পশ্চিমবঙ্গের লেখক ও মানবাধিকার কর্মী ড. পার্থ ব্যানার্জির অকপট স্বীকারোক্তি, বাংলাদেশ যতদিন বিশ্বে সরব থাকবে ততদিনই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বহাল থাকবে। কলকাতা কিংবা সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে বাংলা রক্ষায় আন্তরিকতা তেমন একটি নেই। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডটি হারিয়ে গেলে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির অস্তিত্ব আর থাকবে না। পশ্চিমবঙ্গে আমরা যারা রয়েছি, তারা ক্রমান্বয়ে কর্পোরেট কালচারে ধাবিত হচ্ছি। শেকড়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হচ্ছে দ্রুতগতিতে।
১৮ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে জড়ো হওয়া বেশ ক'জন বাংলাদেশি কবি, সাহিত্যিক, লেখক, প্রকাশক এবং সাংবাদিকের সাথে আড্ডায় মাতেন প্রবাসের লেখক-লেখিকারা। সেখানেই কলকাতার সন্তান ড. পার্থ ব্যানার্জি এসব কথা বলেন।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন ড. পার্থ ব্যানার্জি। 'ঘটিকাহিনী'সহ বেশ ক'টি গ্রন্থ রয়েছে তার। নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিখ্যাত পত্রিকায় তার সমসাময়িক লেখাও প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমান নিউইয়র্কে শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে সজাগ করতে একটি শ্রমিক ইউনিয়ন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন।
আড্ডায় ঢাকার ক্ষুব্ধ কবি-সাহিত্যিকরাও অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলা হারিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের খ্যাতনামা কবি-সাহিত্যিক-লেখকদের নাম আনন্দবাজার, দেশসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বিকৃতি করে প্রকাশ করা হচ্ছে। কবি শামসুর রাহমানের নাম কখনই শুদ্ধ করে লিখেনি এসব মিডিয়া।
ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন বলেন, কলকাতায় বাংলা সাহিত্য চর্চা বিশুদ্ধভাবে করার মতো সাহিত্যিক তৈরি হচ্ছে না। ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে কলকাতায় সাহিত্য ও বাংলা সংস্কৃতি চর্চা। অথচ এক সময় অনেকেই কলকাতাকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির রাজধানী হিসেবেও দাবি করতেন। যদিও কখনই তা সঠিক ছিল না।
নিউইয়র্কে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও বইমেলা উপলক্ষে আগত লেখক-লেখিকারা জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে এ আড্ডায় মেতেছিলেন।
বাংলা উৎসবের আহবায়ক ফেরদৌস সাজেদীন এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা ও নাট্যকার জামাল উদ্দিন হোসেনও ছিলেন এ আড্ডায়। ঢাকার কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে ছিলেন আমিরুল ইসলাম, আহমাদ মাযহার, সাইমন জাকারিয়া, হুমায়ূন কবীর ঢালী, জার্মানীর লেখিকা নাজমুন্নেসা পিয়ারি, জসীম মল্লিক। এছাড়াও ছিলেন অঙ্কুর প্রকাশনীর মেজবাউদ্দিন আহমেদ, প্রথমা প্রকাশনের জাফর আহমেদ রাশেদ, ইত্যাদির জহিরুল আবেদীন জুয়েল, কথাপ্রকাশের মোহাম্মদগ জসীমউদ্দিন, আকাশ প্রকাশনের আলমগীর শিকদার লোটন, স্টুডেন্ট ওয়েজের মোহাম্মদ মাশফিকুল্লাহ তন্ময় প্রমুখ। আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি লাবলু আনসার, নির্বাহী সদস্য কানু দত্ত এবং নির্বাচন কমিশনার ও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের আহবায়ক রাশেদ আহমেদও আড্ডায় সরব ছিলেন।
১৯-২১ মে ব্যাপী বাংলা উৎসব চলবে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান এবং কলকাতার সাহিত্যিক পবিত্র সরকার মেলার উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ সময় শনিবার সকালে। এবারও বাংলা উৎসব উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
বিডি প্রতিদিন/১৯ মে, ২০১৭/ফারজানা