আমার এক ছোটভাই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিল, গরিবের ‘ঘোরারোগ’ হয়েছে। আমি তার ইনবক্সে ঢুকে লিখলাম, এই সহজ বানানগুলোও যদি ঠিক করে লিখতে না পারিস, তাহলে তো সমস্যা। আরে বেআক্কেল, ‘ঘোরারোগ’ না। শব্দটা হচ্ছে ঘোড়ারোগ। ছোটভাই লিখল, ভাই, আপনার বয়স হয়েছে। এই জন্য উপদেশ দেওয়ার বদভ্যাস তৈরি হয়ে গেছে। আমি লিখলাম, এমন ছোটখাটো বানান ভুল করলে উপদেশ দেব না? ছোটভাই লিখল, আমি মোটেই বানান ভুল করিনি। ‘ঘোরারোগ’ই ঠিক আছে। আমাদের মতো গরিবদের ঘোরারোগই হয়েছে। আমাদের পয়সা কম। তাই কমদামি ইন্টারনেট ইউজ করি। আর কমদামি ইন্টারনেট ইউজ করলে যেটা হয়, খালি ঘোরে, খালি ঘোরে। এবার আপনিই বলেন, এটা ‘ঘোড়ারোগ’ নাকি ‘ঘোরারোগ’।
আমার এক বড়ভাই বললেন, বাসায় ইন্টারনেট নেওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে। মানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। নইলে খুব সমস্যা হচ্ছে।
সারা দিন কত চুলকানো যায়! চুলকানো জিনিসটা খুবই অস্বস্তিকর। বাসায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নিলে আশা করছি এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। আমি বললাম, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কীভাবে আপনাকে চুলকানি থেকে মুক্তি দেবে, ঠিক বোঝা গেল না। আপনার চুলকানি হয়েছে, ইন্টারনেটে ঢুকে গুগলে সার্চ দিয়ে ভালো চুলকানির মলমের নাম খুঁজবেন, বিষয়টা কী এমন? বড়ভাই তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন, আরে গাধা, বিষয়টা এমন হলে ব্রডব্যান্ডের কথা বলতাম না। গুগলে ঢোকা যায় প্যাকজ ইন্টারনেট দিয়েও। বড়ভাইয়ের যুক্তি শুনে মনে হলো, সত্যিই আমি গাধা। তাই তাকে অনুরোধ করলাম বিষয়টা বুঝিয়ে বলার জন্য। বড়ভাই বললেন, বুঝিয়ে বলার কিছু নাই রে বেটা! ব্রডব্যান্ড নিলে ফ্রি তার পাওয়া যায়। আর এই তারে লুঙ্গি শুকাতে দেওয়া যায়। পাশের বাসার একজনকে সবসময়ই ইন্টারনেটের তারে লুঙ্গি শুকাতে দেখি তো! কিন্তু আমার বাসায় ব্রডব্যান্ডও নেই, লুঙ্গি শুকানোর মতো তারও নেই। এদিকে বাড়িওয়ালা নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে ছাদে লুঙ্গি শুকাতে দেওয়া যাবে না। ফলে আমার লুঙ্গি ঠিকমতো শুকাচ্ছে না। আধভেজা লুঙ্গি পরতে গিয়ে সারা দিনই চুলকানির ওপর আছি। আশা করি, আমার সমস্যার গভীরতাটা ঠাওর করতে পেরেছিস।
আমার এক বন্ধু বলল, যা বুঝলাম, একবেলা ইন্টারনেট না থাকলে আমার মতো গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের গ্যাস্ট্রিক বাড়তে বাড়তে যা-তা লেভেলে চলে যাবে। আমি তাজ্জব হয়ে বললাম, এটা তুই কী বলছিস? ইন্টারনেটের সঙ্গে গ্যাস্ট্রিকের কী সম্পর্ক? বন্ধু বললো, ঘটনা শুনলে তুই নিজেই বুঝতে পারবি কী সম্পর্ক। এই জন্য ঘটনাটা আগে শোন। আমি বাসায় থাকলেও আমার বউ আমাকে সাধারণত খেতে আসার জন্য ডাকে না। সে করে কী, ফেসবুকের ইনবক্সে ঢুকে লেখে, ‘খেতে আসো’। কিন্তু গতকাল কোনো মেসেজ পাচ্ছিলাম না। এদিকে দুপুরে খাওয়ার সময় পার হয়ে বিকেল হয়ে গেছে। আমার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা শুরু হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত অতিষ্ঠ হয়ে বসা থেকে উঠে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কী ব্যাপার, আজকে ইনবক্সে ‘খেতে আসো’ লিখছ না যে? বউ বললো, কীভাবে লিখব? ফেসবুকেই তো ঢুকতে পারছি না। ইন্টারনেট নেই তো!
আমার এক প্রতিবেশী বললেন, আমি আসলে খুব স্মৃতিকাতর মানুষ। অতীতের স্মৃতিতে ডুবে থাকতে পছন্দ করি। এই জন্য ইন্টারনেটটা ব্যবহার করি। আসলে এইটা এমন এক জিনিস, আমার গ্রামের কথা মনে করিয়ে দেয়। কারণ, আমার কলেজটা গ্রামেই ছিল তো! আমি বললাম, তার মানে হচ্ছে, এই জিনিস আপনার কলেজ জীবনের কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু জনাব, আপনি যখন কলেজে পড়তেন, তখন তো দেশে ইন্টারনেটের বংশও ছিল না। তাহলে ইন্টারনেট কীভাবে আপনার কলেজ জীবনের কথা মনে করাবে? কেন মনে করাবে? প্রতিবেশী বললেন, কলেজ জীবনের কথা মনে করাবে এই জন্য, যেহেতু ‘ইন্টারনেট’-এর সঙ্গে ‘ইন্টার’ কথাটা জড়িত।
আমার এক ভাবি বললেন, সারা দিন আপনার ভাই মোবাইলে-কম্পিউটারে ইন্টারনেট ইউজ করে, আর কাজের চাপ বাড়ে আমার। আমি বললাম, কী রকম? ভাবি বললেন, আপনার ভাইয়ের কথা হচ্ছে, সারা দিন স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখের ক্ষতি হচ্ছে। আর এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রচুর মলামাছ খেতে হবে। এখন আপনিই বলেন, তিন বেলা মলামাছ বাছা, কাটাকুটি করা কি কম ঝামেলার?