পাবনার ঈশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহনকারী ট্রেনে হামলার ঘটনায় ৯ আসামিকে ফাঁসির আদেশ ও ২৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এই মামলার আরও ১৩ আসামিকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে পাবনার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক রোস্তম আলী এক জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন কেন্দীয় বিএনপির সদস্য ও ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মোকলেছুর রহমান ওরফে ন্যারা বাবলু, পাবনা জেলা বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক একেএম আকতারুজ্জামান আকতার, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু, ঈশ্বরদী পৌর যুবদলের সভাপতি মোস্তফা নূরে আলম শ্যামল, বিএনপি নেতা মাহবুবুল রহমান পলাশ, রেজাউল করিম ওরফে শাহিন, শামছুল আলম, আজিজুর রহমান ভিপি শাহীন, শহীদুল ইসলাম অটল। এদের মধ্যে জাকারিয়া পিন্টু পলাতক।
সরকার পক্ষের আইনজীবী আকতারুজ্জামান মুক্তা বলেন, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে ঈশ্বরদী স্টেশনে যাত্রাবিরতি ও পথসভা করার কথা ছিল। শেখ হাসিনার বহনকারী ট্রেনটি ঈশ্বরদী ষ্টেশনে পৌঁছলে বিএনপি নেতাকর্মীরা ট্রেন ও তার কামরা লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় ওই সময়ে জিআরপি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে সাত জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে পুলিশ মামলাটি পুনঃতদন্ত করে। তদন্ত শেষে নতুন করে ঈশ্বরদীর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ ৫২ জনকে এই মামলায় আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পরের বছর পুলিশ কোনও সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত চার্জশিট দাখিল করে। পরে আদালত ওই চার্জশিট গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তর করেন। পরে সিআইডি তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। মামলা নম্বর এসটি ৪২/৯৭।
এদিকে, এই মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে গত মাসের ৩০ জুন আদালতে বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের ৩০ জন নেতাকর্মী আদালতে হাজির হলে বিচারক তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর গত মঙ্গলবার (২ জুলাই) মামলার আরও দুই আসামি ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মোখলেছুর রহমান ওরফে বাবলু এবং বিএনপি নেতা আব্দুল হাকিম টেনু আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পুলিশ ওই দিন রাতেই মামলার আরেক আসামিকে গ্রেফতার করে।
মামলায় ৫২ জন আসামির মধ্যে ৫ জন ইতোমধ্যে মারা যাওয়ায় তাদের এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেন আদালত।
এদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী মাসুদ খন্দকার বলেন, আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো।
রায়কে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই পাবনার ঈশ্বরদী ও পাবনায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। এদিকে আদালত চত্বরে আসা আসামিদের স্বজনরা রায় ঘোষণার পর পরই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এদিকে, বিএনপি ও আসামির স্বজনরা রায়ের প্রতিবাদে কোর্ট চত্বরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও আনন্দ মিছিল করেন। এ সময় কোর্ট চত্বরে উভয় গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আদালতে উপস্থিত লোকজন দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করে নিরাপদ আশ্রয় নেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিডি-প্রতিদিন/০৩ জুলাই, ২০১৯৮/মাহবুব