শিরোনাম
শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাংলা সাহিত্যে গোয়েন্দারা

বাংলা সাহিত্যে গোয়েন্দারা

জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে আসেন একজন, তিনি সত্যজিৎ রায়। তাঁর ‘ফেলুদা’ বাংলা সাহিত্যে গোয়েন্দা কাহিনির পুরো মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তাঁকেই বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের গোয়েন্দা সাহিত্যের সেরা লেখক মানা হয়...

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বা ইংরেজি সাহিত্যে ডিটেকটিভ বা গোয়েন্দার আগমন বেশ পুরনো হলেও বাংলা সাহিত্যে এর আগমন মূলত উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে। এর আগে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু অপরাধকাহিনি ও গোয়েন্দা গল্প লেখা হয়েছিল। কিন্তু গোয়েন্দা গল্পের যে অপার রহস্যের ভাণ্ডার তা উন্মোচিত হয় আরও পরে। বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্যের সূচনার প্রসঙ্গ এলেই অধিকাংশ মানুষ একটি বইয়ের কথা বলেন তা হলো- প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের ‘দারোগার দপ্তর’। বইটি ১৮৯২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। আর লেখক প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় নিজে পুলিশের ডিটেকটিভ বিভাগের কর্মচারী ছিলেন। ফলে এ-সংক্রান্ত বিষয়ের একটা স্বচ্ছ ধারণা তাঁর আগে থেকেই ছিল। মূলত সে ধারণার স্ফুরণ ঘটেছে তাঁর লেখায়। কিন্তু সাহিত্যমানের দিক থেকে তা অনেক পিছিয়ে ছিল। আর বাংলা সাহিত্যে প্রথম মৌলিক ডিটেকটিভ কাহিনির লেখক মানা হয় পাঁচকড়ি দেকে। পাঁচকড়ি দের দুই প্রধান ডিটেকটিভ অরিন্দম বসু ও দেবেন্দ্রবিজয় মিত্র ছিলেন আবার দাদাশ্বশুর ও নাতজামাই! তাঁর অনেক লেখা ভারতের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়েছিল। তবে উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে বাংলা গোয়েন্দা-গল্প খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৮৯৪ থেকে ১৮৯৮ সাল পর্যন্ত ডিটেকটিভ গল্পের সংকলন ‘গোয়েন্দা কাহিনী’ সাময়িকপত্রের মতো চারদিকে বিক্রি হতো। বলা হয়ে থাকে, এ কয় বছরেই গোয়েন্দা কাহিনির ৫ লাখেরও বেশি ফর্মা বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। গোয়েন্দা কাহিনির লেখকদের মধ্যে ছিলেন মণীন্দ্রনাথ বসু, শরৎচন্দ্র সরকার প্রমুখ। আর সবচেয়ে জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজ হিসেবে ১৯৩৯ সালে যাত্রা শুরু করে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ব্যোমকেশ’। ‘সত্যান্বেষী’ শীর্ষক বইটির ব্যাপক সাফল্য বাংলা সাহিত্যে গোয়েন্দা কাহিনির অবস্থানকে আরও সুসংহত করে তোলে। একে এক ব্যোমকেশ সিরিজের ৩৩টি কাহিনি প্রকাশিত হয় এবং সব কটিই আশাতীত জনপ্রিয়তা লাভ করে। বড়দের গোয়েন্দা কাহিনির লেখক হিসেবে নীহাররঞ্জন গুপ্তও দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তবে নীহাররঞ্জন কিশোরদের জন্যও লিখেছিলেন। কিশোরদের ক্রাইম থ্রিলার ‘মোহন সিরিজ’ লিখে শশধর দত্তের জনপ্রিয়তাও বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে তুঙ্গে ওঠে। তবে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে আসেন একজন, তিনি সত্যজিৎ রায়। তাঁর ‘ফেলুদা’ বাংলা সাহিত্যে গোয়েন্দা কাহিনির পুরো মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তাঁকেই বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের গোয়েন্দা সাহিত্যের সেরা লেখক মানা হয়। তিনিও লিখেছেন কিশোরদের জন্য, তবে বড়দের কাছেও এটি সমান জনপ্রিয়। এখনো ফেলুদা সিরিজের আবেদন কমেনি এতটুকু। এরপর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কাকাবাবু’ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ছোট-বড় সবার কাছেই। কাকাবাবুর বেশির ভাগ উপন্যাস প্রথমবার প্রকাশিত হয় পূজাবার্ষিকী আনন্দমেলা পত্রিকায় ১৯৭১ সালে। বাংলাদেশের পটভূমিতে সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বিদেশি কাহিনি অবলম্বনে গোয়েন্দা কাহিনিগুলোর যাত্রা শুরু হয়। কাজী আনোয়ার হোসেন, রকিব হাসান প্রমুখ লেখক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনপ্রিয় সিরিজ উপহার দেন। এর মধ্যে ‘মাসুদ রানা’ ও ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি।

সর্বশেষ খবর