সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

মজনুর ভ্যালেন্টাইন টেনশন

রাফিউজ্জামান সিফাত

মজনুর ভ্যালেন্টাইন টেনশন

ভ্যালেন্টাইন ডে মানে ভালোবাসা দিবস নিয়ে মজনু বিশাল পরিকল্পনা এঁটেছে। এবার সে তার প্রেমিকাকে এমন অভিনব উপায়ে সারপ্রাইজ দিতে চায় যা আগে কেউ কখনো দেয়নি। কিন্তু সেটা কী? মজনু নিজেও জানে না। সে ভাবে। মনোযোগ দিয়ে সারা দিন ভাবে। রাতে মজনুর ঘুম আসে না। মশারির ভিতর মশা ঢুকিয়ে সারা রাত মশা দেখে আর ভাবে। তবুও মাথা খেলে না। খাবার টেবিলে ধোঁয়া উঠা গরম গরম বিরিয়ানির প্লেট দেখেও মজনুর ক্ষুধা জাগে না। প্লেট দূরে সরিয়ে গালে হাত দিয়ে উদাস নয়নে বসে থাকে। একবার তার মনে হয় এক ট্রাক গোলাপ নিয়ে প্রেমিকার বাড়ির সামনের রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসবে। বিকালে ট্রাক স্ট্যান্ডে গিয়ে দিন চুক্তিতে ট্রাক ভাড়ার দাম শুনে সে চুপচাপ ফিরে আসে। মজনুর টাকা খরচের ইচ্ছে নেই। সে চাইছে বিনাখরচে সেরা সারপ্রাইজ। কিন্তু দাম ছাড়া উপহার পাওয়া মুশকিল। মজনুর মাথা গরম থাকে। সারা দিন সে চুল টানে আর ভাবে। চিন্তাগ্রস্ত মজনুকে দেখে মজনুর মা মনে করে ছেলের সামনে পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে। তিনি মজনুর মাথা ঠা-া করার তেল লাগিয়ে দেন। তাতেও মজনুর মাথা ঠা-া হয় না। উল্টা তার মাথায় আসে দুনিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ প্রেমপত্র লেখার পরিকল্পনা। সবচেয়ে বড় প্রেমপত্র কয় পাতার হতে পারে মজনু আন্দাজ করতে পারে না। দশ, বিশ, নাকি একশো পাতা? মজনু লিখতে বসে। একপাতার অর্ধেক লিখেই তার হাত ব্যথা করে। মজনু সেরা সারপ্রাইজ দিতে চায় কিন্তু কষ্ট করতে চায় না। প্রেমপত্র লেখা মারাত্মক কষ্টের কাজ। টেবিল ছেড়ে মজনু টিভি দেখতে বসে। কিন্তু আগ্রহ পায় না। খবরে নদীর সংবাদ দেখে তার মনে হয় সাঁতরে এক মাথা থেকে আরেক মাথায় নদী পার হবে। সমস্যা হচ্ছে, মজনু সাঁতার জানে না। তারচেয়েও বড় কথা শীতের মধ্যে সাঁতরানো কঠিন কাজ। এভাবে মজনু রাস্তায় রাস্তায় হাঁটে আর ভাবে। ভেবেও কূলকিনারা পায় না। এক সময় তার মাথায় আসে প্রেমিকার বাড়ির সামনে টাঙানো বিলবোর্ডের উপরে উঠে বসে থাকার পরিকল্পনা। পরক্ষণেই তার মনে হয় উপরে উঠবেই যখন বিলবোর্ডে কেন, প্রেমিকার জন্য সে সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ে চড়বে। অ্যাডভেঞ্চার প্রেমিক হিসেবে এতে দেশে-বিদেশে মজনুর নামডাক হবে। কিন্তু তখনই মজনুর মনে পড়ে তাদের দোতলা বাসায় সে কখনো লিফট ছাড়া উপরে উঠেনি সেখানে কীভাবে এতো উঁচু পাহাড় সে বাইবে! সুতরাং এই পরিকল্পনাও বাদ। একের পর এক পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় মজনু মন ভেঙে যায় তখনই সে পকেট থেকে মোবাইল বের করে বিলকিসকে পাঠানো মেসেজ চেক করে। মজনু তার ক্রাশ বিলকিসকে ‘হাই’ লিখে মেসেজ পাঠিয়েছিল। চার বছরেও বিলকিস সেই মেসেজ সিন করেনি। মজনুর ঠোঁটের কোনে হাসি ফোটে। ভাগ্যিস বিলকিস প্রতিউত্তর দেয়নি। মেসেজের প্রতিউত্তর দিলেই মজনুর সঙ্গে বিলকিসের প্রেমটা হয়ে যেত আর এই বছরেই মজনুকে দুনিয়ার সবচেয়ে অভিনব সারপ্রাইজটা তার বিলকিসকে দিতে হতো! যেহেতু মেসেজের রিপ্লাই দেয়নি, প্রেমও হয়নি। আরও একটা বছর মজনুর হাতে পাওয়া গেল! মজনু নিজের ভাগ্যকে মনে মনে ধন্যবাদ জানায়। তার প্রচ- ক্ষুধা পেয়েছে। আজ বাইরে বেরুনোর আগে বিরিয়ানির বাটিটা সে ফ্রিজে দেখে এসেছিল। সেটা মনে পড়তেই মজনু জোর কদমে হাঁটা লাগায়।

সর্বশেষ খবর