বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

ওয়ালটনের টিভি ইউরোপ ছাড়িয়ে আমেরিকার ক্রেতাদের কাছে যাচ্ছে

প্রকৌশলী মোস্তফা নাহিদ হোসেন, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অ্যান্ড সিবিও (টেলিভিশন), ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ (পিএলসি)

ওয়ালটনের টিভি ইউরোপ ছাড়িয়ে আমেরিকার ক্রেতাদের কাছে যাচ্ছে

দেশের টেলিভিশন শিল্প নিয়ে কথা বলেছেন ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ (পিএলসি)-এর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অ্যান্ড সিবিও  (টেলিভিশন) প্রকৌশলী মোস্তফা নাহিদ হোসেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- রুকনুজ্জামান অঞ্জন

 

বিশ্বকাপ সামনে রেখে টিভির বাজার পরিস্থিতি : বিশ্বকাপের আগে দেশে নতুন টিভির চাহিদা বেড়ে যায়। বিশ্বকাপ শুরুর দিন যত ঘনিয়ে আসছে, আমরা দেখছি বিক্রির পরিমাণ ততই বাড়ছে। আশা করছি বিশ্বকাপের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিক্রির এই ধারাবাহিকতা থাকবে।

প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিভিতে নতুন সংযোজন : বড় পর্দায় ফুটবল বিশ্বকাপ দেখার আনন্দ আরও বাড়িয়ে তুলতে আমরা ওয়ালটন টিভিতে বেশকিছু নতুন প্রযুক্তির সংযোজন করেছি। অত্যাধুনিক ফিচার সমৃদ্ধ নতুন তিনটি প্রিমিয়াম মডেলের অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট টিভি বাজারে  ছেড়েছে ওয়ালটন। বাংলাদেশে এই প্রথম ওয়ালটন নিয়ে এসেছে ৫৫ ইঞ্চির পপ-আপ ক্যামেরার অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট টিভি ও স্মার্ট ডিএলইডি টিভি। এতে একটি অ্যাপ রয়েছে যার মাধ্যমে টেলিভিশন থেকে টেলিভিশন এমনকি মোবাইলে কল করতে পারবেন। একই সঙ্গে ৬০টি জায়গায় বসে মিটিং বা কনফারেন্স করতে পারবেন। নতুন প্রযুক্তি হিসেবে আছে ৩৬০ ডিগ্রি থ্রিডি সারাউন্ড সাউন্ড সিস্টেম সমৃদ্ধ নতুন মডেলের ৪৩ ইঞ্চি ফোর-কে ডলবি অ্যাটমস ও ডলবি ভিশন অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট টিভি। এর ফলে দর্শকরা রিয়েল সাউন্ডটা শুনতে পারবেন। বিশ্বকাপের লাইভ খেলা দেখাবে টফি। টফির সঙ্গে আমাদের কাজ হচ্ছে। যাতে আমাদের অ্যান্ড্রয়েড যে প্লে স্টোর আছে, সেখান থেকে কাস্টমার টফি নামিয়ে নিয়ে লাইভ খেলা দেখতে পারে। যারা যারা খেলা দেখাবে তাদের সব অ্যাপ প্লে স্টোরে থাকবে। এ ছাড়া সব  বেসিক এলইডি টিভিতে রয়েছে আকর্ষণীয় রিমোট ট্র্যাকার ফিচার।

ধাপে ধাপে ওয়ালটনের এগিয়ে যাওয়া : দেশের মানুষের হাতে দেশি পণ্য পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ওয়ালটন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন বাংলাদেশের মানুষের প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বেশির ভাগেরই চাহিদা মেটাচ্ছে। ২০০৭ সালে আমরা অ্যাসেম্বলি দিয়ে শুরু করেছিলাম; এখন প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কাঁচামাল ব্যবহার করে দেশেই পণ্য ম্যানুফ্যাকচারিং করছে ওয়ালটন। উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমরা গবেষণায় জোর দিচ্ছি।  টেলিভিশন শিল্পের ওপর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রিসার্স অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার ওয়ালটনের রয়েছে। এতে সম্পূর্ণ দেশি ইঞ্জিনিয়াররা প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন টিভিতে নতুন নতুন ফিচার সেট করার জন্য।

ওয়ালটন টিভির রপ্তানির সম্ভাবনা : আপনি যদি দেখেন, টেলিভিশনের সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে চীন; চীনের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাংলাদেশের একমাত্র এবং সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে ওয়ালটন টিভি। ইউরোপের বাজারে গত বছরের তুলনায় আমাদের সেলস গ্রোথ ছিল প্রায় ১৫৭ শতাংশ। প্রথম আমরা ইউরোপে জার্মানি দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন ওই অঞ্চলের ১২টি দেশে আমাদের পণ্য যাচ্ছে। গুণগত মান ও নতুন ফিচারের কারণে ইউরোপের ক্রেতারা এখন ওয়ালটনের পণ্য খুঁজে খুঁজে কিনে নিচ্ছে। এ কারণে বিক্রিও বাড়ছে। জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কনজুমার ইলেকট্রনিক্স শোতে ওয়ালটন অংশ নিতে যাচ্ছে। সেখানে আমাদের নতুন উদ্ভাবন ও নতুন প্রযুক্তি তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হবে। ওয়ালটন রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন (আরঅ্যান্ডআই) বিভাগের প্রকৌশলীরা টেলিভিশন প্রযুক্তিতে সংযোজন করেছেন ইন্টিগ্রেটেড ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা অগ্নিনির্বাপক সিস্টেম। এটি সেখানে প্রদর্শিত হবে। এভাবেই ওয়ালটন ধাপে ধাপে বিশ্ববাজারে মানসম্মত পণ্য নিয়ে নিজের স্থান করে নিচ্ছে। আমরা চাচ্ছি, মেইড ইন বাংলাদেশ লেখা ওয়ালটনের পণ্য যেন বিশ্বের নানা প্রান্তে প্রতি ঘরে ঘরে শোভা পায়।

টেলিভিশন শিল্পে চ্যালেঞ্জ : বাংলাদেশে এটি একটি নতুন শিল্প। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি টেলিভিশন ছড়িয়ে দিতে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে চীন, জাপান, কোরিয়ার বড় বড় ব্র্যান্ডের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ওয়ালটনের পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্রি করতে হচ্ছে। চীন তাদের পণ্যে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেয়। ফলে তারা এগিয়ে থাকে। আমরা যদি রপ্তানির ক্ষেত্রে ক্যাশ ইনসেনটিভ পেতাম, তবে চায়নার তুলনায় আরও প্রতিযোগিতামূলক দামে আমরা পণ্য বিক্রির সুযোগ পেতাম। ইলেকট্রনিক্স পণ্যে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দিলে শুধু ইউরোপ নয়, আমেরিকা, আফ্রিকা এমনকি অস্ট্রেলিয়ার মার্কেটে আমরা বেশ ভালোরকম প্রভাব বিস্তার করতে পারব বলে মনে করছি। সরকারি সহায়তা পেলে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি খাত হতে পারে ইলেকট্রনিক্স পণ্য।

বিশ্বকাপ উপলক্ষে ক্রেতাদের জন্য ছাড় : অনলাইন সেলস প্ল্যাটফরম ই-প্লাজা এবং ওয়ালকার্ট থেকে ওয়ালটনের ২৪ থেকে ৪৩ ইঞ্চির নির্দিষ্ট মডেলের বেসিক এলইডি ও অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট টিভি ক্রয়ে বিশাল ছাড় পাচ্ছেন  ক্রেতারা। এক্ষেত্রে ৩২ ইঞ্চির বেসিক এলইডি টিভি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৩ হাজার ৯০০ টাকায়। ৮ হাজার টাকা মূল্যছাড়ে ৪৩ ইঞ্চি  বেসিক এলইডি টিভি কেনা যাচ্ছে মাত্র ২৭ হাজার ৯০০ টাকায়। আর ৪৩ ইঞ্চির অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট টিভিতে ৫ হাজার ৯০ টাকা মূল্যছাড় মিলছে। ফলে এই টিভি গ্রাহকরা কিনতে পারছেন মাত্র ৩৩ হাজার ৯০০ টাকায়। ৩২ ইঞ্চির অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট টিভি ৪ হাজার টাকা মূল্যছাড়ে কেনা যাচ্ছে মাত্র ২৩ হাজার ৯০০ টাকায়। এদিকে, ৪০ ইঞ্চির বেসিক এলইডি টিভিতে ডিসকাউন্ট থাকছে ৪ হাজার টাকা। ফলে এই টিভি মিলছে ২৬ হাজার ৯০০ টাকায়। আর ৪০ ইঞ্চির অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট টিভি ৩ হাজার টাকা ডিসকাউন্টে মাত্র ২৯ হাজার ৯০০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। আর ওয়ালটনের ২৪ ইঞ্চির বেসিক এলইডি টিভির দাম কেনা যাচ্ছে মাত্র ১১ হাজার ৯০০ টাকায়। আমরা টিভির সঙ্গে জ্যাকেট ফ্রি দিচ্ছি। এ ছাড়া ওয়ালটন টিভিতে গ্রাহকেরা ছয় মাসের রিপ্লেসমেন্টসহ পাঁচ বছরের প্যানেল গ্যারান্টির পাশাপাশি পাঁচ বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা পাচ্ছেন। যে কারণে ক্রেতারা ওয়ালটন কিনবেন : কারণ ওয়ালটন প্রাইসের কারণে শুধু বেস্ট তা নয়, আমাদের সবচেয়ে বড় সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। যাতে করে পণ্যের বিক্রয়োত্তর সেবা দেওয়া সহজ হয়। মূল্যের ক্ষেত্রেও আমরা প্রতিযোগিতামূলক দরে বিক্রি করছি। আমরা নতুন ওটিটি প্ল্যাটফরম করেছি যেটার মাধ্যমে ৯০টির বেশি লাইভ চ্যানেল দেখতে পারবে।

সর্বশেষ খবর