ডাক, টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বাংলাদেশে ২২ হাজার পর্ন সাইট বন্ধ করা হয়েছে। কয়েক হাজার জুয়ার সাইট বন্ধ করেছি। ফেসবুক ইউটিউবে যে ধরনের পর্ন সংক্রান্ত অথবা নোংরা যেসব অশ্লীল তথ্যাদি বা উপাত্ত আছে সেগুলোকে অপসারণ করার ব্যবস্থা নিয়েছি। টিকটক নামক একটি অ্যাপ আছে যা দিয়ে এ ধরনের নোংরামি করা হয়, সেটিও বন্ধ করা হয়েছে। তবে ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বাংলাদেশের আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। তারা আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে পরিচালিত হয় না। তারা মূলত আমেরিকা স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে চলে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে মঙ্গলবার বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সব কথা বলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ছবি, ভিডিও, নোংরামি ছাড়ানো হচ্ছে-এমন প্রশ্নের জবাবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রী বলেন, সত্যি এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি শুধু বাংলাদেশের বিষয় না। ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়টি সমগ্র বিশ্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সুখের বিষয় এই সংসদে গত বছর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি নামে একটি সংস্থা স্থাপিত হয়েছে।
এসময় তিনি আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, সেগুলো মূলত বাংলাদেশের আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। তারা আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে পরিচালিত হয় না। তারা মূলত আমেরিকা স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে চলে। তাদের বাংলাদেশে কোনো অফিস পর্যন্ত নেই। সেই কারণেই এখন খুবই গুরত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে উঠেছে তাদের কন্টেন্টগুলোতে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে কি না।
মন্ত্রী এ সময় জানান, টেলিকম বিভাগের অধীনে টেলিকম সাইবার সিকিউরিটি নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের মূল্য উদ্দেশ্য ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধান করা এবং একটি নিরাপদ ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা। আশা করছি, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার পর যে ধরনের পরিস্থিতি আছে সেটি আর থাকবে না।
বকেয়া আদায়ে গ্রামীণ ও রবির ব্যান্ডউইথ কমানো হয়েছে :
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু এবং সরকার দলীয় শামীম ওসমানের পৃথক দু’টি প্রশ্নের জবাবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আদালতের কারণে মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছ থেকে পাওনা আদায়ে বিলম্ব হয়। আবার মোবাইল অপারেটরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে গেলে দেশের জনগণের ওপর চাপ পড়বে।
তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ এবং রবি দু’টি অপারেটর অডিট অনুসারে এই দু’টি প্রতিষ্ঠানের কাছে সরকারের পাওনা রয়েছে। ইতোমধ্যে পাওনা আদায় করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এজন্য গ্রামীণের শতকরা ৩০ ভাগ এবং রবির শতকরা ১৫ ভাগ ব্যান্ডউইথ কমানো হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে অবিলম্বে যেন পাওনাদি পরিশোধ করে দেয়।
এসময় মন্ত্রী বলেন, আমরা যখনই কোন অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাই তারা ফায়দা নিতে চায়। তখন পুরো ব্যবস্থাটাই বিলম্বিত হয়ে যায়। এর ফলে দীর্ঘদিন যাবত এই বকেয়া রয়ে যায়। তিনি বলেন, আরও যাদের কাছে পাওনা রয়েছে তাদেরও অডিট হবে। পাওনা আদায় করার জন্য কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইন্টারনেট গ্রাহক ৯ কোটি ৪৪ লাখ :
সরকার দলীয় সদস্য এম আবদুল লতিফের (চট্টগ্রাম-১১) লিখিত প্রশ্নের জবাবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, দেশে ইন্টারনেটের দাম কমেনি এমন তথ্য সঠিক না। বরং দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেটের দামও উল্লেখযোগ্যহারে কমিয়ে আনা হয়েছে। ইন্টারনেটের সরকার নির্ধারিত মূল্য প্রতি মেগাবাইট ১ টাকা। দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৯ কোটি ৪৪ লাখ। এসময় মন্ত্রী আরো জানান, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানী লিঃ (বিটিসিএল) অত্যন্ত সুলভমূল্যে ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথ চার্জ বিভিন্ন সময়ে ধাপে ধাপে কমানো হয়েছে। প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউউথ চার্জ ২০১৮ সালে ছিল ২৭ হাজার, যা বর্তমানে সর্বনিম্ন ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটক ইন্টারনেট সেবার মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস করেছে। ২০১৮ সালে যেখানে ১ জিবি ইন্টারনেটের সেবা মূল্য ছিল ২২১ টাকা, তা বর্তমানে কমিয়ে সর্বসাধারণের জন্য ৪৬ টাকা এবং ছাত্রদের জন্য ৪৩ টাকা (৩০ দিন মেয়াদী) নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ইন্টারনেটের গ্রাহক সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ লাখ, যা বেড়ে ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত ৯ কোটি ৪৪ লাখ হয়েছে। এছাড়া সরকারি খাতে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসাবে
প্রতি মেগাবাইট ১ টাকা :
সরকার দলীয় সদস্য মো. ইসরাফিল আলমের (নওগাঁ-৬) প্রশ্নের জবাবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ইন্টারনেটের সরকার নির্ধারিত মূল্য হলো প্রতি মেগাবাইট ১ টাকা। বর্তমানে এই মূল্যের কমেই প্রতিষ্ঠানসমূহ ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে। বর্তমানে ইন্টারনেট এর মূল্য পুনর্বিবেচনার জন্য বিটিআরসি হতে ডাটা কস্ট মডেলিং এর কাজ চলমান রয়েছে। তিনি আরো বলেন, মানসম্মত ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করার জন্য বিটিআরসি নিয়মিত ড্রাইভ টেস্ট পরিচালনা করে। তাছাড়া এমএনপি সুবিধা টাওয়ার শেয়ারিং সুবিধা এবং ৪জি চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে সেবার মান মনিটরিং করা হচ্ছে এবং সকল অপারেটরকে সেবার মান উন্নত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম