আজ ২৫ বৈশাখ। জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত নওগাঁর পতিসর কাচারিবাড়ি আবার সেজে উঠছে। এবার উদ্যাপিত হবে রবিঠাকুরের ১৬৫তম জন্মদিন। সাজের ঘটাও চলছে তাই। আবার প্রকৃতিগতভাবেও সেজে উঠেছে কাচারিবাড়ি। বাড়ির প্রাঙ্গণ কৃষ্ণচূড়ার লাল ও সোনালু ফুলের হলদে রঙের ছটায় যেন রূপের মেলা বসিয়েছে। কবির স্মৃতিবিজড়িত নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মনিয়ারী ইউনিয়নের কালীগ্রাম পরগনার পতিসরে অবস্থিত এ কাচারিবাড়ি। এটি এখন পতিসর রবীন্দ্রস্মৃতি জাদুঘর। জাদুঘরের সহকারী কাস্টোডিয়ান ইশতিয়াক আহমেদ জানান, কবির জন্মদিন উপলক্ষে পতিসরে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। দেবেন্দ্র মঞ্চ রং করা, প্যান্ডেল স্থাপন, তোরণসহ অন্যান্য কাজ শেষের পথে। চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। বিশ্বকবি পতিসর কাচারিবাড়িতে সর্বশেষ আসেন ১৯৩৭ সালে। কাচারিবাড়ির সামনে সিংহদুয়ার। ওই দুয়ারের সামনে বিশাল প্রাঙ্গণ। সিংহদুয়ার পেরোলেই কুটি অভ্যন্তর, সামনে প্রশস্ত আঙিনা। আঙিনার তিন দিকে উঠে গেছে সিঁড়ি। সিঁড়ি পেরোলেই বারান্দাসংলগ্ন বিশাল বিশাল কক্ষ। এক কোণ দিয়ে উঠে গেছে চিলেকোঠার সিঁড়ি। এ পতিসরে বসেই কবি রচনা করেছেন কাব্য, নাটক বিদায় অভিশাপ, গোরা ও ঘরে বাইরে উপন্যাসের অনেকাংশ। ছোটগল্পের মধ্যে প্রতিহিংসা, ঠাকুরদা, ইংরাজ ও ভারতবাসী প্রবন্ধ। গানের মধ্যে তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা/তুমি আমার নিভৃত সাধনা, বধূ মিছে রাগ করোনা, তুমি নবরূপে এসো প্রাণে প্রভৃতি। দুই বিঘা জমি, তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে কবিতাসহ বিভিন্ন কবিতা। কবির স্মৃতিবিজড়িত মণিতলার পূজামণ্ডপের সেই তাল গাছটি আজ আর নেই। ঝড়ে ভেঙে গেছে অনেক আগে। তবে রবীন্দ্রগবেষকদের ধারণা, পতিসর কুঠিবাড়ির সামনে যে দুই বিঘার মাঠটি আছে, সেটিই কবির রচিত দুই বিঘা জমি কবিতার সেই মাঠ।
পতিসর কাচারিবাড়িটি এখন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রক্ষণাবেক্ষণ করে। এখানে কবির নানান স্মৃতিসামগ্রী সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কবির দেয়ালঘড়ি, লোহার সিন্দুক, খাট, টি-টেবিল, টি-পট, আয়না, নাগর বোটের অ্যাঙ্কর, ট্রাক্টরের ভগ্নাংশ, স্নানের বাথটাব, বিভিন্ন বয়সের ছবি, স্বহস্তে লিখিত ৬ পৃষ্ঠার চিঠিসহ নানান সামগ্রী। কবি তাঁর পুত্রের নামানুসারে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউট। তিনি কৃষকের উন্নয়নকল্পে প্রতিষ্ঠিত কৃষি ব্যাংকে ১৯১৩ সালে পাওয়া নোবেল পুরস্কারের ১ লাখ ৮ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন।
পতিসরে প্রতি বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বসে মিলনমেলা। দূরদূরান্ত থেকে কবির ভক্তরা ছুটে আসেন তাঁদের প্রিয় কবির স্মৃতিবিজড়িত পতিসর কুঠিবাড়ি প্রাঙ্গণে। নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল জানান, কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে এবার কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে না কাচারিবাড়ি পতিসরে। তবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাতীয়ভাবে তিন দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথম দিনে রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা। সেখানে প্রধান অতিথি থাকবেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খন্দকার আজিম আহমেদ।