশ্রামে না রেখে ছুটি দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছিল কর্তৃপক্ষের কাছে। গতকাল সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে কাজে যোগ না দিয়ে ওই দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে ওই মহাসড়কের উভয় দিকে যানবাহন আটকে পড়ে প্রায় ৮/৯ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক (বাঘেরবাজার জোন) সুমন মিয়া জানান, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শ্রমিকরা ৯ দফা দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ শুরু করে। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একটি বাদে (মোবাইল নিয়ে কারখানায় প্রবেশের অনুমতি প্রদান) অন্য ৮টি দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মহাসড়ক থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দিলে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন জানান, গতকাল সকাল ৮টা থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের খাইলকুর এলাকার এম এম ফ্যাশন অ্যান্ড কম্পোজিট লিমিটিডের তিন শতাধিক শ্রমিক কারখানায় এসে ০কাজে যোগ দেয়। আধা ঘণ্টা পর থেকে তারা আগস্ট মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে উৎপাদন কাজ বন্ধ করে কারখানার অভ্যন্তরে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ পালন করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের আলোচনার উদ্যোগ নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।
এদিকে কালিয়াকৈরের মৌচাকের দোকানপার এলাকায় কোকোলা ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। মহাসড়ক অবরোধের ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। অন্যদিকে উপজেলার হরতকিতলা এলাকার ইকোনিক্স কারখানার শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধিসহ কয়েক দফা দাবিতে কারখানায় এসে ফের আন্দোলন করে এবং কর্মকর্তাদের মারধর করে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের শান্ত করলেও কিছু শ্রমিক তা না মেনে আন্দোলন করে। এ ঘটনায় ১৮ শ্রমিককে আটক করা হয়।
এদিকে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ঢাকার আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষ চলার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তবে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বেশ কিছু তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের জিরাবো এলাকা পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে অবস্থিত বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা সকাল থেকে কাজ বন্ধ রেখে কারখানার অভ্যন্তরে বিক্ষোভ করে। কারখানার অভ্যন্তরে জড়ো হয়ে ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে ‘২৫’ ‘২৫’ সেøাগান দেন। শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিক অসন্তোষ শেষে গত সপ্তাহ এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন গতকাল পর্যন্ত শিল্পাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও নিট এশিয়া, ডেকো, এনভয়, ভিনটেজ, নাসা, সেতারাসহ বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে বিক্ষোভ করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কয়েকটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী তাদের বুঝিয়ে ফিরিয়ে দেয়।