মহামারি করোনাভাইরাস থেকে বাচঁতে গৃহবন্দি জীবনের এই সময়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর প্রবণতা বেড়েছে লকডাউনের কারণে। বিশ্বের মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাত্রায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
বলা যায়, পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে মানুষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বেশিরভাগ মানুষকেই ঘরে সময় কাটাতে হচ্ছে। লকডাউনে রান্না, বাগান এবং পড়ার প্রবণতাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
যুক্তরাজ্যের বাসিন্দারা প্রযুক্তির মাধ্যমে সামাজিকতা রক্ষা, সিনেমা দেখা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানো কিংবা নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে ঘরে বন্দি জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন।
লকডাউনেরে মধ্যে যুক্তরাজ্যের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রযুক্তির মাধ্যমে সামাজিকতার হার বেড়েছে। যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের (ওএনএস) গবেষণায় ৪৮ শতাংশ ব্রিটেনবাসী বলেছেন যে, করোনাভাইরাসের কারণে তাদের ভালো থাকার ব্যাপারটি প্রভাবিত হয়েছে। সেটার সঙ্গে মানিয়ে নওয়ার জন্য তাদের অনেককেই নতুন কৌশল বেছে নিতে হয়েছে।
তারা বলছেন, এজন্য তারা বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে আটজনই বলেছেন, বাড়িতে থাকার সময় তারা টেলিফোনে, সামাজিক মাধ্যমে বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
তবে দাতব্য সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলছে, মানুষজন কাজ, সামাজিক জীবন এবং আনন্দের জন্য ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লেও অনেক দরিদ্র মানুষজন সেই সুবিধার বাইরে রয়েছে। লকডাউনের জীবনে সময় কাটানোর জন্য যুক্তরাজ্যের বাসিন্দাদের অনেকেই বাড়িতে বসে সিনেমা দেখার পথ বেছে নেন।
যুক্তরাজ্যবাসী দ্বিতীয় যে কাজটি বেশি করেছেন তা হলো মোবাইল, ল্যাপটপ বা টিভি পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকা। জরিপের ১০ জনের মধ্যে ছয় জনই বলেছেন তারা, তারা নানা স্ট্রিমিং সার্ভিস ব্যবহার করে এই সংকটের সময় চলচ্চিত্র বা সিরিয়াল দেখে সময় কাটাচ্ছেন।
লকডাউনে বেড়েছে বাড়ির ভেতরে ও বাইরে ব্যায়ামের প্রবণতা। জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অন্তত ৫২ শতাংশ বলেছেন যে, বাড়ির বাইরে ব্যায়াম করলে তা বর্তমান পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। তবে ৩১ শতাংশ মনে করেন, বাড়ির ভেতরে ব্যায়াম করাই যথেষ্ট উপকারী। পরিসংখ্যান বলছে- আগের তুলনায় মানুষের ব্যায়াম করার হার বেড়েছে।
ওএনএসের জরিপ অনুযায়ী, বিধিনিষেধ শুরুর পর থেকে সেটির সাথে মানিয়ে নিতে যুক্তরাজ্যের বাসিন্দাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে অন্তত চারজন রান্না, বাগান করা অথবা বই পড়াকে বেছে নিয়েছেন।
ভোক্তা গবেষণা সংস্থা কান্তারের তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটেনের মুদি দোকানগুলোয় ময়দা কেনার হার ৯২ শতাংশ বেড়েছে। আগের বছরের তুলনায় এই চার সপ্তাহে ২১ লাখ মানুষ বেশি ময়দা কিনেছেন। যুক্তরাজ্যের বাসিন্দাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে অন্তত চারজন রান্না, বাগান করা অথবা বইপড়াকে বেছে নিয়েছেন।
লকডাউনে মানুষ নতুন কিছু শেখার দিকে ঝুকেছে। যেহেতু লকডাউনের ফলে যুক্তরাজ্যবাসীর হাতে এখন অনেক সময়। তাই তাদের অন্তত এক তৃতীয়াংশই ইন্টারনেটে নানারকম প্রশিক্ষণ নিতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করছেন। প্রতি ১০ জনের অন্তত একজন এই সময়ে নতুন কিছু শিখছেন।
ইন্টারনেটে যেসব প্রশিক্ষণমূলক ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে নাচ, হাতের কাজ, ভাষা, কোডিং ইত্যাদি শেখানো হয়, সেখানে ভিজিটরের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এছাড়া খাবারের পেছনে বেশি খরচ ও স্থানীয়ভাবে কেনাকাটার প্রবণতাও বেড়েছে যুক্তরাজ্য বাসীর। বাড়ির জিনিসপত্রের পেছনেও বেশি খরচ করছেন অনেকে।
ওএনসের জরিপ অনুযায়ী, ৫৪ শতাংশ যুক্তরাজ্যবাসী তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এখন বেশি সময় কাটাচ্ছেন। শুধুমাত্র পরিবারই নয়, প্রতিবেশির সঙ্গেও হূদ্যতা বেড়েছে অনেকের।
ওএনএসের তথ্য অনুযায়ী, সামাজিক সম্প্রীতিও বেড়েছে। প্রতি ১০ জনের মধ্যে আটজনই মনে করেন, মহামারি শুরু হওয়ার আগের সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি মানুষ একে অপরকে সহায়তা করছে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত