সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

গাড়ি নড়ে না, নড়ে নারে...

ইকবাল খন্দকার

গাড়ি নড়ে না, নড়ে নারে...

আমার এক বড়ভাই বললেন, এই যে ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় জ্যাম, এতে সাধারণ মানুষের সমস্যা হচ্ছে জানি। তবে আমার কিন্তু বিরাট সুবিধা হচ্ছে। বাড়িওয়ালার সঙ্গে আগে যে খিটিরমিটিরটা হতো, এখন আর সেটা হয় না। আমি বিস্ময় প্রকাশ করলাম, বলেন কী আপনি! জ্যামের কারণে আপনার সুবিধা হচ্ছে? কিন্তু কীভাবে? বড় ভাই বললেন, আগে আমি আমার গাড়িটা ধুইতাম বাসার সামনে বা গ্যারেজে। এতে বাড়িওয়ালা নানারকম কথা শোনাতেন। তার পানি খরচ হয়ে যাচ্ছে, বাসার সামনে কাদা হয়ে যাচ্ছে, আরও কত কথা! কিন্তু আজকাল বাসার সামনে বা গ্যারেজে গাড়ি ধোয়ার প্রয়োজনই পড়ে না। কারণ, এখন জ্যামের কারণে রাস্তায় এত বেশি সময় অবস্থান করতে হয় যে, যখন ইচ্ছা তখন, যতক্ষণ ইচ্ছা ততক্ষণ গাড়ি ধোয়া যায়। মানে রাস্তায় দাঁড় করিয়েই আরকি। শুধু কায়দা করে আশপাশ থেকে পানিটা জোগাড় করতে হয়। এরচেয়ে বড় সুবিধা আর কী হতে পারে? আমার এক ছোটভাই বলল, আমার আব্বা একটা গাড়ি কিনেছেন। আব্বার গাড়ি মানেই তো আমার গাড়ি। তো কথা হচ্ছে, গাড়িটা নরমাল সাইজের। আমি আব্বাকে বলেছি, রাস্তার জ্যামের কথা বিবেচনা করে আপনার উচিত ছিল আরেকটু বড় সাইজের গাড়ি কেনা। ছোটভাইয়ের কথায় অবাক হয়ে বললাম, এটা কী ধরনের কথা? জ্যামের কথা চিন্তা করে তো ছোট সাইজের গাড়ি কেনা উচিত। বড় সাইজের গাড়ি কেন কিনবে? ছোটভাই বলল, বড় সাইজের গাড়ি কিনবে এই জন্য, যেহেতু জ্যামের কারণে এখন লম্বা সময় গাড়িতে অবস্থান করতে হয়। আর লম্বা সময় গাড়িতে অবস্থান করা মানে লম্বা একটা ঘুম দেওয়া। আর লম্বা ঘুমের জন্য কিন্তু পা লম্বা করা চাই। ছোট গাড়ি হলে পা লম্বা করা যায় না। গোল হয়ে ঘুমাতে হয়। আর গোল হয়ে ঘুমালে পায়ের রগে সমস্যা হয়। মানে ঘুম থেকে উঠে পা সোজা করতে গেলে এমন টান লাগে, মনে হয় ছিঁড়ে যাবে। বড় সাইজের গাড়ি কেনার পিছনে আরও যুক্তি আছে। না মানে ছোটখাটো একটা ডাইনিং টেবিল যদি ফেলা যায়, এই উদ্দেশ্যে আরকি। এত লম্বা সময় গাড়িতে থাকতে হয়, ডাইনিং টেবিলটা হলে আরামে খাওয়া-দাওয়াটা... আমি ছোট ভাইয়ের বাকি কথাগুলো আর শুনলাম না। শুনলাম না এই জন্য, কারণ আমার ফোন এসেছিল। আমি পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখি আমার এক দুলাভাই ফোন দিয়েছেন। রিসিভ করলাম। আর জানতে পারলাম তিনি জ্যামে আটকে আছেন। আমি বললাম, জ্যামে আটকে থাকা অবস্থায় ফোন দেওয়ার কারণ কী? কোনো সমস্যা না তো? দুলাভাই বললেন, সমস্যা তো বটেই। বিরাট সমস্যা। গাড়ির ড্রাইভার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি সবিস্ময়ে ঘটনার ব্যাখ্যা চাইলাম। দুলাভাই বললেন, জ্যামে গাড়ি আটকা পড়ার পর ড্রাইভার সিট থেকে নেমে বাইরে গেল। তারপর থেকে আর ব্যাটার খোঁজ নেই। মোবাইলে যে ফোন দেব, সেই উপায়ও নেই। কারণ সে মোবাইল গাড়িতে রেখে গেছে। আমি বললাম, চিন্তার কোনো কারণ নেই। অপেক্ষা করেন, জ্যাম ছোটারও সময় হোক, দেখবেন ঠিক চলে এসেছে। দুলাভাই ফোন রাখলেন। একটু পরেই আবার ফোন করলেন। বললেন, আরেকজনের নাম্বার থেকে ড্রাইভার এইমাত্র ফোন করল। জ্যাম ছুটতে দেরি হবে মনে করে সে নাকি হাঁটতে হাঁটতে এত দূরে চলে গিয়েছিল, এখন আর রাস্তা চিনতে পারছে না। অর্থাৎ হারিয়ে গেছে। এখন কী করি? আমি বললাম, কী আর করবেন! গাড়ি থেকে নেমে পত্রিকা অফিসে যান। ‘হারানো বিজ্ঞপ্তি দেন’। দুলাভাই বললেন, আজকে বিজ্ঞপ্তি দিলে তো ছাপা হবে আগামীকাল। আমি বললেন, এই জ্যামও আগামীকাল পর্যন্ত স্থায়ী হবে বলে আশা করছি। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, দিন যত যাচ্ছে, জ্যামও ততই বাড়ছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কী? আমি বললাম, উপায়টা একটু পরে বলি। এখন বলতে ভালো লাগছে না। জ্যামে আটকে আছি তো!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর