১৭ এপ্রিল, ২০১৯ ১৮:৪৪

জাতীয় শপথের দিন হোক ১৭ এপ্রিল

সৈকত রুশদী

জাতীয় শপথের দিন হোক ১৭ এপ্রিল

পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামের একটি নতুন দেশের জন্ম ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হলেও রাষ্ট্র হিসেবে দেশটির আনুষ্ঠানিক অভ্যুদয় ঘটেছিলো তেইশ দিন পর, ১৭ এপ্রিল ১৯৭১। 

নিজ ভূখণ্ডের সীমানার মধ্যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে।

মুজিবনগর
অখণ্ড পাকিস্তানের সর্বশেষ নির্বাচনে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দল আওয়ামী লীগ প্রথম সরকার গঠন করে দলের সভাপতি ও সংসদীয় দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, দলের সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ রাষ্ট্রপতি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে। উপ রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। 
সেই প্রথম সরকারের উপ রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের স্থানটি ছিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার সদর থানার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত সংলগ্ন বাগোয়ান ইউনিয়নের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের এক আমবাগানে। 
শপথের পরপরই, পাকিস্তান সরকারের হাতে বন্দী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি ও রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের লক্ষ্যে তার নামে স্থানটির নামকরণ করা হয় ‘মুজিবনগর’। 
আর নবীন রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় প্রথম রাজধানী হিসেবে ঘোষিত এই মুজিবনগর থেকে। বাংলাদেশের প্রথম সরকারের সকল গেজেট, দলিল, নথি, প্রকাশনা ও সম্প্রচারে রাষ্ট্রের রাজধানীর নাম মুজিবনগর হিসেবে উল্লেখ করা শুরু হয়। 
যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ, ভারত ও অপর বহু রাষ্ট্রের সরকারী দলিল-দস্তাবেজে এবং দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে মুজিবনগরকে বাংলাদেশ সরকারের রাজধানী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। 
সেকারণে অনেকক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রবাসী প্রথম সরকারকে 'মুজিবনগর সরকার' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মুজিবনগর দিবস
রাষ্ট্রের প্রথম সরকার গঠন এবং প্রথম রাজধানী মুজিবনগর প্রতিষ্ঠার দিন ১৭ এপ্রিলকে ১৯৭২ সাল থেকে 'মুজিবনগর দিবস' হিসেবে পালন করা হচ্ছে। 
কখনও সরকারীভাবে, কখনও আওয়ামী লীগ, অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে, কখনও মেহেরপুর জেলার মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে। 
তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে 'মুজিবনগর দিবস' প্রথম পালন করা হয় স্বাধীনতার ষোল বছর পর, ১৯৮৭ সালের ১৭ এপ্রিল। 
যখন সে সময়ের রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার উদ্যোগে শপথগ্রহণের স্থানে নবনির্মিত 'মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ' উদ্বোধন করতে আসেন। 
মুজিবনগর দিবসে রাষ্ট্রপতির স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন প্রত্যক্ষ করতে এবং তার সংবাদ সংগ্রহ করতে আগত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের একটি দলের সাথে জাতীয় ইংরেজি দৈনিক 'দ্য বাংলাদেশ টাইমস'-এর একজন রিপোর্টার হিসেবে ঢাকা থেকে আমিও ঐদিন গিয়েছিলাম মুজিবনগরে। প্রত্যক্ষ করেছিলাম ইতিহাসের আরেকটি মাহেন্দ্রক্ষণকে।
এর আগে বাংলাদেশের কোন রাষ্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধান ঐতিহাসিক মুজিবনগর পরিদর্শন করেননি। কিংবা মুজিবনগর দিবস পালন করেননি। 
নির্বাচিত একটি সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা গ্রহণকারী একসময়ের সামরিক ও স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নানা কারণে নিন্দিত ও সমালোচিত হলেও কেবলমাত্র জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ নির্মাণ এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে মুজিবনগর দিবস পালনের জন্য প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। 
সামরিক ও স্বৈরশাসক হিসেবে তাঁর গণবিচ্ছিন্নতা আড়াল করতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার নয় বছরের শাসনকালে যেসকল লোকরঞ্জন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, মুজিবনগর দিবস পালন ছিল তার অন্যতম।
১৯৯৬ সালের জুন মাসে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসার পর সরকারীভাবে 'মুজিবনগর দিবস' নিয়মিত পালন শুরু হয়। সেই সময় থেকেই মন্ত্রী পর্যায়ের পদমর্যাদার রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধির উপস্থিতিতে এই মুজিবনগর দিবস পালিত হচ্ছে। 
মুজিবনগর দিবসের মর্যাদা
রাষ্ট্রের প্রথম সরকারের শপথের দিন ও স্থানের যে ঐতিহাসিক গুরুত্ব, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অংশগ্রহণ ছাড়া দিবসটি পালনের ফলে তার যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে বলে মেহেরপুরের অধিকাংশ অধিবাসীর মতো আমিও মনে করিনা। 
অথচ এই দিবস ও স্থানটির গুরুত্ব বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য অপরিসীম। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষের বেশিরভাগই এব্যাপারে আমার সাথে একমত হবেন বলে আমার বিশ্বাস।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনে প্রথম সরকারের শপথের দিন ও স্থানকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। যেমনটি করেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধে দেশে ও বিদেশে সহায়ক প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও ব্যক্তিকে বিশেষ মর্যাদা প্রদানের ব্যবস্থা করে।


সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও জাতীয় শপথ দিবস
মুজিবনগর দিবসকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়ার লক্ষ্যে মেহেরপুরবাসী ও স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষদের নানাবিধ প্রস্তাব রয়েছে। এই বিভিন্ন প্রস্তাবের সমন্বয়ে আমার প্রস্তাব হলো:
রাষ্ট্রের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের ঐতিহাসিক দিন মুজিবনগর দিবসকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানের লক্ষ্যে দিবসটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে 'জাতীয় শপথ দিবস' হিসেবে পালন এবং রাষ্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধানের অংশগ্রহণের বিধান চালু করে বর্তমান সরকার প্রথমে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রদান ও পরে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারে।
'জাতীয় শপথ দিবস' পালন করা হবে প্রতি বছর ১৭ এপ্রিল। মূল অনুষ্ঠানটি হবে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি অথবা সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। 
এতে অংশ নেবে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক এবং সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যার যার অবস্থান থেকে। 
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে সকাল ১০টা বা ১১ টায় বিউগল বাদনের পর স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে জাতীয় পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং তার পরপরই রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে দুই থেকে তিনটি বাক্যে শপথ পাঠ। শপথ শেষে জাতীয় সংগীতের সুর বাদন। মাতৃভূমি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে (প্রথম সরকারের শপথের বাক্যাংশ ব্যবহার করা যেতে পারে; কোন ব্যক্তি বা দলের নাম বা শ্লোগান উল্লেখ করা যাবেনা) এই শপথ বাক্য পাঠ হবে। 
বেতার, টেলিভিশন ও অনলাইনে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ তিন মিনিট সময় লাগবে। কিন্তু গোটা জাতির এই তিন-চার মিনিট ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও জাতীয় সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং শপথ বাক্য পাঠ এক অভূতপূর্ব ঐক্যতান সৃষ্টি করবে। 
দেশের প্রতিটি সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানুষ তাঁদের কাজ বন্ধ করে নিজ নিজ আসন ও অবস্থান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানের সাথে সাথে শ্রদ্ধা নিবেদন ও শপথ পাঠ করবেন। 
তবে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খোলা মাঠে বা হলরুমে জাতীয় পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে জাতীয় শপথ দিবস পালনের আয়োজনে অংশগ্রহণ করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ও সংহতি প্রকাশ, দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতে এবং দেশগঠন ও সেবামূলক মনোভাব সৃষ্টিতে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। 
জাতীয় শপথ দিবসে শপথ বাক্য পাঠের পর মূল আয়োজনস্থলে দেশাত্মবোধক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সৈন্য ও নাগরিকদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে মিত্রবাহিনীর সদস্য ও কমনওয়েলথভুক্ত কয়েকটি দেশ প্রতিবছর ১১ নভেম্বর ঠিক একইভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে রাষ্ট্রপ্রধান অথবা সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে স্মরণ দিবস (Remembrance Day) পালন করে থাকে। 
জাতীয় পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে বিউগল বাদনের পর এক মিনিট নীরবতা পালন করে এবং দেশজুড়ে তা' পালন করা হয়। যাঁরা উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে বাস করেন অথবা ভ্রমণকালে ঐদিন ঐসব দেশে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা এই বার্ষিক স্মরণ দিবস পালনের সাথে সুপরিচিত। 
দিবসটিকে একেক দেশে একেক নামে অভিহিত করা হয়। সাধারণত: 'পপি ডে' বা নামে পরিচিত এই দিবসকে ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সহ কয়েকটি কমনওয়েলথ দেশে বলা হয় 'রিমেমব্রান্স ডে'। যুক্তরাষ্ট্রে বলা হয় 'ভেটেরানস ডে'। ফ্ৰান্সে 'আরমিস্টিস ডে'। একইভাবে বাংলাদেশে পালন হতে পারে 'জাতীয় শপথ দিবস'।
দিবসটিকে 'মুজিবনগর দিবস' রেখেই দেশজুড়ে 'জাতীয় শপথের দিন' হিসেবে পালন করার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি বা স্পীকার উপস্থাপন করে সম্মত করানোর জন্য মেহেরপুরবাসীকেই এগিয়ে আসতে হবে। 
এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রিসভায় মেহেরপুর জেলাকে প্রতিনিধিত্বকারী প্রথম সংসদ সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন। 
এবছরের মুজিবনগর দিবস উদযাপনকালে প্রসঙ্গটি সরকারী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও উপস্থিত জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের সামনে উপস্থাপন করা সম্ভব হলে আগামী বছরই 'মুজিবনগর দিবসে' 'জাতীয় শপথের দিন' উদযাপনের সূচনা করা যেতে পারে।
জাতীয় শপথ দিবসের তাৎপর্য
একথা আজ আর কারও অজানা থাকার কথা নয় যে, ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে ২৫ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তানের সামরিক শাসক গোষ্ঠী সেই দেশেরই পূর্ব অংশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উপর সামরিক বাহিনীর সাহায্যে আক্রমণ ও গণহত্যা শুরু করলে, নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণ প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। 
পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত বাঙালি সামরিক, আধা-সামরিক, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের বেশিরভাগই সেই রাষ্ট্রের সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে প্রথম থেকে এই যুদ্ধে যোগ ও নেতৃত্ব দেওয়ায় আগে থেকেই স্বায়ত্তশাসন ও পরে স্বাধীনতাকামী বাঙালির এই প্রতিরোধ যুদ্ধ পরিণত হয় বাংলাদেশ নামে এক নতুন রাষ্ট্রের স্বাধীনতার লক্ষ্যে এক সর্বাত্মক জনযুদ্ধে। 
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয় ১১ এপ্রিল ১৯৭১। পাকিস্তানের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদের রেকর্ড করা এক বেতার ভাষণ প্রচারের মধ্য দিয়ে। সেই ভাষণে ১০ এপ্রিল ১৯৭১ প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। 
মুক্তাঞ্চল মেহেরপুর মহকুমার বাগোয়ান ইউনিয়নের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আমবাগানে ১৭ এপ্রিল অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন। পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক অভ্যুদয় হয়। 
প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ১১ এপ্রিলের প্রথম বেতার বক্তৃতাকে বৈধ সরকার গঠনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য ‘স্বাধীনতা আদেশ ঘোষণা’র তারিখ ১০ এপ্রিল ১৯৭১ বলে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীকালে গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম সরকার গঠনের তারিখ হিসেবে ১০ এপ্রিল ১৯৭১ রেকর্ড করা হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে যুদ্ধে ও সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্য ও বেসামরিক কর্মকর্তা ও নাগরিক এই প্রথম সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে একটি মাত্র ব্যতিক্রম ছাড়া। 
ভারত সরকারের বিশেষ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে 'মুজিববাহিনী' নামে খ্যাত, শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) তাজউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে দাঁড়ায়। 
যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর দেশের অভ্যন্তরে থেকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া বিভিন্ন বাহিনী (যেমন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন 'কাদেরিয়া বাহিনী'; 'হেমায়েত বাহিনী' ইত্যাদি) মুজিবনগর সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। 
মুজিববাহিনী তখনই তাজউদ্দীন সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ না করলেও ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর এই সরকারের ধারাবাহিকতায় গঠিত বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে এই সকল বাহিনী তাদের অস্ত্র সমর্পণ করে। 
১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে মুজিবনগরে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম সরকারের ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু সরকারের পূর্ণ কর্তৃত্ব। 
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে বাংলাদেশে সরকারের সেই ধারাবাহিকতা বাংলাদেশে অব্যাহত রয়েছে ও থাকবে।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর