শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বইমেলার প্রস্তুতি

মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, প্রকাশক, অন্বেষা প্রকাশন

বইমেলার প্রস্তুতি

কয়েক দিন বাদেই শুরু হবে অমর একুশে বইমেলা। বাংলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠেয় লেখক-পাঠকের মিলনমেলার এ শুভক্ষণটির জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন সবাই। মহামারি আর বৈশ্বিক অর্থনীতির দুর্দশালগ্নে আয়োজিত বইমেলা নিয়ে শঙ্কিত প্রকাশকরা। সে শঙ্কা আর বইমেলার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানাচ্ছেন অন্বেষা প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ আর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাতুড়ি-পেরেকের ঠুকঠাক আওয়াজ জানান দিচ্ছে- বইমেলা চলে এসেছে। ২০২০ সালে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে তছনছ হয়ে যায় একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বব্যবস্থা। ছন্দপতন ঘটে প্রাত্যহিক জীবনযাপনে। ব্যবসা-বাণিজ্য-অর্থনীতি-রাষ্ট্রনীতি-সমাজ-শিল্প-সংস্কৃতি এবং বিনোদন; এলোমেলো হয়ে গেছে সবই। বাংলার মানুষের প্রাণের বইমেলাও এর বাইরে ছিল না।

নতুন করে সেজেছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৩। হাতে মাত্র পাঁচ দিন। মেলা প্রাঙ্গণে স্টল, প্যাভিলিয়ন নির্মাণ কিংবা সাজসজ্জায় তুমুল ব্যস্ততা থাকে কারিগরদেরও। এই বইমেলাকে ঘিরে প্রকাশকদের ব্যস্ততাও বেশি থাকে। নতুন নতুন বই পাঠককে উপহার দেওয়ার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত থাকি। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। শিশুতোষ বই, কবিতা ও ছড়ার বই, গল্প এবং উপন্যাস, প্রবন্ধ, গবেষণা ইত্যাদি সবই থাকছে।

মহামারির থাবায় লণ্ডভণ্ড হয়েছিল পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে আয়োজিত বইমেলার সময়সূচি। তবে এ বছর সঠিক সময় আর সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে মাসব্যাপী আয়োজিত হতে যাচ্ছে বইমেলা। প্রকাশক হিসেবে আমাদের বিশ্বাস, এবার বইমেলায় পাঠকের সমাগম হবে। কিন্তু বইমেলায় আমরা কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। সেটা কেবল বইমেলায় নয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুর্দশার ছায়া বইমেলায়ও পড়েছে। ফলে কাগজের মূল্য এখন দ্বিগুণেরও বেশি। যেমন- গেল বইমেলায় কাগজের রিমের মূল্য ছিল ১ হাজার ৬০০ টাকা, সেই কাগজের মূল্য এবার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ আমরা যে বাজেট নিয়ে বইমেলার প্রস্তুতি নিয়েছি, তাতে প্রচুর ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর সে কারণেই এবারের বইমেলায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক বই প্রকাশে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। যেমন- আমরা যেসব বই পাঠকের সামনে আনি, তা কিন্তু কেবল মেলাতেই বিক্রি হয় না, দীর্ঘমেয়াদে সেসব বই বিক্রি করতে হয়। প্রকাশক হিসেবে সবারই আকাক্সক্ষা থাকে মুনাফা লাভের। এর বাইরে নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক খরচ চুকিয়ে লেখককে সামান্য সম্মানীও প্রদান করা সম্ভব হয়। কিন্তু এখন বৈশ্বিক অর্থনীতির যে হাল তাতে বইমেলায় পুঁজি নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে। তাই প্রকাশক হিসেবে আমাদের আশঙ্কা, এবার বইমেলায় বিক্রি কিছুটা কমে যেতে পারে।

বইমেলায় কিছু বই বিক্রি হয়, বাকি বইগুলো দীর্ঘমেয়াদে বিক্রি করা ছাড়া একজন প্রকাশকের উপায় থাকে না। এ ছাড়া বেশ কিছু সরকারি সংস্থা এসব বই সংগ্রহ করে থাকে। যাতে ঝুঁকির পরিমাণ কিছুটা হলেও হ্রাস পায়। তবে তা একেবারে সামান্যই। সার্বিক বিশ্লেষণে এবারের বইমেলার আয়োজন করতে গিয়ে একজন প্রকাশককে বেশ ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে। তাই পেপার মিল মালিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, যারা সৃজনশীল বই প্রকাশনায় জড়িত, তারা যেন কম খরচে ভালো মানের পেপার সংগ্রহ করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। এতে কেবল আমরাই নই, পাঠকও উপকৃত হবেন। সাশ্রয়ী মূল্যে বই কিনতে পারবেন।

বইমেলা আসলে প্রাণের মেলা। এই মেলায় প্রকাশক, লেখক ও পাঠক সবাই জড়িত। তাই পাঠকের কথা ভেবে মূল্য বৃদ্ধির বাজারে বইয়ের মূল্য পাঠকের সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি আমাদের প্রত্যাশা- পাঠক সমাবেশ হোক একুশে বইমেলায়।

পাশাপাশি বইমেলার স্টল বা প্যাভিলিয়নের ভাড়াও রয়েছে। বাংলা একাডেমি বরাবর স্টল ভাড়া হ্রাসের আবেদনও করা হয়েছিল; যা সম্ভব হয়নি বাংলা একাডেমির পক্ষে। এর সঙ্গে স্টল নির্মাণ ব্যয় বহন করতে হয় প্রকাশককে। ফলে চাইলেও বইয়ের মূল্য পাঠকদের সহনীয় রাখা সম্ভব হয় না। তবুও আমরা চেষ্টা করেছি সাশ্রয়ী মূল্যে বই বিতরণের। তবে সামনের দিনগুলোয় কাগজের মূল্য হ্রাস না পেলে বইমেলা এমনকি বই শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। কঠিন হয়ে পড়বে প্রকাশনা ব্যবসা ও প্রকাশকদের পথচলা।

সবশেষে বৈশ্বিক মহামারি, অর্থনীতির দুর্দশা আর নানা প্রতিবন্ধকতার পরও এবার বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমরা আশা করব, এই বইমেলায় পাঠক সমাগম হবে। পাঠক তার পছন্দের লেখকের বইটি সংগ্রহ করার মাধ্যমে আমাদের সহযোগিতা করবেন। পাঠকের সৃজনশীল জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে এবং তারা আমাদের সঙ্গে যে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন- তা আবারও প্রমাণ করে আমরা যেন সামনে এগিয়ে যেতে পারি, সে হাত বাড়িয়ে দেবেন এই আশা রাখছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর