ডান-বাম এবং কিছু সুশীলদের একটি ঢালাও প্রচারণা আছে। কোন ঘটনা দেখলেই এরা সমস্বরের চিৎকার করে উঠে, ‘বিচারহীনতা’, ‘বিচারহীনতা’ বলে! ‘বাংলাদেশে কোন কিছুর বিচার হয় না’ -এরকম একটি কথা বলা ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে। অথচ গণমাধ্যমের মাধ্যমেই আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মামলার রায়ের খবর শুনি।
তখন এরা বলবে রায় ঠিক হয়নি!
আসলে ‘বিচার’ কি, তা এরা জানেই না। এরা আসলে ‘বিচার’ চায় না, এরা চায় সরাসরি ‘শাস্তি’। এদের নিজেদের যা মনে হয়, সেরকম তাদের ‘মনের মতো’ তাৎক্ষণিক ‘শাস্তি’! কিন্তু তা কি সম্ভব? বিচার তো একটি প্রক্রিয়া। বিচার মানে সকলকে যার যার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া।
আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থার বেশকিছু সমস্যা আছে, মানি। কিন্তু তাই বলে এ সমাজে কোন বিচার নেই বলে যে প্রচারণা চালানো হয়, তা সর্বৈব মিথ্যা।
‘গোয়েবলেজম’ মানে হলো মিথ্যা এবং অর্ধ সত্যকে, সত্য হিসেবে প্রচার করা। যারা ‘বিচারহীনতা’র জিকির তুলছে তাঁরাই গোয়েবলের আসল শিষ্য। বিভিন্ন অন্যায়ের বিচার হয়ে যখন রায় হয়ে যায় তখন গোয়েবলের এই জামাতি-বামাতি শিষ্যরা চুপ থাকে। কিন্তু কোন অন্যায় ঘটলেই এরা তাৎক্ষণিকভাবেই ‘বিচারহীনতা’র জিকির তোলে। এরা মানুষের সংবেদনশীলতাকে পুঁজি করে নির্লজ্জের মতো মিথ্যাচার করে।
আমাদের লড়াই একযুগের এসকল জঘন্য গোয়েবলদের বিরুদ্ধে, আমাদের লড়াই সত্যের পক্ষে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচার এগুলো না হয় বাদই দিলাম।
বিডিআর হত্যা মামলায় রেকর্ড সংখ্যক আসামীর মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের বিচার হয়েছে, তারা প্রভাবশালী, মন্ত্রির জামাই, কর্নেল, মেজর, তাঁদের সবাই এখন কন্ডেম সেলে বন্দী।
বিশ্বজিত হত্যার বিচার হয়েছে। ২১ জনের মধ্যে ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনের যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছিল। পরে উচ্চ আদালত ৮ জনের মধ্যে ৬ জনের সাজা কমিয়ে ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন করেছে। ৮ জন গ্রেফতার আছে। খাদিজা হত্যা চেষ্টায় ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে এবং সে তার সাজা ভোগ করছে।
রানা প্লাজার রানা একটি মামলায় সাজা ভোগ করছেন৷ আরো মামলা বিচারাধীন। টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী সরকার দলীয় এমপি রানার হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, কিছুদিন আগে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছিল, রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে সেই জামিন স্থগিত করেছে।
বাংলামোটরে একজন সরকার দলীয় মহিলা সাংসদের ছেলে রিক্সাওয়ালাকে খুনের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে কারাগারে বন্দী।
কিছুদিন আগে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা এবং মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী দুর্নীতির মামলায় জামিন নিতে গিয়ে বন্দী হয়ে জেলে আছেন।
পাবনার সাবেক ভূমি মন্ত্রী শামসুল ইসলাম শরীফের ছেলে জমি দখল মামলায় কারাগারে বন্দী।
শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার আসামীদের সৌদি আরব থেকে ধরে এনে বিচার করা হয়েছে।
টিউবওয়েলে পড়ে নিহত শিশু জিহাদ মামলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রায় হয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী চাকরিচ্যুত হয়েছেন, বন্দী আছেন।
ব্লগার রাজীব হত্যার বিচার হয়েছে। র্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমন বিচার পেয়েছে, আসামীদের শাস্তি হয়েছে।
গ্রীন লাইন পরিবহন মালিককে কি করা হচ্ছে সেইটা আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন।
এবার বলুন কোন প্রভাবশালীরা রক্ষা পেয়েছে? অথচ আগে আইন করে প্রভাবশালীদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছিল, ভুক্তভোগীরা বিচারও চাইতে পারতো না।
তাই ঢালাওভাবে চোখ বন্ধ করে যখন কেউ বলে, কোন অন্যায়ের বিচার হচ্ছে না, এটা গোয়েবলের মতো জামাতি-বামাতি প্রচারণা ছাড়া আর কিছুই না।
(এ লেখাটির কিছু তথ্য সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা