বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গত ২৫শে মার্চ সন্ধ্যায় টরন্টোর ড্যানফোর্থ এভিনিউ এর মিজান কমপ্লেক্স অডিটোরিয়ামে টরন্টো ফিল্ম ফোরাম যুদ্ধশিশুদের উপর নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ইরানী চলচ্চিত্র নির্মাতা বাহমান গোবাদী নির্মিত "টার্টেলস ক্যান ফ্লাই" এবং বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা শবনম ফেরদৌসী নির্মিত "জন্মসাথী" চলচ্চিত্র দুটি প্রদর্শিত হয়।
দুই চলচ্চিত্রেই যুদ্ধশিশুদের বিষয়টি উঠে এসেছে। ২০০৪ সালে নির্মিত "টার্টেলস ক্যান ফ্লাই" এর কাহিনী গড়ে উঠেছে ইরাক-তূর্কী সীমান্তের শরণার্থী শিবিরে অবস্থান নেয়া বেশ কিছু ছেলেমেয়েদের কেন্দ্র করে। এদের কেউ বা যুদ্ধে বাবা-মা হারিয়েছে, কেউ বা তরুণী অবস্থাতেই সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষিত হয়ে মা হয়ে সেই সন্তানকে নিয়ে এক আতংক আর কষ্টের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে, আবার কেউ বা মাইন অথবা গুলির আঘাতে পঙ্গু শরীর নিয়ে বেঁচে থাকার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর এই চলচ্চিত্রটিই ইরাকের ভূমিতে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র। ২০০৫ সালে বার্লিন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে 'পিস ফিল্ম এওয়ার্ড' এ চলচ্চিত্রটি সম্মানীত হয়।
"জন্মসাথী" চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জন্ম নেয়া যুদ্ধশিশুদের কথা। এ প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের পরিচালক শবনম ফেরদৌসী যখন ১৯৭২ সালের ১৪ই জানুয়ারি ঢাকার হলিক্রস ফ্যামিলি হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন, তখন তার সাথে ঐ দিনে আরো বারো জন শিশু জন্ম নেয় ঐ হাসপাতালে। জন্ম নেয়া সেই সব শিশুদের মধ্য চারজন ছিলো যুদ্ধশিশু। শবনম ফেরদৌসী তার জন্মের তেতাল্লিশ বছর পর তার সাথে জন্ম নেয়া সেই সব যুদ্ধ শিশুদের অনুসন্ধানে বের হন। তিনি ছুটে বেড়ান বিভিন্ন জায়গায়। তবে তার সাথে জন্ম নেয়া যুদ্ধশিশুদের তিনি খুঁজে না পেলেও পেয়ে যান অন্য তিনজনকে। ১৯৭১ সালে ধর্ষিত হওয়া মা এবং তাদের গর্ভে আসা সেই সব শিশুদের কথায় উঠে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আরেক বেদনাময় অধ্যায়।
চলচ্চিত্র দুটি নিয়ে আলোচনা করেন সংস্কৃতিসেবী বাণী ভট্টাচার্য, চলচ্চিত্র লেখক ইকবাল করিম হাসনু এবং টরন্টো ফিল্ম ফোরাম এর সহ সভাপতি ও বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম এর সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম খোকন।
বক্তারা যুদ্ধ ও যুদ্ধশিশুদের নিয়ে এ ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এই চলচ্চিত্র দুটি মানুষকে মানবিক পৃথিবীর জন্য কাজ করতে প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করবে। বাংলাদেশের বীরাঙ্গনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তারা বলেন, যে কোন যুদ্ধে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বীরাঙ্গনা ও তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানরা। সম্পূর্ণ নিরাপরাধ থাকার পরও তাদের আমৃত্যু সমাজের মানুষের কাছ থেকে অসম্মান পেতে হয়। বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুদের প্রতি ব্যাথা অনুধাবনের জন্য বক্তারা সবার প্রতি আহ্বান জানান। টরন্টো ফিল্ম ফোরাম আয়োজিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টরন্টো ফিল্ম ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক মনিস রফিক।
চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা শেষে মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ও নিপীড়িতদের স্মরণে টরন্টো ফিল্ম ফোরাম ড্যানফোর্থে প্রদীপ মিছিল করে। প্রদীপ মিছিলে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য দায়ী পাকিস্তান ও অন্যান্য আন্তজার্তিক শক্তিকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানানো হয়।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন