৭ মে, ২০২১ ১৪:০৪

জীবনের এপিঠ ওপিঠের আত্মজীবনী

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

জীবনের এপিঠ ওপিঠের আত্মজীবনী

একটা ছবি চোখে পড়ল। ছবিটার সারমর্ম হলো কেউ পায়, কেউ হারায়। একটা নৌকায় বাবা মাছ ধরার বড়শিসহ তিন ছোট ছোট ছেলেকে নিয়ে উঠেছে। নদীতে নৌকা চলছে। বাবা বড়শি নদীর পানিতে ফেলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে। নদীর পানির নিচে একটা বড় বাবা মাছ তার তিন সন্তানের খাদ্যের খোঁজে বের হয়েছে। নৌকার মধ্যে মানুষটার ছোট ছোট সন্তানরা বলছে বাবা আমাদের জন্য খাবার জোগাড় করছে। আর অন্যদিকে মাছের ছোট ছোট সন্তানরা বলছে বাবা আমাদের জন্য খাবার জোগাড় করছে। কিন্তু বড়শি দিয়ে লোকটা যদি বাবা মাছটাকে ধরে ফেলে তবে লোকটার সন্তানরা হয়তো তাদের ক্ষুধা নিবৃত্ত করতে পারবে। তবে ছোট ছোট তিনটা মাছ তার বাবাকে যেমন হারাবে, তেমনি তাদের ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য সহায়ক শক্তিকে হারাবে।

পৃথিবীটাই বুঝি এমন যেখানে জীবনের ঘটনাগুলো একটা অন্যটার সাথে যুক্ত। এই ঘটনাগুলো কারো জীবনকে ইতিবাচক করে আর কারো জীবনকে নেতিবাচক করে। তারপরও জীবন চলে জীবনের গতিতে। সে গতির সাথে কেউ পেরে উঠে, কেউ পেরে উঠে না। জীবনের এই খেলায় কে মানুষ আর কে মাছ এটা বোধ হয় সে মানুষটাই জানে যার জীবনে এমন খেলা চলছে। যে জীবনে অনেক কিছু পায় সে জানেনা জীবনটা কতটা অর্থবহ। অথচ যে জীবনে অনেক কিছু হারায় সে জানে জীবনটা কত অর্থবহ। জীবনের নির্মম সত্যগুলো কতটা কঠিন। কতটা দুর্বোধ্য।
 
এ প্রসঙ্গে আরেকটা ঘটনা মনে পড়লো। ঘটনাটা এমন একটা ট্রেন পু ঝিক ঝিক, পু ঝিক ঝিক করে ছুটে চলেছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির ৩০-৩৫ বছরের একটা লোক, তার ছোট দুটো ছেলেমেয়ে আর বউ ভ্রমণে বের হয়েছে। একটা পেপার হাতে নিয়ে লোকটা খুব মনোযোগ সহকারে সেটা পড়ছে। চোখে কালো ফ্রেমের মধ্যে সোনালী ডিজাইন করা চশমা। ট্রেনটা একটা স্টেশনে এসে থামতেই খেলনা বিক্রেতা সেই বগিতে উঠলো। মধ্যবিত্ত লোকটার ছেলেমেয়ে দুটো খেলনাগুলো দেখে কান্না জুড়ে দিলো। লোকটা খুব বিরক্ত হলো। অনেকটা রাগতস্বরে খেলনা বিক্রেতাকে বললো “আপনি সরেন তো এখান থেকে। দেখছেন না আপনাকে দেখে ওরা খেলনা নেবার জন্য কাঁদছে। না সরলে কিন্তু গলা ধাক্কা দিবো”। ট্রেনের মধ্যে খেলনা বিক্রেতা অনেকটা কষ্ট বুকে চেপে একটা কথা বলে গেলো “আপনার বাচ্চা খেললে আমার বাচ্চা খেতে পারবে”। 

কথাটা খুব ছোট। মাটি থেকে উঠে আসা মানুষের কথা। জীবনবোধের কথা। তবে বুকের খোলা জায়গাটাকে আঘাত দেবার মতো, ঠাণ্ডায় শীতল হওয়া শবদেহের মতো।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর