১৭ দিন পার হলেও সুন্দরবনের শেলা নদীর হরিণটানা এলাকায় তলাফেটে এক হাজার ২৩৫ টন কয়লা নিয়ে ডুবে যাওয়া সি হর্স-১ নামের জাহাজটির উদ্ধার কাজ শুরু করতে পারেনি বিআইডাব্লিউটিএ ও বনবিভাগ। কবে নাগাদ তারা উদ্ধার কাজ শুরু করতে পারবে তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। অবশ্য বনবিভাগ দাবি করছে মালিক পক্ষের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়েছে, তারা খুব শিগগির ডুবে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধার কাজ শুরু করবে। এদিকে এতদিনে জাহাজটি উদ্ধার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।
এদিকে কোস্টার ডুবির ঘটনা তদন্তে বনবিভাগ ও জেলা প্রশাসন পৃথক তিনটি কমিটি গঠন করে। এরমধ্যে বনবিভাগের একটি কমিটি নির্ধারিত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পেরেছে। বাকি দুটির তদন্ত কাজ এখনো চলছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, বনবিভাগের পক্ষ থেকে মালিক পক্ষের সঙ্গে সম্প্রতি যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের একটি বিশেষজ্ঞ দল দুর্ঘটনাস্থলে এসে জরিপ কাজ শেষ করেছে। তারা খুব শিগগির তাদের ডুবে যাওয়া জাহাজটির উদ্ধার কাজ শুরু করবে বলে আমাদের জানিয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) খুলনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আশরাফ হোসেন বলেন, শেলা নদীতে ডুবে যাওয়া কয়লাবাহী জাহাজটির ওজন প্রায় ৭৫০ মেট্রিক টন। অথচ খুলনা ও বরিশাল বিভাগে আমাদের যে উদ্ধারকারী যান রয়েছে তার উত্তোলন ক্ষমতা মাত্র ২৫০ মেট্রিক টন। এ কারনে আমরা তা উদ্ধার করতে পারছি না। এজন্য জাহাজ মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। তারা ভাড়া করা প্রাইভেট কোন যান এনে তাদের ওই জাহাজটি উত্তোলন করবে বলে আমাদের নিশ্চয়তা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তারা যদি ডুবে যাওয়া জাহাজটির উদ্ধার কাজ দ্রুত শুরু করতে না পারে তাহলে তা নিলামে বিক্রি করে দিয়ে তোলার ব্যবস্থা করা হবে বলে হুশিঁয়ার করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির বাগেরহাট জেলা শাখার সদস্য সচিব ফররুখ হাসান জুয়েল বলেন, ঘটনার পর এতদিন পার হলেও শেলা নদীতে ডুবে যাওয়া কয়লাবাহী জাহাজ উদ্ধারে সংশ্লিষ্টদের কোন তৎপরতা নেই। তারা চিঠি চালাচালিতে ব্যস্ত। সংশ্লিষ্টরা আদৌ জাহাজটি তুলতে কতটুকু আন্তরিক তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটির প্রধান বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোমিনুর রশিদ এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা তদন্ত কাজ অনেকটাই শেষ করেছি। খুব শিগগির তা জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেব।
বন বিভাগের গঠিত অপর একটি কমিটির প্রধান বন্যপ্রাণী ব্যবস্থপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) জাহিদুল কবির বলেন, গত ২৩ থেকে ২৫ মার্চ সাত সদস্যের তদন্ত দল সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আগামী ২/১ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ মার্চ বিকালে সুন্দরবনের শেলা নদীর হরিণটানা এলাকায় তলাফেটে এক হাজার ২৩৫ টন কয়লা নিয়ে ডুবে যায় সি হর্স-১ নামের জাহাজটি। এর আগে ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামে একটি তেলবাহী কার্গো সুন্দরবনের শেলা নদীতে ডুবে যায়।
বিডি-প্রতিদিন/০৫ এপ্রিল ২০১৬/ এস আহমেদ