সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

মধুর চেয়েও তেল মিষ্টি

ইকবাল খন্দকার

মধুর চেয়েও তেল মিষ্টি

তেল। বলা হচ্ছে তৈলাক্ত কথা বা যাকে সহজে বলা হয় তেলমারা। এই তেল বড়ই আজব এক জিনিসের নাম। বন্দুকের গুলি মিস হতে পারে কিন্তু তেল কখনো মিস হবে না। যদি সেটা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে জানেন। সঠিকভাবে প্রয়োগের কায়দা-কানুন না জানার কারণে আপনার প্রয়োগকৃত তেলটা মিস হয়ে গেল, আপনি ফায়দা হাসিল করতে পারলেন না- এটা তো আর তেলের দোষ না। এটা হলো আপনার দোষ। আপনার ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠা অত্যাবশ্যক। নইলে জীবনে উন্নতির মুখ দেখা সম্ভব হবে না।

আমার এক দুলাভাই বললেন, পাত্রী দেখার সময় আমরা পাত্রীকে নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার চেষ্টা করি। অবশ্য বেশিরভাগ পরীক্ষাই হয় মৌখিক। যেমন জিজ্ঞাসা করা হয় সে রান্না করতে পারে কিনা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কোনোটিতে দক্ষ কিনা ইত্যাদি। আমি মনে করি শুধু পাত্রীকে নয়, এখন থেকে পাত্রকেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত। কারণ পাত্র ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে উন্নতি কতটা হতে পারে সেটা যাচাই করা দরকার। কর্মক্ষেত্রে মিষ্টি কথায় ডুবিয়ে চলতে পারলে উন্নতি করাটা ত্বরাান্বিত হয় আর কি। তাই পাত্রকে জিজ্ঞাসা করা উচিত সে তৈলাক্ত কথায় কতটা পটু। যদি উত্তর 'হ্যাঁ' হয়, তাহলে বিয়ে হবে, আর যদি 'না' হয় তাহলে ধরে নিতে হবে পাত্রের ভবিষ্যৎ অন্ধকার, সে জীবনেও উন্নতি করতে পারবে না। এর কাছে বিয়ে দেওয়াটা রিস্কের।

দুলাভাইয়ের কথা শুনে বিয়ে করতে ইচ্ছুক বেকার তরুণরা একটু দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতেই পারেন। কিন্তু না, দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। বরং আছে আশায় বুক বাঁধার সুযোগ। কারণ আমার এক বন্ধু খুব শিগগিরই একটা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। ঘটনা খুলেই বলি। দুদিন আগে হঠাৎ করেই আমার এই বন্ধুর ফোন। জিজ্ঞাসা করলাম, কেমন আছিস? সে আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই বলতে লাগল, ব্যবসার দারুণ একটা আইডিয়া এসেছে মাথায়। কোচিং সেন্টার চালু করব। আমি বললাম, কোচিংয়ের ব্যবসার আইডিয়া অবশ্যই দারুণ কোনো আইডিয়া নয়। কারণ বাজারে ভূরি ভূরি কোচিং সেন্টার আছে। এগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটা আবার বেশ নামও করে ফেলেছে। ব্যবসা করবি কী, এদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টেকা-ই তো কঠিন হয়ে যাবে। বন্ধু বিরক্ত হয়ে বলল, আরে তুই এত বেশি বুঝিস কেন? বেশি বোঝা ভালো না। আমি কী বলি, সেটা শোন। আমার কোচিং সেন্টারটা অন্যান্য কোচিংয়ের মতো হবে না। অন্যান্য কোচিংয়ে লেখাপড়া শেখানো হয়। কিন্তু আমার কোচিংয়ে শেখানো হবে তেল মারার নিয়ম-কানুন। আমরা গ্যারান্টি দেব, যদি ভর্তির এক মাসের মধ্যে বসের মন জয় করার মতো তেল মারা শিখতে না পারে, তাহলে পয়সা ফেরত। আমি এবার বলতে বাধ্য হলাম, চালিয়ে যা। জনকল্যাণমূলক মহতী উদ্যোগ। চালিয়ে যা। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে অথচ বাংলাদেশে কমছে না। কেন কমছে না, এর পেছনের কারণ কী থাকতে পারে সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে অনেকের প্রেশার বেড়ে গেছে। অথচ কিছুদিন আগেও তাদের প্রেশারের সমস্যা ছিল না। আরে ভাইরে এতে ভাবাভাবির তো কিছু নেই। বাংলাদেশে কেন তেলের দাম কমছে না, এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য অযথা উদাসী হওয়ার দরকার নেই। উত্তরের জন্য এই ধরনের একটা ঘটনাই যথেষ্ট। আমার এক প্রতিবেশী বিশাল ধনী। বাড়ি আছে, গাড়ি আছে, বড় পোস্টের চাকরি আছে। দুই দিন আগে তার সঙ্গে বাজারে দেখা। হাসিমুখে বললাম, বাড়িতে এত চাকর-বাকর থাকতেও নিজে বাজার করতে এলেন যে? ভদ্রলোক বলল, সব জিনিস তো আর চাকর-বাকরকে দিয়ে কেনানো যায় না। কিছু কিছু জিনিস কেনার সময় নিজেকেই আসতে হয়। আমি বললাম, তা কী কিনতে এসেছেন জানতে পারি? ভদ্রলোক এবার এমন একটা জিনিসের নাম বললেন, আমি খুব অবাক হলাম। কারণ, যার গাড়ি আছে, তার এই জিনিস প্রয়োজন হওয়ার কথা নয়। এই জিনিস লাগে যারা মোটরবাইক চালায় তাদের। আমি বললাম, ভাই কি রেইনকোট কিনতে এসেছেন? কিন্তু আপনার তো গাড়ি আছে, বৃষ্টি ধরবে কীভাবে? ভদ্রলোক বললেন, একটা বড়সড় চাকরি পেয়েছি। ইতিমধ্যে সবাই যেভাবে তৈলাক্ত কথায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তা থেকে বাঁচতে রেইনকোটের বিকল্প নেই।

 

সর্বশেষ খবর