ইদানীং দেলু মিয়ার মন মেজাজ বেশ ফুরফুরে। ধমক দিলেও তার গায়ে লাগছে না। মাঝে মাঝে গুনগুন করে গান গায়। খেয়াল করলাম কার্টুনের চ্যানেল বাদ দিয়ে সে এখন গানের চ্যানেল দেখে। গানের রিয়্যালিটি শো, গান শেখার অনুষ্ঠান এসব। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কিরে, ঘটনা কী তোর? গায়ক হবি নাকি?’ দেলু মিয়া মনে হলো একটু লজ্জা পেল। মাথা নিচু করে বলল, ‘দূর আপায় যে কি কন?’ ‘তবে কি হবে, শুনি? পড়াশোনা, কাজকর্ম সব লাটে তুলে খুব গান শোনা হচ্ছে।’ ‘পইড়া আর কি হইবো আপা। গানডা শিখ্যা ফালাইতে পারলে এক লাখ টেকা পাওয়া যাইত।’ তার কথা শুনে যা বুঝলাম, কোনো রিয়্যালিটি শোতে দেখিয়েছে ছোট এক পিচ্চি গান গেয়ে বিজয়ী হয়ে পুরস্কার হিসেবে এক লাখ টাকা পেয়েছে। এখন তার মাথায় এক লাখ টাকার ভূত চেপেছে। সে ইন্টারভিউতে দেখেছে ওই পিচ্চি নাকি একা একা গাইতে গাইতেই গান শিখে ফেলেছে এবং দেলুর ধারণা সেও একা একা চেষ্টা করলে ওই পিচ্চির চেয়ে ভালো গাইতে পারবে। আমি বুঝালাম গান হলো সাধনার বিষয়। পড়ালেখার পাশাপাশিও গান শেখা যায়। কয়েক দিন এসব নিয়ে আর মাথা ঘামালাম না। অফিস-অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত দিন পার করছি। এর মধ্যে একদিন শুনলাম দোতলার ভাবীর মেয়ের গানের শিক্ষক এলে দেলু মিয়া সেখানে গিয়ে বসে থাকে। বললাম, বিরক্ত করে নাতো? অসুবিধা হলে পাঠিয়ে দেবেন। ভাবী জানালেন অসুবিধা হয় না। চুপচাপই থাকে। দিন পনেরো পরে পাড়ার কিছু ছেলেমেয়ে এলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে বলে চাঁদা নিতে। জানতে চাইলাম কী কী হবে? বলল, গান, নাচ, আবৃত্তি, বিতর্ক এসব। গানের কথা শুনে দেলু মিয়া লাফিয়ে উঠল। সে অনুষ্ঠানে গান গাইবে। ছেলেমেয়েগুলোও আপত্তি করল না। নাম টুকে নিয়ে চলে গেল। পরের এক সপ্তাহ দেলু মিয়ার গুনগুন বেড়ে গেল কয়েকগুণ। আমি কাজ নিয়ে ব্যস্ত এসব দেখার সময় নেই। এক সপ্তাহ পরে এক ছুটির দিন বিকালে ওদের প্রোগ্রাম। নতুন জামা-কাপড় পরে ফুলবাবু সেজে দেলু মিয়া গেল গান গাইতে। ছেলেমেয়েগুলো আমাকেও থাকার জন্য বলেছিল খুব করে। কিন্তু সারা সপ্তাহের কাজের ধকল সামলে একটা দিন আরাম করার জন্যই মন বেশি টানছিল। একটা জম্পেশ ঘুম দিতে পারলে বেশ লাগবে। দেলু চলে যাওয়ার পর আরাম করে বিছানায় গিয়ে শুলাম। বই পড়তে পড়তে চোখ বুজে গিয়েছে। একটা স্বপ্নও দেখতে শুরু করলাম। ঘণ্টাখানেক হয়েছে কি হয়নি, বেল বাজলো। এক-দুবার অধৈর্য হয়ে বেলটা বাজিয়ে যাচ্ছে কেউ। তাড়াতাড়ি গিয়ে খুললাম। দুটো মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখামাত্র হড়বড় করে যা বলল তা হলো, দেলু মিয়া স্টেজে উঠেছিল গান গাইতে। অর্ধেক গাওয়ার পরে আর সইতে না পেরে শ্রোতারা হাতে তালি দিয়ে ওকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। দেলু থামেনি। পুরোটা গেয়েছে। সেটাও সমস্যা নয়। সমস্যা হলো সে আরও তিনটে গান গাইবে। গান শেষ না করে মঞ্চ থেকে নামবে না। উপস্থাপক ওকে জোর করে নামাতে গেলে সে মাইক আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকছে। কোনোভাবেই তাকে স্টেজ থেকে নামানো যাচ্ছে না। অনুষ্ঠানে গোলমাল শুরু হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে ওরা আমাকে ডাকতে এসেছে। আমি গিয়ে বহু কষ্টে গান থামিয়ে ওকে নামিয়ে আনলাম। তবে আসার আগে খানিকটা ভিডিও করে এনেছিলাম। ও যখন বলার চেষ্টা করছিল যে খুব ভালো গাইছিল তখন তাকে ওটা প্লে করে শোনালাম। এরপর আর দেখতে হলো না। দেলু মিয়ার সংগীত সাধনার ওইখানেই ইতি।
শিরোনাম
- পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মিলন কারাগারে
- রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
- নির্বাচনের আগেই হাসিনাকে দেশে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দাবি সারজিসের
- কলাপাড়ায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ৫ জন হাসপাতালে
- দিনাজপুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবারের মাঝে উপকরণ বিতরণ
- মুন্সীগঞ্জে পদোন্নতির দাবিতে প্রভাষকদের ‘নো প্রমোশন, নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচি
- এ রায় প্রতিশোধ নয়, ন্যায়বিচারের প্রতিজ্ঞা: চিফ প্রসিকিউটর
- ১৬ কোটি টাকার হাসপাতাল চার বছরেও চালু হয়নি
- আমি আসলে খুব কষ্ট পাচ্ছি : শেখ হাসিনার আইনজীবী
- বাংলাদেশ প্রতিদিনের খবরে সেই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু
- শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের সব সম্পদ বাজেয়াপ্তের নির্দেশ
- ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ডিএমপির ২০৮৮ মামলা
- শাবিপ্রবিতে স্টুডেন্ট রাইটস ফোরামের ফ্রি হেল্থ ক্যাম্প
- আজ বাংলাদেশের মাটিতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার শ্রেষ্ঠ ঘটনা ঘটেছে : আইন উপদেষ্টা
- শহীদরা ন্যায়বিচার পেয়েছেন: অ্যাটর্নি জেনারেল
- শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড
- অস্কার গ্রহণ করলেন টম ক্রুজ
- শেখ হাসিনাসহ তিনজনের অপরাধ প্রমাণিত
- রাজস্থানের কোচ হিসেবে ফিরলেন কিংবদন্তি সাঙ্গাকারা
- ৬ জুলাই যোদ্ধাকে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড পাঠাচ্ছে সরকার
অবাক সংগীত সাধনা
আফরীন
প্রিন্ট ভার্সন
টপিক
সর্বশেষ খবর