২৩ মে, ২০১৯ ০০:৩৭

মমতার কারণেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি'র এত সাফল্য!

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

মমতার কারণেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি'র এত সাফল্য!

ফাইল ছবি

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের গণনা শুরু বৃহস্পতিবার (২৩ মে) থেকে। গত ১৯ মে শেষ ধাপের ভোটের পরই প্রতিটি বুথ ফেরত জরিপেই ইঙ্গিত মিলেছে ফের ভারতের ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ)। পশ্চিমবঙ্গেও গতবারের চেয়ে বিজেপির এবার ভাল ফল করতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। 

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদি ঝড় থাকা সত্ত্বেও বাংলা থেকে মাত্র ২টি আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া যৌথ জরিপে বাংলায় ৪২ টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ২৩ টি আসন পেতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। 

বিজেপি ভাল ফল করতে পারে বলে জানিয়েছে টুডেজ চাণক্য (১৮), টাইমস নাও-ভিএমআর (১১) এবং রিপাবলিক-জন কি বাত (১৮-২৬)-এর জরিপও। 

যদিও নিউজ ১৮-আইপিএসওএস এর জরিপ বলছে বিজেপি সর্বোচ্চ ৩-৫ টি আসন পেতে পারে। বরং গতবারের চেয়েও এবার আরও ভাল করতে পারে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস। 

যদিও বুথ ফেরত জরিপকে কোন মতেই গুরুত্ব দিতে চান নি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। এর বিরোধিতা করে মমতা জানান ‘বুথফেরত জরিপের গালগল্পে আমি বিশ্বাস করি না। কৌশলটা হল এই গালগল্প ছড়িয়ে হাজার হাজার ইভিএম পাল্টে ফেলা।’ 

এটা ঠিক যে বুথ ফেরত জরিপের ফল যে সবসময় আসল ফলাফলের সাথে মিলে যায় তা নয়। কিন্তু তারপরও ভোট গণনার ফল যদি জরিপের কাছাকাছিও যায় সেক্ষেত্রে মমতার উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ ২০২১ সালেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচন। রাজনৈতিক জীবনের মমতার বেশির ভাগ সময়টাই কেটেছে বামদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু সেই বামেদের জায়গায় তার প্রধান প্রতিপক্ষ হতে চলেছে বিজেপি। আর মমতার চিন্তার কারণটা এখানেই। 

বরাবরই ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখার নজির আছে এই পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু সাম্প্রতিক কালে একাধিক গোষ্ঠী ও সংস্থা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এই রাজ্যে নানা প্রতিশ্রুতির অঙ্গীকার করেছে। ফলে এই প্রথমবারের জন্য রাজ্যটির নির্বাচনের লড়াই হয়েছে সাম্প্রদায়িক লাইনের ওপর ভিত্তি করে।  

বিজেপির তরফে প্রায়ই অভিযোগ করা হয় মমতা ব্যনার্জির সংখ্যালঘু তোষণনীতির কারণে রাজ্যের সংখ্যাগুরু হিন্দুদের অবহেলা করা হচ্ছে। চলতি নির্বাচনেরও বাংলায় বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান ইস্যুই ছিল এই ‘সংখ্যালঘু তোষণনীতি’। আর এই কাজে বিজেপি শিবির অনেকটাই সফল বলে মনে করা হচ্ছে। 

একসময়ের তৃণমূল কংগ্রেসের চারবারের বিধায়ক বর্তমানে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং সাফ জানিয়েছেন, ‘এবারের নির্বাচনে উন্নয়ন কোন ইস্যু নয়। বরং এখানে ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে বিজেপি মানে হিন্দু, তৃণমূল মানে মুসলিম।’ 

কিন্তু বিভাজনের জন্য দায়ী কে? সেই প্রশ্নের উত্তরে এই বিজেপি নেতা বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জি যখন থেকে নেকাব পড়া শুরু করলেন সেই দিন থেকেই এই বিভাজনের রাজনীতি তৈরি হয়েছে। প্রতিটি মানুষের মধ্যে এই জিনিসটা ঢুকে গেছে। এখন আমরা রাস্তা তৈরি করেছি না করিনি-মানুষের মধ্যে তার প্রভাব পড়বে না।’ 

দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনেও বাংলায় বিজেপির শক্তি বৃদ্ধির জন্য মমতাকেই দায়ী করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে রাজ্যটিতে কংগ্রেস ও সিপিআইএম'র শক্তি ক্ষয় করতে গিয়ে মমতা এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে উল্টে গেরুয়া শিবিরকেই জায়গা করে দিয়েছেন তিনি। মমতা যদি সিপিআইএম ও কংগ্রেসকে তাদের সীমিত এলাকায় রাজনৈতিক জায়গা দিতেন-সেটা সরকার বিরোধী ভোট ভাগের ক্ষেত্রে সাহায্য করতো-যা প্রকারান্তরে বাংলায় তৃণমূলের আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে সহায়ক হতো। 

 

বিডি-প্রতিদিন/তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর