বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে থাকা জেব্রা দম্পতি আবারো একটি শাবকের জন্ম দিয়েছে। ২-৩ দিন আগেই শাবকটির জন্ম হলেও আজ কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। এ কয়দিন পার্কের জঙ্গলের ঝোপঝাড়ের ভেতরে শাবক নিয়ে লুকিয়ে ছিলো মা জেব্রা।
এ নিয়ে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আফ্রিকান জেব্রা ৪ বার শাবকের জন্ম দিলো। বর্তমানে সাফারী পার্কে বাচ্চাসহ জেব্রা পরিবারে সদস্য সংখ্যা হলো ১৫টি। তবে যশোর থেকে উদ্ধার হওয়া দুটি জেব্রাসহ সংখ্যা দাড়ায় ১৭টিতে। বনের গভীরে অবস্থান করায় এখনো সদ্য জন্ম নেওয়া শাকটির লিঙ্গ নির্ণয় করা যায়নি। সুযোগ বুঝে মায়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে শাবকটি।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক কতৃপক্ষ জানায়, ২০১৩ সালের পর থেকে কয়েক দফায় দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানসবার্গ থেকে পশুপাখি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ফ্যালকন ট্রেডার্সের মাধ্যমে জেব্রা আনা হয় পার্কে। পার্কের অফ্রিকান সাফারি বেষ্টনীতে অবাধে বিচরণ করছে জেব্রাগুলো। এ বেষ্টনীতে আরো বেশ কিছু আফ্রিকান প্রাণি বসবাস করে। শাবকের দূরন্তপনায় মুগ্ধ আফ্রিকান সাফারী অঞ্চলে আসা দর্শনার্থী।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার সরোয়ার হোসেন খান জানান, জেব্রা হলো ইকুইডি পরিবারের আফ্রিকান ক্ষুরযুক্ত চতুষ্পদ স্তন্যপায়ী প্রাণি। যারা তাদের স্বতন্ত্র সাদা-কালো ডোরার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ডোরার পাশাপাশি এদের ঘাড়ে ঘোড়ার কেশর মতো খাড়া চুল আছে। এরা সামাজিক প্রাণি, ছোট-বড় পাল তৈরি করে ঘুরে বেড়ায়। প্রাপ্ত বয়স্ক একটি জেব্রা সাধারণত ৮ ফুট লম্বা হয়, এদের ওজন ৩০০ কেজির উপরে হয়। পুরুষ বাচ্চারা চার বছরে এবং মাদী বাচ্চারা তিন বছর বয়সেই অনেকটা প্রজননক্ষম হয়। তবে জেব্রা ঘোড়া বা গাধার মতো দেখতে হলেও এদেরকে পোষ মানানো যায় না। পার্কের একই বেষ্টনীতে জেব্রার সঙ্গে অরিক্স, ওয়াইলবিস্ট, জিরাফ, গ্যাজেল কমনইলান্দ বসবাস করে। গভীর অরন্যে অবাধে বিচরণ করে এ সব প্রাণি।
তিনি জানান, জেব্রা শাবক সাত থেকে আট মাস মায়ের দুধ পান করে। জেব্রা ১২ থেকে ১৩ মাস গর্ভকালীন সময় পার করে। প্রকৃতিতে ২০ বছর বাঁচলেও আবদ্ধ জোন (ক্যাপটিবে) ৪০ বছর পযর্ন্ত বেঁচে থাকে জেব্রা। জেব্রা সাধারণত একটি বাচ্চাই প্রসব করে।
সহকারী ভেটেরিনারি সার্জন ডা. নিজাম উদ্দীন চৌধুরি জানান, সুস্থ রয়েছে শাবকটি। তবে সপ্তাহ খানেক পরেই একটু একটু করে কচি ঘ্রাস খেতে শুরু করবে। প্রাপ্তবয়স্ক ১৪টি জেব্রার মধ্যে সাতটি ফিমেল (নারী) সাতটি মেইল (পুরুষ) রয়েছে। এরমধ্যে যশোর থেকে উদ্ধার হওয়া ২টি জেব্রা সাফারি পার্কে রয়েছে। যদিও এখনও এদের আলাদা রাখা হয়েছে।
ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার আনিসুর রহমান জানান, ঘাস মূলত এদের প্রধান খাদ্য। মা জেব্রার পুষ্টি গুণের কথা চিন্তা করে খাবারে বেশ পরিবর্তন আনা হয়েছে। ঘাসের পাশাপাশি তাদের ছোলা, গাজর, ভুট্টা ও ভূষি দেয়া হচ্ছে নিয়মিত।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন বলেন, উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে নিয়মিত বাঘ সিংহসহ অনেক প্রাণিই বাচ্চার জন্ম দিচ্ছে। এতে পার্কে আসা দর্শনার্থীরা আলাদা আনন্দ উপভোগ করবে। এ সব উম্মুক্ত প্রাণি দর্শনার্থীরা সুরক্ষিত গাড়িতে করে খুব কাছ থেকে দেখতে পেয়ে রোমাঞ্চিত হয়। তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ও ২০১৭ সালে ১৪ই মে ও চলতি বছরের ৬ মার্চ জেব্রা থেকে বাচ্চা পাওয়া গিয়েছিল। জেব্রা পরিবার থেকে প্রজননে আশার সঞ্চার হয়েছে, ভবিষ্যতেও জেব্রা পরিবার থেকে আরো বাচ্চা আশা করা যাচ্ছে।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন