আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্ধারিত ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম৬) পদ্ধতি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন বা প্রায় ২ হাজার ২২৪ কোটি ডলার। প্রায় ৪৮ দিন পর দেশের রিজার্ভ আবারও ২২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে প্রবেশ করল। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গতকাল রাতে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ৩০ এপ্রিল রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়, যা ১৯ মাসের মধ্যে প্রথম। তবে আকুর (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) দেনা পরিশোধের কারণে ৬ মে তা আবার ২২ বিলিয়নের নিচে নেমে যায়। এবার আবার তা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রিজার্ভের গ্রস বা মোট পরিমাণ এখন ২৭ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের কভিড মহামারির সময়ে রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায় এবং ৫০ বিলিয়নের মাইলফলকের দ্বারপ্রান্তে ছিল। তৎকালীন সরকার দাবি করেছিল, কভিড পরবর্তী সময়ে এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জেরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যায়। এর ফলেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়ে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে শুরু করে এবং বাণিজ্য ঘাটতিও কিছুটা কমে আসে। তবে সে অনুপাতে রিজার্ভ বাড়ছিল না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক আর বাজারে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেনি। পুরোনো ঋণপত্র ও এলসির বকেয়া দায় পরিশোধ করা হয়েছে। তাই রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়লেও তা রিজার্ভে আশানুরূপ প্রতিফলিত হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত দুই-তিন বছরে যে ডলার সংকট ছিল তা এখন অনেকটাই কেটে গেছে। পট পরিবর্তনের পরপরই বড় অঙ্কের বিদেশি ঋণ, সেবার মূল্য এবং এলসির বকেয়া দায় পরিশোধ করা হয়।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, রিজার্ভে এ প্রবৃদ্ধি স্বস্তিদায়ক হলেও তা ধরে রাখতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ স্থায়ীভাবে বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে এলসি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও অর্থনীতিতে আস্থা ফিরিয়ে আনাও জরুরি।