দেশের সবচেয়ে চওড়া ও দৃষ্টিনন্দন সড়ক ‘পূর্বাচল ৩০০ ফুট এক্সপ্রেসওয়ে’ দিয়ে দ্রুতগতিতে যান চলাচল শুরু হলেও সরু এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাসের কারণে রয়েই গেছে ভোগান্তি। মাত্র ৮-৯ মিনিটে ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এক্সপ্রেসওয়েটি পাড়ি দেওয়া গেলেও কাঞ্চন সেতু থেকে ভুলতা পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার যেতে লেগে যাচ্ছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। সিঙ্গেল লেনের কারণে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটলেই এ সড়কে তৈরি হচ্ছে ৮-৯ ঘণ্টার যানজট। ভয়াবহ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এ পথে চলাচলকারীদের। এ ছাড়া নতুন শহর পূর্বাচলের বুক চিড়ে চলে যাওয়া ১৪ লেনের ৩০০ ফুট এক্সপ্রেসওয়ের সুফলও পাচ্ছে না মানুষ।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস চার লেন এক্সপ্রেসওয়ে হবে। এটি ঢাকা বাইপাস প্রকল্পের অংশ ও সড়ক যোগাযোগে দেশের প্রথম পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) প্রকল্প। কাজ শুরু হয়েছে।
বিস্তারিত প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন।’ জানা গেছে, জনভোগান্তি কমানোর পাশাপাশি ৩০০ ফুট এক্সপ্রেসওয়ের সুফল পুরোপুরি পেতে চলতি বছরই চালু হওয়ার কথা ছিল ঢাকা বাইপাস নামের আরেকটি চার লেন এক্সপ্রেসওয়ের। স্থানীয় যানবাহন চলাচলের জন্য দুই পাশে থাকবে আলাদা সার্ভিস রোড। ৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এক্সপ্রেসওয়েটি গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস হয়ে সোজা চলে যাবে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর। পথে যুক্ত হবে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের সঙ্গে। সড়কটি চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল যুক্ত করবে। ৩০০ ফুট এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে মিলে যুক্ত করবে রাজধানীকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রাজধানী ঢাকার ভিতরে প্রবেশ ছাড়াই পূর্বাঞ্চল থেকে উত্তরাঞ্চলে চলাচল করতে পারবে যানবাহন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রকল্পটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল তিন বছরের মধ্যে। তবে সে কাজ শুরু হয়েছে চলতি বছরের মে মাসে। শেষ হবে ২০২৫ সালে। ফলে চলতি বছরের মধ্যে ৩০০ ফুট এক্সপ্রেওয়ে পুরোপুরি চালু হলেও এ সড়ক ব্যবহার করে নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, সিলেট, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জসহ দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দাদের সহজে রাজধানীতে আসা-যাওয়ার স্বপ্ন আপাতত অধরাই থাকছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাসে গিয়ে দেখা যায়, কাঞ্চন সেতু টোল প্লাজার ২ কিলোমিটার পরই শুরু হয়েছে যানজট। গাড়িগুলো ৩ ফুট চলছে, আবার ৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকছে। যানজটে আটকে আছে অ্যাম্বুলেন্স। যান চলাচল স্বাভাবিক করতে নাস্তানাবুদ দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ আবদুল কাদির। উল্টো পথে গিয়ে যানজট বাড়ানো গাড়িচালকদের নিয়ন্ত্রণে লাঠিহাতে রাস্তায় নেমেছেন স্থানীয়রা। যানজটে আটকা ট্রাকচালক আবদুর রব বলেন, ‘এ রাস্তায় সব সময়ই ঘণ্টা-দুই ঘণ্টা যানজট থাকে। বিভিন্ন জেলার গাড়ি এখান দিয়ে ঢোকে। গাজীপুরে যায়, ঢাকায় যায়। রাস্তাটা চার লেন হলে খুব ভালো হতো। অনেক আগে শুনেছি রাস্তা বড় হবে। কবে হবে আল্লাহই জানেন।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বাইপাস (সাপোর্ট টু জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক) প্রকল্পের পরিচালক মো. আবদুল ওয়াহিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পিপিপি প্রকল্পে অনেক ধরনের শর্ত থাকে। ঋণ জটিলতা থাকে। সেগুলো সমাধান করে এ বছর কাজ শুরু হয়েছে। মোট ২৫ বছরের চুক্তি। রাস্তা নির্মাণে নির্ধারিত সময় ৩৮ মাস। আরও তিন বছর সময় আছে। বাকি সময় টোল আদায় করবে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান।’
এদিকে বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ শহরের তালিকায় ওপরের দিকে থাকা ঢাকার ৩০৬ বর্গ কিলোমিটারে গাদাগাদি করে বাস করে প্রায় ২ কোটি মানুষ। যানজটে গাড়ির গতি নেমেছে ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটারের নিচে। পথেই নষ্ট নয় নগরবাসীর লাখ লাখ কর্মঘণ্টা। ঢাকাকে অধিকতর বাসযোগ্য করতে বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে পূর্বাচলে নতুন শহর প্রকল্প চালু করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ প্রকল্পটিতে যাতায়াতের পাশাপাশি দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ সহজ করতে দেশের সবচেয়ে চওড়া ৩০০ ফুট এক্সপ্রেসওয়ের কাজে হাত নেয় সরকার। দৃষ্টিনন্দন সড়কটি এখন দৃশ্যমান। এটি দিয়ে ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটে চলেছে গাড়ি। কিন্তু এক্সপ্রেসওয়ে পার হয়েই থমকে যাচ্ছে সব যানবাহন। এ পথে চলাচলকারী যানবাহন চালক ও যাত্রীদের আকাক্সক্ষা- দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়া এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাসে গাড়ির গতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্টরা অন্তত বিকল্প ব্যবস্থা চালু করবেন।