শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
কুয়েট শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবন

পাটের তৈরি রেসিং কারে তরুণদের চমক

জামশেদ আলম রনি

পাটের তৈরি রেসিং কারে তরুণদের চমক

পাটের আঁশ দিয়ে রেসিং কার তৈরি করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ফর্মুলা কারের আদলে এই রেসিং কার তৈরি করতে টিম কিলোফ্লাইটের তিন বছর সময় লেগেছে। ‘কিলোফ্লাইট আলফা’ নামের রেসিং কারের বডিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরিবেশবান্ধব পাট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

এদিকে, ইতিমধ্যেই ফর্মুলা স্টুডেন্ট ইউকে প্রতিযোগিতার অনলাইন ইভেন্টে অংশ নিয়েছে ‘কিলোফ্লাইট আলফা’ গাড়িটি। এই প্রতিযোগিতার লাইভ ও অনলাইন দুটি ইভেন্টে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬৪টি দেশ অংশ নেয়। যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া ফেলেছে। তিন বছরের চেষ্টায় গাড়িটি তৈরি করে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছেন কুয়েট শিক্ষার্থীরা। কুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও কিলোফ্লাইটের ড্রাইভ ট্রেইন এক্সপার্ট অম্লান বিশ্বাস বলেন, গাড়িটি মূলত ফর্মুলা স্টুডেন্ট ইউকে টার্গেট করে বানানো। এই গাড়িটির বিশেষত্ব হলো- সম্পূর্ণ বডি জুট ফাইবার দিয়ে তৈরি করা। যা দেশের ঐতিহ্যকে ধরে রাখবে। এতে উন্নতমানের ইঞ্জিন, গিয়ার, ব্রেক, মিটার দেওয়া রয়েছে। চালকের জন্য রয়েছে সুরক্ষা ব্যবস্থা। গাড়িটি ঘণ্টায় ১৬২ কিলোমিটার বেগে চলতে পারবে।

তিনি বলেন, গাড়িটি তৈরির পর ফর্মুলা স্টুডেন্ট ইউকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম। বিশ্বের ৬৪টি দেশের মধ্যে আমরা ৩৩তম হয়েছি। এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে একমাত্র আমরাই অংশ নিয়েছি। এটা আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন। আগামী বছর চ্যাম্পিয়নশিপের টার্গেট করেই কাজ করছি।

কুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও কিলোফ্লাইটের টিম ম্যানেজার সাফায়েত সাইমুম বলেন, টিম কিলোফ্লাইট ২০১৮ সালে সৃষ্টি হয়েছে। শুরুর পর চলতি বছরের জুলাই মাসে গাড়িটি তৈরি সম্পন্ন হয়। এটি তৈরির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া।

কিলোফ্লাইট টিমের ক্যাপ্টেন এরফান ইসলাম বলেন, অটোমোবাইলে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে এবং দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার তৈরির জন্য এ উদ্যোগ। কুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী ও নিজেদের অর্থায়নে এ রেসিং কারটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এ গাড়িটি পরিবেশবান্ধব পাট দিয়ে বানানো।

এটির বডি ও অ্যারো জুট ফাইবার কম্পোজিট দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন কম্বাশন ভেইকলের পাশাপাশি ড্রাইভার লেস ভেইকল তৈরির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। কুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার ড. মুহাম্মদ মাছুদ বলেন, আড়াই বছর আগে প্রথম কাজটি শুরু হয়। প্রজেক্টের শুরু থেকেই তাদের একাডেমিক অ্যাডভাইজার হিসেবে ছিলাম আমি। শিক্ষার্থীদের ২৮ জনের টিমকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর তারা নিজেরাই ডিজাইন করে সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে এবং আমাদের শিক্ষকদের সহযোগিতায় সফলভাবে শেষ করতে পেরেছে। আমাদের জন্য এটি একটি মাইলফলক।

কুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুল ইসলাম বলেন, পরিবেশবান্ধব উপাদান দিয়ে তারা গাড়িটি তৈরি করেছে। পরিবেশবান্ধব বলা হচ্ছে কারণ জুট কম্পোজিট করে এটা তৈরি করা হয়েছে। করোনার কারণে আমরা কুয়েটের ল্যাব ব্যবহার করতে দিতে পারিনি।

পাঁচ থেকে সাতজনের গ্রুপ করে তারা প্রজেক্ট সম্পন্ন করেছে। উন্নত বিশ্বে এ ধরনের  প্রজেক্ট নিয়ে অনেক রিসার্চ চলছে।

কুয়েটের শিক্ষার্থীরা  এ রেসিং কার দিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, কিলোফ্লাইট প্রজেক্ট দিয়ে সারা বিশ্বে আলোড়ন তৈরি করতে পারবে বলে  আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর