দক্ষিণ আফ্রিকার সাহিত্যিক ডেমন গ্যালগাট। এখন তার বয়স ৫৮ বছর। তার নবম উপন্যাস ‘দ্য প্রমিজ’ ২০২১ সালে বুকার পুরস্কার পেয়েছিল। গ্যালগাট ২০০৩ সালে ‘দ্য গুড ডক্টর’ ও ২০১০ সালে ‘ইন আ স্ট্রেঞ্জ রুম’-এর জন্যও বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ‘দ্য প্রমিজ’ উপন্যাস তাকে এনে দেয় বিশ্বখ্যাতি। পাঠকরা উপন্যাসটি আগ্রহ নিয়ে সংগ্রহ করে, পাঠ করে জানায় তাদের বিস্ময়। বর্ণবৈষম্যের শেষ সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি শ্বেতাঙ্গ কৃষক পরিবারের গল্প রয়েছে এখানে। গ্যালগাট তার ‘দ্য প্রমিজ’ উপন্যাসটি লেখার প্রাথমিক ধারণা পান এক বন্ধুর সঙ্গে আলাপের পর। বন্ধুটি গ্যালগাটের কাছে তার পরিবারের সদস্যদের দাফনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কথা বলেন।
বন্ধুর অভিজ্ঞতার কথা শুনেই তার মনে হয়, এখান থেকে একটা উপন্যাস দাঁড় করানো যেতে পারে। ‘দ্য প্রমিজ’ উপন্যাসের কাহিনি শুরু হয় ১৯৮৬ সালে। বইয়ে এক শ্বেতাঙ্গ কৃষক পরিবারের চার দশকের কাহিনির বর্ণনা রয়েছে। সেই পরিবারের নারীর মৃত্যুকালীন ইচ্ছা বা প্রতিশ্রুতি ছিল, তাদের সম্পত্তি থেকে একটা বাড়ি একটি কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে উপহার দিতে হবে। যে নারী সারা জীবন শ্বেতাঙ্গ পরিবারে কাজ করেছেন। কিন্তু মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করা নিয়ে সন্তানদের মধ্যে মতবিরোধ শুরু হলো। উপন্যাসের কাঠামোটি নতুন ধরনের, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের সঙ্গে বর্ণনাও পরিবর্তন হতে থাকে। বুকার পুরস্কারের বিচারকদের মতে, এটি একটি অপ্রচলিত স্টাইল, যা ২১ শতাব্দীতে উপন্যাসের প্রসারের কথাই মনে করিয়ে দেয়। এ উপন্যাসে গল্পের কথক একটা সিনেমা ক্যামেরার মতো আচরণ করতে পারেন। কাছে যেতে পারেন। সেখান থেকে হুট করে দূরে সরে যেতে পারেন। কোনো দৃশ্য বা কোনো বাক্যের মাঝখানেই এক চরিত্র থেকে আরেক চরিত্রে লাফ দিতে পারেন। কিংবা কোনো পার্শ্ব ঘটনার দিকে মনোযোগ দিতে পারেন যার সঙ্গে মূল গল্পের কোনো যোগ নেই। উপন্যাসটি বুকার পুরস্কারে ভূষিত করতে গিয়ে বিচারকরা বলেছিলেন, ‘কী করে একটা উপন্যাস আমাদের নতুনভাবে ভাবতে ও দেখতে শেখাতে পারে, (এটি) তার দর্শনীয় এক উদাহরণ।’ বুকার বিচারকদের প্রধান মায়া জেসানফ বলেন, ‘অসাধারণ গল্প ও থিম নিয়ে সাউথ আফ্রিকার গত ৪০ বছরের ইতিহাসের দারুণ মোড়কে লেখা এ উপন্যাস। এ বইয়ে ভাবনার খোরাকও প্রচুর। এতে গাঁথুনি ও সাহিত্যশৈলীর ওপর অসাধারণ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিবার পড়ার সময়ই নতুন একটা কিছু নিয়ে হাজির হচ্ছে বইটি।’