১৬ জুলাই, ২০১৯ ২০:০৬

পল্লী নিবাসে চিরনিদ্রায় শায়িত এরশাদ

শাহজাদা মিয়া আজাদ ও রেজাউল করিম মানিক, রংপুর

পল্লী নিবাসে চিরনিদ্রায় শায়িত এরশাদ

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে রংপুরে লাখো মানুষ শ্রদ্ধা ও ভালোবসায় শেষ বিদায় জানিয়েছে। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রংপুরে তার বাসভবন পল্লী নিবাস সংলগ্ন বাবা মরহুম মকবুল হোসেন মেমোরিয়াল হাসপাতালের লিচু বাগান চত্বরে তাকে দাফন করা হয়। দাফনের আগে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সাবেক এই রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এ সময় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এরশাদের কফিন ফুলে ফুলে ঢেকে দেয়া হয়। 

এর আগে, বেলা ২টার দিকে রংপুর কালেক্টরেট মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের, সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ বিভিন্নস্তরের নেতার বক্তব্য রাখেন। মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা এরশাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরেন। 

বক্তব্য শেষে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরশাদের জানাজা পড়ান কেরামতিয়া মসজিদের ইমাম মাওলানা হাফেজ ইদ্রিশ আলী। জানাজায় স্থানীয় প্রশাসন পুলিশ প্রশাসন, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে লাশবাহী গাড়ি মাঠ ছেড়ে যেতে চাইলে নেতাকর্মীরা বাধা দেন। তারা এরশাদকে রংপুরে দাফনের দাবিতে সেখানেই অবস্থান করেন। পরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন এরশাদের দাফন রংপুরে হবে। এতে উপস্থিত লোকজন কিছুটা শান্ত হন। পরে রংপুরেই লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। 

এর আগে মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৫২ মিনিটে মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার রংপুর সেনানিবাসে অবতরণ করে। সেখান থেকে লাশ কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। মাঠের গণ্ডি পেরিয়ে রাস্তার দুই পাশে হাজার হাজার মানুষ জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। সকাল থেকেই এরশাদকে এক নজর দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষ কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে জমায়েত হতে থাকে। জানাজা শুরুর আগেই লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়। এরশাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রংপুর জেলা দোকান মালিক সমিতি নগরীর সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট দুপুর ২টা পর্যন্ত বন্ধ রাখে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থানে কালো পতাকা উত্তোলন  ও শোক ব্যানার লাগানো হয়। সিটি করপোরেশনের ছুটি ঘোষণা করা হয়। অফিস আদালত খোলা থাকলে উপস্থিতি ছিল কম। সকলেই এরশাদকে এক নজর দেখার জন্য উদগ্রীব ছিল। জানাজা শেষে কালেক্টরেট মাঠ থেকে লাশ বহনকারী গাড়ি নগরীর প্রধান সড়ক দিয়ে এরশাদের পৈত্রিক নিবাস স্কাই ভিউতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় রাস্তার দুপাশে হাজার হাজার মানুষ এরশাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। বিকেল ৫টার দিকে এরশাদের লাশ বহনকারী গাড়ি পল্লী নিবাসে পৌঁছায়। এরপর সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ এরশাদের কফিনে শ্রদ্ধা জানান। ৬টা ০২ মিনিটে এরশাদকে কবরে শায়িত করা হয়। 

জানাজার আগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আমরা প্রথম থেকেই চাচ্ছিলাম এরশাদকে রংপুরে সমাহিত করবো। তবে ভাবি (রওশন এরশাদ) বিভিন্ন কারণে চাচ্ছিলেন তাকে ঢাকায় দাফন করতে। তবে রংপুরের মানুষের আবেগ ও ভালোবাসার কারণে সর্বসম্মতভাবে আমরা তাকে এখানেই সমাহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভাবিও এতে রাজি হয়েছেন। এরশাদের কবরের পাশে নিজের জন্য কবরের জায়গা রাখার অনুরোধ করেছেন তার স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ।

দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা সাংবাদিকদের বলেন, রংপুরের মানুষের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পল্লী নিবাসেই দাফন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি বলেন, এরশাদের অবর্তমানে দল আরো সুসংগঠিত হবে। জিএম কাদের দলের চেয়ারম্যান হবে, এতে রওশন এরশাদের কোন দ্বিমত নেই। সকলে মিলে এক সাথে কাজ করবো। 

সোমবার সন্ধ্যায় রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর জাপা সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে কবরের জায়গা নির্ধারণ এবং নিজেই মাটি কেটে কবর খননের কাজ শুরু করেন। এরশাদ সিএমএইচে চিকিৎসাধীন থাকার সময় থেকেই রংপুর জাতীয় পার্টির নেতারা তাকে রংপুরে দাফনের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের দাবি এরশাদ বলে গেছেন তাকে যেন পল্লী নিবাসে দাফন করা হয়। সোমবার সন্ধ্যায় রংপুর নগরীর দর্শনা এলাকায় এরশাদের বাসভবন পল্লী নিবাসের পাশে তার বাবা মরহুম মকবুল হোসেন মেমোরিয়াল হাসপাতাল এলাকায় লিচু বাগান চত্বরে তার জন্য কবরও খনন করা হয়। সেখানেই এরশাদের দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। 

বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর