দেশের ব্যাংক খাত শক্তিশালী করতে সরকার আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দেবে। এই অর্থ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে ব্যবহৃত হবে। এ ছাড়াও কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংককে নির্দিষ্ট শর্তে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। এই তহবিল ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নির্দেশনা অনুযায়ী, যা বিগত সরকারের বাজেটে মূলধন বরাদ্দ থেকে আলাদা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সহযোগিতায় ইতোমধ্যে ব্যাংক খাতে সংস্কার করতে একটি টিম কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ৪০ থেকে ৫০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি রয়েছে ৬৫ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা, যেখানে শুধু সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের পর্যাপ্ত মূলধন রয়েছে। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মূলধনের ঘাটতির পরিমাণ ৫৮ হাজার ৭৮০ কোটি করছে, যেখানে ১০টি শরিয়াহ ব্যাংকের মধ্যে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক বাদে আটটির অবস্থাই খারাপ। মূলধন ঘাটতি রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রচলিত ব্যাংকেরও।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় ব্যাংক খাতের কঠোর সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানে মূলধন সহায়তা দেওয়ার জন্য একটি প্যাকেজ দেওয়া হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর খেলাপি ঋণের সঠিক পরিমাণ প্রকাশ হওয়ার ফলে অনেক ব্যাংক আরও বড় আকারে মূলধন সংকটে পড়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ছয়টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ মোট ১৯টি ব্যাংক সম্মিলিতভাবে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়ে, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ। এটা বেড়েছে মূলত ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের কারণে। ফলে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংক এখন লোকসানে চলছে। ঋণ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে তাদের জন্য। তারা এখন অনেক ক্ষেত্রেই মূলধন ঠিক রাখার চেষ্টায় ঋণ দিতে পারছে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আরিফ হোসেন খান বলেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঋণের টাকা ফেরত না আসায় প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে যায়। এর ফলে মূলধন ঘাটতিও বহু গুণ বেড়ে গেছে। একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি প্রভিশন ধরে রাখার সুবিধা অব্যাহত রাখে, তাহলে মূলধন ঘাটতি কমবে। আগের সরকারের সময় দুর্বল ও সমস্যাপূর্ণ ব্যাংকগুলো এই সুবিধা ব্যবহার করে তাদের মূলধন ঘাটতি আড়াল করত। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, পুনরায় মূলধন জোগাড় করাই হচ্ছে সবচেয়ে সহজ সমাধান। ব্যাংক রেজ্যুলেশন অর্ডিন্যান্স পাসসহ বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগের মাধ্যমে এটা করা যেতে পারে। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোতে অর্থ দেওয়ার আগে সেসব প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে। সরকার যদি পুনরায় মূলধন দেওয়ার কথা বিবেচনা করে, তার আগে ব্যাংকগুলো থেকে অনিয়ম দূর করতে হবে।