প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে ডিজিটালাইজেশনের পাশাপাশি ডিজিটাল হুমকিও সৃষ্টি হচ্ছে। তাই এ খাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। যাতে করে কেউ ডিজিটাল সুবিধা ব্যবহার করে অপরাধ করতে না পারে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে না পারে। নিরাপত্তার তথ্যগুলো যেন পাচার না হয়। দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা ডিজিটাল সিকিউরিটি-২০১৬ প্রণয়ন করতে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ের ডিজিটাল সিকিউরিটি কাউন্সিলও প্রতিষ্ঠা করা হবে।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কুড়িলে বসুন্ধরা কনভেনশন সিটিতে আয়োজিত ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৬’ উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার আমলে সাড়ে ৭ বছরের শাসনে আইসিটি খাতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ইতোমধ্যে দেশের সব জেলায় থ্রিজি চালু হয়েছে। ২০১৭ সালের মধ্যে আমরা ফোরজি নেটওয়ার্ক চালু করব। তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেই স্বপ্নপূরণে আমরা এগিয়ে চলেছি। কিন্তু এ স্বপ্ন পূরণের পথে যেন অনাকাঙ্ক্ষিত বাঁধা না আসে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ইন্টারনেটের ফলে কিছু সাইবার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেউ যাতে অপরাধ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। হাওয়া ভবনকে ঘিরে যে ঘুষ বাণিজ্যের সৃষ্টি হয়েছিল, আমরা তা বন্ধ করেছি। তেমনি সাইবার অপরাধও বন্ধ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রশংসা করে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে তার তথ্য ও গবেষণা উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ব্যাপক অবদান রাখছেন। তিনি বলেন, আমি নিজেও তার কাছ থেকে আইসিটি সম্পর্কে জানছি, কম্পিউটার শিখছি। গতরাতেও তার কাছ থেকে মোবাইলের ছবি কিভাবে ল্যাপটপে নিতে হয় তা শিখেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের লুটপাটের চিন্তা পরিহার করে আমরাই দেশে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবানে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশে ১৩ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার হচ্ছে, ৬ কোটি ৪০ লাখ লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, ৫ হাজারের বেশি ডিজিটাল সেন্টার থেকে সেবা নিচ্ছেন জনগণ, ৪০টিও বেশি দেশে সফটওয়ার রফতানি করছে বাংলাদেশ, নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি তাদের ফিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, রাজধানীর কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ছেলেমেয়েরা যাতে হাতেকলমে ডিজিটাল প্রশিক্ষণ নিতে পারে সে জন্য দেশব্যাপী বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। মানুষকে যাতে হয়রানির শিকার হতে না হয় সে জন্য অনলাইনে ফরম জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছ। টেন্ডার বাণিজ্য বন্ধ হয়েছে, এখন সরকারি টেন্ডার অন লাইনে আহ্বান করা হয়। তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বই ডিজিটাল করা হয়েছে। কোরআন শরীফও অর্থসহ ডিজিটাল করা হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্বমানের করতে সারাদেশে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালের মধ্যে আরও ১০ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালের আগে প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে এবং ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মাসেতুর উপর দিয়ে যানবহন চলবে।
আইসিটি বিভাগ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস এবং এটুআই কর্মসূচি যৌথভাবে এই মেলার আয়োজন করেছে। মেলায় সরকারি আইসিটি সেক্টরের নীতি নির্ধারকরাসহ সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। সাত দেশের ৭ জন মন্ত্রী আইসিটি সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সম্মেলনে উপস্থিত হন।
তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদে পললের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইমরান আহমেদ এমপি, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যাম সুন্দর, অতিরিক্ত সচিব আশরাফুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের মহাপরিচালক কবির বিন আনোয়ার, প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক, দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ডাক ও টেলিযোগ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়সহ সংসদ সদস্য, বিদেশী এমপিও কূটনৈতিকরা।
ঢাকায় ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড সম্মেলন আজ ১৯ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে চলবে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত। এবার এতে স্পন্সর হিসেবে অংশ নিচ্ছে মাইক্রোসফট। এ সম্মেলনে আয়োজিত ছয়টি সেমিনারে বক্তব্য দিতে ঢাকায় এসেছেন মাইক্রোসফটের উচ্চপদস্থ ছয় কর্মকর্তা।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৯ অক্টোবর, ২০১৬/ আফরোজ