৫ আগস্টের পর দেশ ছেড়েছেন সিলেটের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েক শ নেতা-কর্মী। তাদের প্রথম আশ্রয় ছিল ভারত। সীমান্ত পেরিয়ে খুব সহজেই চলে যান প্রতিবেশী দেশটিতে। সেখান থেকে অনেকে চলে যান ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। এরই মধ্যে যারা আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চলে গেছেন তাদের অনেকেই সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করছেন। আবার কেউ কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছেন দেশে ফিরে আত্মসমর্পণের। দেশে অবস্থানরত অনেক নেতা-কর্মী আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আত্মসমর্পণ শুরুও করেছেন।
নির্ভরযোগ্যসূত্র জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। ওইদিনই সিলেট আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও পালানো শুরু করেন। কয়েক শ নেতা-কর্মী আশ্রয় নেন ভারতে। প্রথমে তারা ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে অবস্থান করেন। পরে সেখান থেকে অনেকে যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, কানাডা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চলে যান। যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানো নেতাদের অনেক ব্রিটিশ নাগরিক হওয়ায় সে দেশে গিয়ে তারা পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন। আর ভিজিট ভিসাধারীরা দীর্ঘ সময় অবস্থানের জন্য সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইছেন। যুক্তরাজ্যে যারা রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিত সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা সোয়েব আহমদ। এ ছাড়া দেশে ফেরার উপযোগী পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে আরও অন্তত দুই ডজন নেতা রাজনৈতিক আশ্রয় (অ্যাসাইলাম) চেয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করবেন বলে জানা গেছে।
ফ্রান্সে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা বিলাল খান। একইভাবে বর্তমানে আমেরিকা ও কানাডায় অবস্থানরত কয়েকজন নেতা একই পরিকল্পনায় রয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানরত কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, তারাও ভিজিট ভিসার ক্যাটাগরি পরিবর্তন করে সেখানে দীর্ঘমেয়াদে থাকার চেষ্টা করছেন।
এদিকে, যারা ‘স্টে পারমিশন’ নিয়ে ভারতে অবস্থান করছেন তারা দেশে ফেরার চিন্তায় রয়েছেন। ভারতে অবস্থানরত নেতা-কর্মীর বেশির ভাগেরই ভিন্ন কোনো দেশের ভিসা নেই। এ ছাড়া ভারতেও দীর্ঘমেয়াদে অবস্থান করা সম্ভব না হওয়ায় তারা দেশে ফিরে আত্মসমর্পণের চিন্তায় আছেন। তবে মামলার চার্জশিট না হওয়া, জামিন না পাওয়ার শঙ্কা ও আদালতপাড়ায় হামলার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় তারা এখনই আত্মসমর্পণ করা থেকে বিরত রয়েছেন। তাদের ধারণা, দু-তিন মাসের মধ্যে অবস্থার পরিবর্তন হবে। তখন আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আত্মসমর্পণ করবেন।
তবে দেশের মধ্যে যেসব নেতা-কর্মী অবস্থান করছেন তারা এরই মধ্যে আত্মসমর্পণ শুরু করেছেন। রবিবার সিলেটে ছাত্রলীগের ২২ ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়রসহ আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা আত্মসমর্পণ করেন। তাদের মধ্যে সিলেটে ছাত্রলীগের ১৬ নেতা জামিন পেয়েছেন। এ ছাড়া সিলেট বিভাগের চার জেলায় আরও বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আত্মসমর্পণ করেছেন বলে জানা গেছে।