সোমবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রেমিকার জন্য ভাইরাল

রাফিউজ্জামান সিফাত

প্রেমিকার জন্য ভাইরাল

হাবু এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন। তাকে ভাইরাল হতে হবে। জুলেখা বলেছে হাবু যদি ভাইরাল হতে পারে তবেই তাকে বিয়ে করতে রাজি হবে। আর কোনো শর্ত নেই। সে বলল, ‘কত্ত মেয়ের কত্ত ধরনের আবদার থাকে। বিয়েতে দামি শাড়ি, গয়না, দামি গাড়ি, বড় করে অনুষ্ঠান, নামি দামি ওয়েডিং ফটোগ্রাফি, হানিমুনে ফরেন ট্রিপ। আমার এসব কিছু দরকার নেই। আমি চাই তুমি ভাইরাল হবা। আমি ভাইরাল জামাই চাই।’ শুনে এ শীতেও হাবুর পিঠ বেয়ে চিকন ঘামের রেখা বয়ে গেল। শাড়ি গয়না টাকা পয়সা ম্যানেজ করা সম্ভব। কিন্তু ভাইরাল কীভাবে হতে হয় সে জানে না। সে রাত দিন ভাইরাল হওয়ার উপায় খুঁজতে লাগল। গুগলে ঘাঁটাঘাঁটি করল। এলাকার বড় ভাইদের জিজ্ঞেস করল। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বন্ধুকে মজনু মিয়া টি-স্টলে ডেকে জানতে চাইল, ‘ভাইরাল ক্যামনে হয়?’ সবাই দুই পাশে তীব্রবেগে মাথা নেড়ে জানাল, দরকারে বাঘের দুধ কোথায় পাওয়া যায় জানা সম্ভব কিন্তু ভাইরাল কীভাবে হতে হয় কেউ জানে না। কে কখন কীভাবে ভাইরাল হবে ঠিক-ঠিকানা নেই। এক বন্ধু পরামর্শ দিল, ‘তোর পক্ষে ভাইরাল হওয়া সম্ভব না, তুই জুলেখাকে ভুলে যা।’ কোনো উপায় না বলতে পারলেও তার বন্ধুরা শুধু চায়ের দোকানদার মজনু মিয়াকে চুপি চুপি, ‘আজকের বিল সব হাবু দিবে,’ বলে একে একে কেটে পড়ল। খালি দোকানে হাবু একাকী বসে রইল। তার চোখ লাল। চুল উসকোখুসকো। পকেট থেকে মোবাইল বের করে গ্যালারি ভর্তি জুলেখার ছবি দেখতে সে তৃতীয় দফা হাউমাউ করে কান্না শুরু করল। দোকানে যে-ই চা খেতে আসে হাবু তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। কেউ ভয়ে পালায়, কেউ ওকে সান্ত¡না দেয়। কিন্তু ভাইরাল হওয়ার উপায় কেউ বলতে পারে না। এভাবে সময় কেটে যায়। রাত গভীর হয়। মজনু মিয়া দোকান বন্ধ করে দেয়। প্রায় অচেতন হাবুকে ধাক্কা দিয়ে বলে, ‘ভাই উঠেন, বাড়ি যান। কাল আইসা আবার কাইন্দেন।’ হাবু উঠে দাঁড়ায়। তার চোখের পানিও শুকিয়ে কাঠ। আজকের মতো আর কান্না আসছে না। একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে বাড়ি ফেরে। কিছু না খেয়ে সে বিছানায় গড়ায়। অতিরিক্ত কাঁদলে শরীর ক্লান্ত লাগে। তখন ঘুম পায়। তার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। বিছানায় শোয়া মাত্র সে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। তার আর কিছু খেয়াল নেই। সকালে মোবাইলের শব্দে তার ঘুম ভাঙে। ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশে জুলেখার চিৎকার, ‘জান, তুমি এইটা কি করছো! তোমার ভিডিও তো হিট। হাজার হাজার লাইক, শত শত কমেন্ট। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় ভিডিও আড়াই মিলিয়ন ভিউ! ফেসবুকে সবাই পাগলের মতো তোমার ভিডিওটা শেয়ার করছে। জান, তুমি তো ভাইরাল হইয়া গেছ!’ হাবু কিছু বুঝতে পারছে না। একবার মনে হলো সে স্বপ্ন দেখছে। নিজের গালে কষে দুইটা চড় লাগানোর পর বুঝল, স্বপ্ন না, সত্যি সত্যি জুলেখা কল দিয়েছে। হাবু ভাইরাল হয়ে গেছে। কিন্তু কীভাবে হলো!  হাবু তাড়াতাড়ি ফেসবুকে ঢুকল। ফেসবুকজুড়ে একটাই ভিডিও। সেখানে দেখা যায় চায়ের দোকানে হাত-পা ছড়িয়ে বসে সে বিলাপ করছে, ‘ওরে জুলেখা, আমার জুলেখা রে, আমারে ছাইড়া যাইয়ো না গো...।’ ভিডিওর সঙ্গে লেখা, ‘বন্ধুরা, ভিডিওটি ভাইরাল করে হাবু ভাইয়ের বিয়ার সুযোগ করে দিন।’ ভিডিওটি ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছেন চা দোকানদার মজনু মিয়া।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর