২৬ মে, ২০২২ ১৭:৩১

‘আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ৫৪তম জন্মদিনে কেকের বদলে টিক্কা’

শাহাব উদ্দিন চঞ্চল

‘আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ৫৪তম জন্মদিনে কেকের বদলে টিক্কা’

বাম থেকে মীর শওকত আলী, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ও শাহাব উদ্দিন চঞ্চল

‘এক সময় সোমবার থেকে বুধবার তিনদিন পূর্ব লন্ডনের Wickham house-এ ‘নতুন দিন’-এর অফিসে কাজ করতাম ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত আবার পশ্চিম লন্ডনের Star of Bombay Restaurant, 157 Westbourne Grove, London W11 2RS-এ ৬টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। মরহুম তারা মিয়া খাঁন ছিলেন নতুন দিনের চেয়ারম্যান এবং স্টার অব বোম্বে রেস্টুরেন্টের মালিক। সেই সুবাদে রেস্টুরেন্টে নতুন দিনের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সভা এবং আড্ডা ছিল হরহামেশা।

সেদিন ছিল ১২ই ডিসেম্বর (সোমবার) ১৯৮৮, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কামান্ডার জেনারেল মীর শওকত আলী ফোন করলেন ৭টার দিকে। ফোন করে বললেন- ‘নানা’ আমি আর গাফ্ফার ভাই ৯টার দিকে আসছি রেস্টুরেন্টে- একটা সারপ্রাইজ আছে, আর কিছু বলেননি। তাঁদের বয়সের সকলকে নানা বলে ডাকতাম, এ আরেক ইতিহাস অন্য কোন সময় লিখবো। তাঁরা দ ‘জন এজওয়ার থাকেন প্রায়ই দু’জন এক সাথে রেস্টুরেন্টে চলে আসতেন। তাঁদের ইচ্ছেমত খেতেন, সুতরাং বাড়তি কোন আয়োজনের দরকার হয়নি কোন দিন।

মীর শওকত বললেন- এই ‘নানা’ আজ গাফ্ফার ভাইয়ের ৫৪ বছর পূর্ণ হলো ভাবলাম সোমবার রেস্টুরেন্টে ভীড় কম তাই একটু আয়োজন। রেস্টুরেন্টের মালিক তারা মিয়া খাঁন আমার সম্পর্কে চাচা এবং আত্মীয়ও। তারাচাচা তিনি নিজে পরিবারসহ রেস্টুরেন্টের উপরের তলায় থাকতেন, রুই মাছের একটা তারকারি উপরে থেকে নিয়ে এসে খাবার টেবিলে রাখলেন, আমাকে বাবা ডাকতেন। একদম সিলেটি ভাষায় তিনি কথা বলতেন। বললেন- বাবা গফ্ফার সাবর বার্থডে জানলেতো কেক আনতাম।

মীর শওকত বললেন, খাঁন সাব হঠাৎ করে জানলাম ভাবি (গাফ্ফার ভাইয়ের সহধর্মিণী) বললেন- আজ তিনার বার্থডে তাই আপনার রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসলাম। আনপ্রিপেয়ার আর বুড়ো বয়সে কেকের দরকার নাই, টিক্কাই এনাফ চঞ্চল (শাহাব উদ্দিন চঞ্চল)। এক পিস টিক্কা কেকের বদলে খাইয়ে দাও। দু’জনই তখন খুব আনন্দের মাঝে ছিলেন। রেস্টুরেন্টের একজন স্টাফকে দিয়ে আমার ক্যামেরায় গাফ্ফার ভাইর ৫৪তম জন্ম দিনটি বন্দি করে রেখেছিলাম ৩৪ বছর আগে কেকের বদলে টিক্কা মুখে তুলে দিয়ে, গাফ্ফার ভাইর ৫৪তম জন্মদিনে। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। 

ছবিটি আজ মনে করিয়ে দিল নতুন দিনে গাফ্ফার ভাইর একটি ধারাবাহিক কলাম- ‘তারা মিয়া বনাম জাতীয় পার্টি’। আজ তারা মিয়া খাঁন, জেনারেল মীর শওকত আলী আর আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী কেউ নেই, কবি গুরুর ভাষায় বলি- এ অনন্ত চরাচরে স্বর্গ-মর্ত্য ছেয়ে, সবচেয়ে পুরাতন কথা, সবচেয়ে গভীর ক্রন্দন, ‘যেতে নাহি দিব’ হায়! তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়। তোঁমরা যেখানেই থাকো ভালো থাকো। আর তারা মিয়া খাঁনের স্টার অব বোম্বে রেস্টুরেন্টে তোঁমাদের সাথে এই ছবিটি স্মৃতি হয়ে থাকলো আমার এ্যলবামে।

ছবিতে বাম থেকে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কামান্ডার ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার জেনারেল মীর শওকত আলী, উপমহাদেশের ক্ষুরধার লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী এবং আমি শাহাব উদ্দিন চঞ্চল, ৩৪ বছর আগে আমরা এমনই ছিলাম। ১২ ডিসেম্বর ১৯৮৮, পশ্চিম লন্ডন স্টার অব বোম্বে রেস্টুরেন্ট।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

সর্বশেষ খবর