করোনায় বিপর্যস্ত আমেরিকানকে বকেয়া ভাড়ার জন্যে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধে বাড়ির মালিকদের (ল্যান্ড লর্ড) কোন ধরনের ছাড় দেয়ার নির্দেশ না থাকায় গোটা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকিং সেক্টরে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। কারণ, ভাড়া আদায়ের ভিত্তিতেই অধিকাংশ মালিক ব্যাংক-ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে থাকেন।
উল্লেখ্য, পার্শ্ববর্তী কানাডায় করোনায় বিপর্যস্তদের বাসা ভাড়া সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিশোধ না করলেও কোন সমস্যা হবে না। কারণ, প্রশাসন থেকে এই সময়ের মধ্যে বাড়ির ঋণের কিস্তি পরিশোধে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এমনকি, অতিরিক্ত সুদের দায়ও চাপানো হবে না বাড়ির মালিকের ওপর।
মধ্যমার্চে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার সময়ই সমস্ত আমেরিকায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়। অত্যাবশ্যকীয় কাজ (ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, দমকল বাহিনী, রেস্টুরেন্ট-গ্রোসারি-ফার্ম্মেসী-হেল্থ কেয়ার) ছাড়া অন্য সকলেই বেকার হয়ে পড়েন। ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রত্যেককে ফেডারেল প্রশাসন সপ্তাহে ৬০০ ডলারের বেকার ভাতা ইস্যু করে। তা দিয়ে কোনমতে দিনাতিপাত করতে সক্ষম হলেও অনেকের পক্ষেই বাসার ভাড়া নিয়মিতভাবে পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। সেই বেকার ভাতার মেয়াদ জুলাইয়ে শেষ হয়ে গেছে। এখনও প্রায় দুই কোটি আমেরিকান বেকার রয়েছেন। তারা ভাতা হিসেবে নিজ নিজ স্টেট থেকে পাচ্ছেন সপ্তাহে সর্বোচ্চ আড়াই শত ডলার করে। এ অবস্থায় দৈনন্দিন বাজার খরচের অর্থই হাতে নেই, বাসা ভাড়া দেবেন কীভাবে। সে ব্যাপারটি অনুধাবনের পর হোয়াইট হাউজ থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত মঙ্গলবার সর্বশেষ এক নির্দেশে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বকেয়া ভাড়ার জন্যে কাউকে উচ্ছেদ না করতে বলেছেন।
এদিকে, বাড়ির মালিকদের দুর্দশার কথা ভেবে জাতীয়ভিত্তিক বেশ কটি হাউজিং গ্রুপ গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের কাছে। তারা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন, ভাড়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে যেসব মালিক ব্যাংকের মাসিক কিস্তি পরিশোধ করতেন, তাদের ব্যাপারে সরকার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ঋণ পরিশোধ না করতে পারলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কী দশা হবে সেটি ভেবে দেখার অবকাশ ছিল। হাউজিং গ্রুপের পক্ষ থেকে লেখা স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘ভাড়া প্রদানের জন্যে সরকারের সহায়তার ব্যবস্থা না থাকায় রিয়েল এস্টেট সেক্টরে কঠিন এক সংকট দেখা দেবে। যার পরিণতি ভোগ করতে হবে সকলকেই।’ ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব রিয়েল্টরস, দ্য ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব হোমবিল্ডার্স এবং দ্য মর্টগেজ ব্যাঙ্কার্স এসোসিয়েশনের নেতারা ঐ স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন। ‘যাদের স্বার্থে বকেয়া ভাড়া ডিসেম্বর পর্যন্ত না প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, প্রকারান্তরে জানুয়ারিতে তারাই বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সে সময় একত্রে ৮/৯ মাসের ভাড়া দেবেন কীভাবে? আর এর জের পড়বে দুয়েকটি বাড়ির মালিকের ওপর। সে সময় ব্যাংকের জমানো কিস্তির অর্থ একত্রে তারা দিতে না পারলে বাড়িগুলো নিলামে উঠবে’-মন্তব্য করা হয়েছে ঐ স্মারকলিপিতে।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, গত মার্চে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের কেয়ারস এ্যাক্ট পাশ হয় কংগ্রেসে। সেখানে ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে মর্টগেজ প্রদানের নিশ্চয়তা রয়েছে এমন ভবনের ভাড়াটের জন্যে ৪ মাসের বকেয়া প্রদানের কথা রয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ গত মঙ্গলবারের নির্দেশে সারা আমেরিকার ৪০ মিলিয়ন তথা ৪ কোটি ভাড়াটের প্রসঙ্গ রয়েছে, যার ৮০% এরও অধিক ঐসব ভবনে থাকেন না। ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়িতে তারা ভাড়ায় থাকেন।
স্বল্প পরিমাণের ভাড়া পান এমন মালিকের পক্ষাবলম্বনকারিরা কংগ্রেসের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বকেয়া ভাড়া পরিশোধের উপযোগী অর্থ বরাদ্দ করার জন্যে। এ ধরনের একটি বিধি জারির পক্ষে রয়েছেন টাম্পের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুনিচিন। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদেও ১৫ মে ডেমক্র্যাটরা ৩.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি বিল পাশ করেছেন, সেখানেও ১০০ বিলিয়ন ডলারের বরাদ্দ রয়েছে ভাড়া প্রদানে অক্ষমদের জন্যে। সেই বিলের পরিপূরক কোন বিল রিপাবলিকানরা সিনেটে পাশ করেনি। এ নিয়ে রিপাবলিকানদের সাথে ডেমক্র্যাটদের দর-কষাকষির বৈঠক পুনরায় চলতি সপ্তাহে শুরু হতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সে আশায় বাড়ির মালিকেরা বুধ বেধে রয়েছেন।
অপরদিকে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো করোনায় বিপর্যস্তদের বাসা ভাড়া প্রদানে সহায়তার ব্যবস্থা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করেছেন গত শনিবার এক নির্দেশে। ‘দ্য কানাডা ইমার্জেন্সি কমার্শিয়াল রেন্ট এ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম’র পরিধি তৃতীয়বারের মত বাড়ানো হলো। এটি অন্তর্বতিকালিন একটি ব্যবস্থা হলেও বেকার আমেরিকানদের মধ্যে স্বস্তি এনেছে বলে জানা গেছে। কানাডার অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে না চাইলেও ওন্টারিও প্রিমিয়ার ডোগ ফোর্ড’র মুখপাত্র ইভানা ইয়েলিস স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন যে, তারা অসহায় ভাড়াটেদের অর্থ সহায়তা প্রদানের লক্ষে ফেডারেল প্রশাসনের সাথে কাজ শুরু করেছেন। স্মরণ করা যেতে, করোনার প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে গত এপ্রিলেই প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বাড়ির মালিকের জন্যে বিশেষ একটি পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন। তাদের ভাড়াটেরা ভাড়া দিতে না পারলে তার পরিবর্তে তারা ব্যাংক থেকে এই অর্থ সংগ্রহ করতে পারছেন বিশেষ একটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করে। সেই কর্মসূচির মেয়াদ শেষ হয় গত জুনে। কিন্তু এখনও অনেক মানুষ করোনায় আক্রান্ত কিংবা কাজ ফিরে না পাওয়ায় বাসা ভাড়া দিতে সক্ষম হচ্ছেন না।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন