টানা লকডাউন আর প্রশাসনিক কড়াকড়ি আরোপের কারণে এবং জনসাধারণের সামাজিক দূরত্ব বজায়ের ফলে বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করা করোনাভাইরাস এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে পর্যটন নগরী মালয়েশিয়ায়। করোনাকে পরাজিত করে চিকিৎসায় সেবার ইতিহাসে নাম লেখাতে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগ।
আক্রান্তের হার কমে বাড়ছে সুস্থতার হার প্রতিদিনই। কমতে শুরু করেছে প্রাণহানির সংখ্যাও। মালয়েশিয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়াী, শনিবার দেশটিতে আরও নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৮৪ জন, এবং মৃত্যু হয় ০১ জনের, সুস্থ হয়েছেন ৯৫ জন লোক।
এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৩৮৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেন ৮৯ জন এবং এ পর্যন্ত সুস্থ বাড়ি ফিরে গেছেন ৩১৯৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী।
এদিকে, দেশটিতে প্রবাসীদের মধ্যে ৬৩ বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের মোট ৬০১ অভিবাসী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য মাঠে নেমেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ডা. নূর হিশাম আব্দুলালাহ।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক ডা. নূর হিশাম আব্দুলালাহ বলেন, আমরা সিঙ্গাপুরের মতো অভিবাসীদের বৃহৎ আকারে কোভিড -১৯ এর পরীক্ষা করছি। এ ছাড়া ক্লাস্টার গ্রুপের উপর ভিত্তি সংক্রমিত হওয়া হটস্পটগুলতে মন্ত্রণালয় স্ক্রিনিংও করছে।
ডা. নুর হিশাম আব্দুল্লাহ বলেন, জেলাভিত্তিক স্বাস্থ্য অফিসগুলো কার্যকরভাবে বিদেশি শ্রমিকদের বিভিন্ন গ্রুপকে সক্রিয়ভাবে টেস্ট করে আসছে কারণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ধারণা করছে, মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিকদের বড় একটি অংশ রয়েছে তাদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি দেশের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি বহন করে।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতেই বিদেশি শ্রমিকদের ফোকাস করা হচ্ছে। জেলাভিত্তিক স্বাস্থ্য অফিসগুলোর মাধ্যমে হেলথ স্ক্রিনিং টেস্ট কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে এই পর্যন্ত যতদূর বলা যায় যে, আমরা এখনো কোনো বড় গ্রুপ বা ক্লাস্টার আক্রান্ত হতে দেখছি না। এটি একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া যা অব্যাহত রেখেছে স্বাস্থ্য অফিসগুলো।
এমন দুটি পুরোনো গ্রুপ আছে মূলত তাদেরকে খুঁজছি। কারণ সিঙ্গাপুরে বিদেশিকর্মীরা যে অস্বাভাবিক হারে আক্রান্ত হচ্ছে তা আমরা সবাই জানি এবং এটা কিভাবে ঘটেছে সেটাও অজানা নয়। সুতরাং আমরা আমাদের দেশে এমন কার্যক্রম পরিচালনা করবো যেন পুরোনো আক্রান্ত বিদেশি শ্রমিকদের মাধ্যমে অন্যদের সংক্রমণ না করে।
আমরা জনকল্যাণ বিভাগের সাথে কাজ করে যাচ্ছি যে কিভাবে পুরোনো লোকদের চিহ্নিত করা যায় এবং বিদেশি শ্রমিকদের ভিড়যুক্ত এলাকাগুলোতে সঠিক পর্যবেক্ষণ ও তালিকা করে পর্যায়ক্রমে দ্রুত পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ডা. নূর হিশাম দুঃখ প্রকাশ বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সক্রিয়ভাবে বিদেশি কর্মীদের হেলথ স্ক্রিনিং টেস্ট কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু অনেক বিদেশিকর্মীরা পরীক্ষার জন্য এগিয়ে আসছে না এতে সবাইকে পরীক্ষা করা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় মালয়েশিয়ার বিভিন্ন বেসরকারি দল ও সংস্থা যেমন মারসি মালয়েশিয়া এবং ইউনাইটেড ন্যাশনস ফর হাইকমিশনার ফর রিফিউজি-এর সাথে বিদেশি কর্মীদের টেস্ট করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সেলায়াং পাইকারি বাজারে আমরা ৪৬৫ বিদেশিকর্মী পরীক্ষা করেছি এবং সেখানে ১৩ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে যা মোট পরীক্ষার ৩ শতাংশ ।
সুতরাং তাদেরকে পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি তাদের সাথে আচরণ ও তাদেরকে প্রয়োজনীয় সেবাগুলো আমরা আরও উন্নতভাবে দেয়ার পদক্ষেপ নিতে থাকব বলে জানান নুর হিশাম।
তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে সিঙ্গাপুরে অভিবাসীকর্মীদের হোস্টেলগুলো ঘনবসতি পূর্ণ হওয়ার ফলে আক্রান্তের পরিমাণে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে যা থেকে আমাদেরকে শিক্ষা গ্রহণ করে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে বলে তিনি জানান।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন