সোমবার, ২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

দেলু মিয়ার কমিশন

আফরীন

দেলু মিয়ার কমিশন

দেলু মিয়াকে কোনোভাবেই কাজে লাগানো যাচ্ছে না। আবার কাজ না থাকলে বকবক করে মাথা ধরিয়ে ফেলে। চা বানাতে গিয়ে রান্নাঘরের যা অবস্থা করেছে গোছাতে লেগেছে তিন ঘণ্টা। সকালে ভাবলাম বাজারে পাঠাই। দেখি বাজারটা করতে পারে কি না। টুকটাক বাজার করতে পারলে আমার অর্ধেক টেনশন কমে যায়। ছোটখাটো কিছু জিনিস লাগবে। ডাকলাম দেলু মিয়াকে। ডাকার সঙ্গে সঙ্গে হাজির। এখন পর্যন্ত এই একটা গুণ পাওয়া গেছে। একটা কাগজে লিখে দিলাম কি কি লাগবে। হিসাব করে টাকা দিলাম। টাকা হাতে পেয়ে বলল, ‘আপা, আমি সামান্য কিছু কমিশন নিমু। এই ধরেন পাঁচ টেকা, দশ টেকা।’ আমার চোখ কপালে ওঠল! এই ছেলে কমিশনের কী বোঝে? ‘১০০ টাকার কেনাকাটায় ১০ টাকার কমিশন? কমিশন বানান করতে পারিস? কই শিখছিস এইসব?’ ‘কমিশন বইলা না নিলে তো বলবেন, চুরি করছি।’ ভাবলাম, ঠিকই তো। ‘আচ্ছা যা, বাজারটা করে নিয়ে আয়। সব বুঝে ঠিক করে আনতে পারলে তোর কমিশনও ঠিক থাকবে। ভুল করলে কিন্তু হবে না।’ মাথা নেড়ে, খুশিতে দাঁত বের করে দেলু মিয়া বের হলো। আমি কাজে মন দিলাম। কাজ করতে করতে কখন সময় চলে গেল বুঝতে পারিনি। দেড় ঘণ্টা হয়ে গেছে দেলু মিয়ার খবর নেই। তেজপাতা, টিস্যু আর দু-একটা দরকারি জিনিস। পাঁচ মিনিটের বেশি লাগার কথা না। বাসার নিচেই দোকান। এতক্ষণ লাগছে কেন? কিছু হয়ে যায়নি তো? ও তো এখানে নতুন। হারিয়ে যায়নি তো? গেলে কতদূর গেছে? ভারি বিপদ হলো! কেয়ারটেকার চাচাকে ফোন করলাম। বললাম আশপাশে একটু দেখতে। খোঁজখবর না পাওয়া গেলে আমাকে বের হতে হবে। থানায় জিডি করতে হবে। এই ছেলের আত্মীয়স্বজন এসে হাজির হবে। পুলিশ ঝামেলা করবে। মিডিয়া নিউজ করে ফেলবে। সবাই ফোন করে জ্বালাতে থাকবে। ওফ্। আর ভাবতে পারছি না। মাকে ফোন করলাম। দুই মিনিটের মাথায় শুনি বেল বাজছে। দরজা খুলে দেখি দেলু মিয়ার কানটা ধরে কেয়ারটেকার চাচা দাঁড়িয়ে। যাক, হারিয়ে যায়নি। ‘এই লন আফা। বেশিদূর যাওন লাগে নাই। বজলুর দোকানের আশপাশে ঘুরঘুর করতেছিল।’ চাচাকে ধন্যবাদ দিয়ে দেলু মিয়াকে ঘরে ঢোকালাম। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ও হারিয়ে গেলে কি কি বিপদ ঘটত সে সম্পর্কে জ্ঞান দিয়ে ১০ মিনিট ঝাড়লাম। এরপর জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী করছিলি এতক্ষণ?’ ‘আপা লিস্টির কাগজটা হারায়া গেছিল।’ ‘তুই এক-দেড় ঘণ্টা ধরে লিস্ট খুঁজেছিস?’ ও মাথা নাড়ল। ‘তোকে তো আমি মুখেও বলে দিয়েছি।’ ‘৫টার মইধ্যে একটা আইটেম ভুইলা গেছি।’ ‘যা মনে আছে তাই নিয়ে আসতি। প্রয়োজনে আবার যেতে পারতি। দোকান তো কাছেই।’ ‘আপা, আপনে বলছেন সব ঠিকঠাক মতো আনতে পারলে কমিশন। এক আইটেম কম হইলে তো আমার কমিশনডা মিস হয়া যাইতো। এই জন্য খুঁজতাছিলাম। লিস্টিটা পাইলেই কমিশন। ফুড়ুত কইরা উইড়া কই যে গেল কাগজটা?’ তাই বলে দেড় ঘণ্টা! কী বলে বোঝাব একে। গালে হাত দিয়ে বসে রইলাম। দেলু মিন মিন করে বলল, ‘আপা, এখন যদি যাইয়া ঠিক কইরা সব নিয়া আসি তাইলে কি কমিশনডা...।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর