অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশের স্পিন বোলদাক শহরে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী। এতে ৪০ জন নিহত ও আহত হয়েছে আরও অন্তত ১৭৯ জন। স্পিন বোলদাক শহরটির অবস্থান আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে। স্পিন বোলদাকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা করিমুল্লাহ জুবাইর আগার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আফগান সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজ জানিয়েছে, নিহত ও আহত সবাই বেসামরিক এবং একটি বড় অংশই নারী ও শিশু।
হামলার শিকার এবং আহত হাজি বাহরাম নামে এক ব্যক্তি তোলো নিউজকে বলেন, ‘আমি ইতিহাসে কখনো এমন অবিচার দেখিনি। একটি দেশ, যারা নিজেদের মুসলিম দাবি করে তারা এখানে নারী, শিশু ও বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা করল!’
বিমানবাহিনীর অভিযানের পাশাপাশি স্পিন বোলদাক শহরের নোকলি, হাজি হাসান কেলাই, ওয়ার্দাক, কুচিয়ান, শহীদ ও শোরবাকে একের পর এক আর্টিলারি গোলা নিক্ষেপ করেছে পাকিস্তানি স্থলবাহিনী। এতে বেশ কিছু বাড়িঘর, দোকান ধ্বংস হয়ে গেছে। হতাহতও হয়েছে অনেকে।
প্রসঙ্গত, আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাতের মূলে রয়েছে পাকিস্তানের তালেবানপন্থি সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালেবান (টিটিপি)। বেশ কয়েক বছর আগে পাকিস্তান সরকারের নিষিদ্ধ ঘোষিত এ গোষ্ঠীটি পাকিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য দিনদিন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। আফগাস্তানের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানি প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়া টিটিপির প্রধান ঘাঁটি। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গোষ্ঠীটি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের অভিযোগ, আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের মদত ও আশ্রয়প্রশ্রয় পাচ্ছে টিটিপি। তবে কাবুল বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
পাকিস্তান সেনাপ্রধানের কঠোর বার্তা : পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনির তালেবান সরকারকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, আফগান মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানের ভিতরে হামলা চালানো ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। শনিবার অ্যাবোটাবাদের পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি (পিএমএ) কাকুলে একটি পাসিং আউট প্যারেডে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি আফগান জনগণকে আহ্বান জানান, সহিংসতা নয়, শান্তি ও পারস্পরিক নিরাপত্তার পথ বেছে নিন। আফগানিস্তানের মাটিতে সক্রিয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে তালেবান সরকারের দৃঢ় ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া এখন অপরিহার্য। কারণ এ প্রক্সি নেটওয়ার্কগুলো পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়ে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন করছে। তিনি নবীন অফিসারদের উদ্দেশে বলেন, ‘সৃষ্টির পর থেকেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী দেশের অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত সীমান্ত রক্ষায় অবিচল ভূমিকা পালন করছে। জাতির পূর্ণ সমর্থনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী পেশাদারি, দৃঢ়তা ও আত্মত্যাগের অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।’ ভারতের আগ্রাসনের মুখে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বিজয় স্মরণ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমাদের বাহিনী আবারও জিতেছে এক বিশ্বাসঘাতক ও বিভ্রান্ত শত্রুর বিরুদ্ধে, যার কূটনৈতিক অন্ধত্ব ও ভ্রান্ত আধিপত্যবাদী মনোভাব তার পতন ডেকে এনেছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, মে মাসে পরিচালিত অপারেশন বুনিয়ানুম মারসুস জনগণের মধ্যে সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও সামর্থ্যরে প্রতি আস্থা আরও সুদৃঢ় করেছে। তাঁর ভাষায়, পাকিস্তান শত্রুর সব হুমকি মোকাবিলা করেছে অসাধারণ পেশাদারিতে।
যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ল : যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়িয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। গতকাল কাতারের রাজধানী দোহায় শান্তি সংলাপ শুরু হয়েছে দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে, সেই সংলাপ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চলবে। শুক্রবার প্রতিবেদনে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছিল, পাকিস্তানের সরকারি প্রতিনিধি ইতোমধ্যে দোহায় পৌঁছেছেন। গতকাল যাওয়ার কথা আফগান প্রতিনিধিদের। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে জিও নিউজ জানিয়েছে, পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা এখনো দোহায় যাননি। আজ রওনা হবেন তাঁরা।