১২ এপ্রিল, ২০২১ ১৩:৫৩

আহা! মানুষের চাওয়া পাওয়াটা যদি সীমিত হতো

হাসিনা আকতার নিগার

আহা! মানুষের চাওয়া পাওয়াটা যদি সীমিত হতো

হাসিনা আকতার নিগার

মানুষের জীবনটা পদ্ম পাতার জলের মতো। তবে সে জীবনে চাহিদার অন্ত নেই। অল্পতে খুশি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল।পাহাড়সম অর্থ হলে মন চায় নাম, যশ, খ্যাতি পেতে। আবার আয়েশি জীবন পেলে পার্থিব চাহিদার সাথে বাড়ে জৈবিক চাহিদা। সব পেয়েও মনে হয় কিছু একটা নাই। কিন্তু এক জীবনে কত লাগে তার অঙ্কটা কষে দেখে না কেউ। তাই সীমিত জীবনে অসীম চাওয়ার আকাঙ্ক্ষায়  বিপথে পরিচালিত হয় মানুষ। এ সত্যকে বুঝেও ভুল করে প্রশ্নবিদ্ধ হয় মানব জীবন।

বিশ্ব জগতে মানুষের বেঁচে থাকার সময়টা পূর্ব নির্ধারিত এ নিয়ে সংশয়ের কোন অবকাশ নেই। নিদিষ্ট আয়ুতে মানুষ বাঁচে তার কর্মের মাধ্যমে। আর সে কর্ম করতে হয়ে তাকে নিজের বুদ্ধি বিবেচনা বিবেক দিয়ে। নিজের সু -রিপু ও কু-রিপুকে চিনতে না পারলে মানুষ যে সৃষ্টির সেরা জীব তা মিথ্যে প্রমাণিত হয়। অর্থ, ধন সম্পদ, সুখ, ভোগ বিলাসের জন্য অন্যায়ের পথে পরিচালিত হয়ে মানুষ সমাজকে অস্থির করে তুলেছে পার্থিব চিন্তা ভাবনা দিয়ে৷ এ বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণ করে কেউ সুপথে আসে আবার কেউ অন্যায়ের মাঝে বসবাস করতেই পছন্দ করে।

তবে সমাজে ধর্মীয় ব্যক্তিদের আচার আচরণ বিশেষভাবে সাধারণ মানুষের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। প্রত্যেক ধর্মের কিছু বিধি বিধান রয়েছে। আর যারা শুধু ধর্মীয় পড়াশোনা করে মানুষকে ধর্মের বানী প্রচার করে জীবন ও জীবিকার ব্যবস্থা করে তার সমাজে বিশেষভাবে সম্মানিত হয়। সে হোক মুসলমান, হিন্দু  কিংবা খিস্টান। দুঃখজনক হলো, ধর্মের নামে একটা শ্রেণি বারবার মানুষের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানছে রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত আচরণ দিয়ে। তারা তাদের খুশি ও সুবিধামত ধর্মের ব্যাখ্যা আর ফতোয়া দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। তাদের কথা কখনো কেউ আত্মঘাতী হয়ে জঙ্গী উপাধি নিয়ে মৃত্যুবরণ করে আবার কেউ রাস্তায় নেমে পড়ে তলোয়ার হাতে নিয়ে হানাহানি করতে। বিকৃত মানসিকতায় বিভ্রান্ত হয়ে নিজের জীবন দিয়ে ধ্বংস ডেকে আনে পরিবার, সমাজ, দেশে।

সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক নিজে ব্যক্তি চরিত্রের কারণে বিতর্কিত হচ্ছে।তা র পক্ষে বিপক্ষে মানুষের মতামত রয়েছে। তবে সব তর্ক বির্তকের মাঝে তিনি নিজের কৃতকর্মকে জায়েজ করতে অতি হাস্যকর যুক্তি দিয়েছেন, 'সীমিত' শব্দের ব্যবহার করে। ধর্ম ও আইন অনুযায়ী প্রথম স্ত্রী থাকাকালীন দ্বিতীয় বিয়ে করার ব্যাখ্যাটা হয়তোবা তার পারিবারিক বিষয়। কিন্তু নিজের চরিত্রের দোষ ঢাকতে গিয়ে সীমিতভাবে মিথ্যে বলাকে সহি করার মাজেজাটা সত্যি দুর্বোধ্য। মাওলানা সাহেবের বোঝা উচিত তার এ বক্তব্য দিয়ে তিনি কিছু বিবেকহীন ধর্মান্ধকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। যারা তাকে অনুসরণ করে পরিবার, স্ত্রীর সাথে মিথ্যাচার করবে। বিয়ের নামে নষ্ট করবে অন্য মেয়ের জীবন।

এ সমাজে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের এমনইতে কমতি নেই। জৈবিক কারণে প্রতিদিন হাজারো অন্যায় ঘটছে। সেখানে মাওলানা মামুনুল হকের  মতো ব্যক্তির এসব বক্তব্য বেমানান। বরং তিনি যদি প্রকৃতপক্ষে ধর্মীয় বিধিনিষেধ মেনে থাকেন তাহলে সত্যকে স্বীকার করে নিয়ে প্রমাণ করুক ইসলাম ধর্মে বিপথে চলার সুযোগ নেই। অন্যায় ব্যভিচার শরীয়ত বিরোধী কর্ম। ভোগ বিলাসী জীবন পেতে ধর্মকে হাতিয়ার করা হিতকর নয়। 

রাজনৈতিকভাবেও তার ব্যক্তি চরিত্রে স্বচ্ছতা থাকা উচিত। একজন নেতা তার ভালো কাজের জন্য যেমন বাহবা পায় তেমনিভাবে মন্দ কাজের জন্য সমালোচিত হয় অনেক বেশি। তাই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ এমন ব্যক্তিদের সকল ধরনের অসীম চাহিদাকে লাগাম দিতে হবে। সীমিত পরিসরের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা অপচেষ্টা মাত্র। সুতরাং স্রষ্টার দেয়া বিবেক দিয়ে এ সমাজকেই  ঠিক করতে হবে 'সীমিত' শব্দটা কোথায় কতটুকু প্রযোজ্য।

 

লেখক : কলামিস্ট 

 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

সর্বশেষ খবর