চট্টগ্রামে একে একে বন্ধ হচ্ছে তৈরি পোশাক কারখানা। চলতি বছর নানান সংকটে সাময়িক কিংবা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে কমপক্ষে ৫০টি কারখানা। এতে করে বেকার হয়ে পড়েছেন লাখো শ্রমিক। পোশাক কারখানা বন্ধ হওয়ার জন্য ক্রয়াদেশ (ওয়ার্ক অর্ডার) কমে যাওয়া, সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত, শ্রমিক অসন্তোষসহ ১৫টি কারণ চিহ্নিত করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ ধারা চলতে থাকলে তৈরি পোশাক খাতের সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করবে বলে অভিমত তাদের। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতের খুবই দুঃসময় চলছে। একই সঙ্গে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানোর পাশাপাশি এ খাতে দেশি ভর্তুকি বৃদ্ধি করতে হবে। দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের বিকল্প বাজার তৈরি করতে নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে অন্যান্য প্রচলিত বাজারগুলো সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে।’ বিজিএমইএ চট্টগ্রামের দেওয়া তথ্য মতে, চট্টগ্রামে নিবন্ধিত পোশাক কারখানা রয়েছে ৬১১টি। এর মধ্যে বর্তমানে চালু রয়েছে ৩০০টি। বর্তমানে স্থায়ী কিংবা অস্থায়ীভাবে বন্ধ রয়েছে ৩১১টি কারখানা। চলতি বছরের ২০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে ১৫টি কারখানা। সাময়িক বন্ধ হয়েছে কমপক্ষে ৫০টি কারখানা। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। চট্টগ্রামের তৈরি পোশাক কারখানা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রামের পোশাক কারখানাগুলোর কাজের আদেশ কমেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। এতে করে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন লাখো শ্রমিক। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই ধুঁকছে দেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম খাত তৈরি পোশাক শিল্প।
বিশেষ করে গত বছরের শেষের দিকে জ্বালানি ও ডলার সংকট, সরবরাহ ব্যবস্থায় বাধা, শ্রমিক অসন্তোষ, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ঢিলেঢালা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের প্রত্যাশিত এলসি খুলতে না পারা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে কাঁচামাল আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানান সমস্যা। এসব সমস্যায় একে একে চট্টগ্রামে বন্ধ হচ্ছে তৈরি পোশাক কারখানা। তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হওয়ার ১৫ কারণ চিহ্নিত করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে রয়েছে- রপ্তানি আদেশ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়া, পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সেখানকার সাধারণ মানুষের পোশাক কেনার প্রবণতা কমে যাওয়া, ক্রেতাদের ‘ধীরে চলো’ নীতি গ্রহণ বা বিকল্প বাজার হিসেবে ভিয়েতনাম, ভারত বা কম্বোডিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়া, কারখানার মালিকদের তারল্য সংকটে ভোগা ইত্যাদি। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কারখানায় বেতন-ভাতাসহ নানা ইস্যুতে শ্রমিক অসন্তোষ, যা মালিকদের তাদের কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য করেছে।