উপমহাদেশের টেরাকোটা অলংকরণের বৈচিত্র্য ইন্দো-পারস্য-ভাস্কর কৌশল ও শিল্প মহিমায় বিস্ময়কর বৈচিত্র্যময় ও নান্দনিকতায় দৃষ্টিনন্দন ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দির এবং পাশে রয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্য সংবলিত কান্তনগর প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর। রয়েছে গেস্ট হাউস, বসছে ট্যুরিস্ট ক্যাম্প। আর এখানের জনবল সংকট দূর করতে পারলেই হতে পারে এ অঞ্চলটি পর্যটনে ব্যাপক সম্ভাবনাময়।
পুরো এলাকায় বাউন্ডারি দেয়াল তৈরি করা গেলে জায়গা বেদখল হবে না। এতে নিরাপত্তা বোধ করবে পর্যটকরা। প্রাচীন যুগের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে উত্তরের এই কান্তনগর প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরটি শত বছর আগের রাজা ও মুঘল যুগের জিনিসপত্র, সোনা-রুপার টাকা ছাড়াও মূল্যবান কষ্ঠিপাথরের মূর্তিসহ প্রাচীন বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সাজানো হয়েছে। দেয়ালের টেরাকোটা অলংকরণের মাঝে দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেই বিভিন্ন সাইজের থরে থরে সাজানো রয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্য সংবলিত ছোট-বড় ইতিহাসের ধারক-বাহক কষ্টিপাথরের বিভিন্ন দেবতার মূর্তি। যা পর্যটকদের মনের চাহিদা মেটাবে। কান্তনগর প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে সবচেয়ে ছোট ১ ফুট এবং সর্বোচ্চ ১০ ফুট উচ্চতার কষ্টিপাথরের মূর্তি রয়েছে। আবার ৫ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ৮৫০ কেজি ওজনের মূর্তিও রয়েছে এখানে। সব মিলিয়ে এখানে ৩ শতাধিক বিভিন্ন দেব-দেবতার মূর্তি রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
টেরাকোটা অলংকরণের বিস্ময়কর বৈচিত্র্যময় ও নান্দনিকতার ছোঁয়ায় দৃষ্টিনন্দন ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দির দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকদের ভিড় বাড়ছেই। কেবল ছুটিতেই নয়; বছরজুড়েই দেশ-বিদেশ থেকেও দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যের অনন্য এ নিদর্শন দেখতে আসছেন পর্যটকরা। আর এসব পর্যটকের বাড়তি জানার আগ্রহ মেটাতে চালু হয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্য সংবলিত কান্তনগর প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরটি।
দিনাজপুরের ঐতিহাসিক কান্তনগর প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের সহকারী কাস্টডিয়ান হাফিজুর রহমান জানান, ভারতের রাজমহল পাহাড়ের পাথর দিয়ে হাজার বছর আগে থেকে পূজা করার জন্য বিভিন্ন দেবতার মূর্তি বানানো হতো। কিন্তু ১২ শতকের পর থেকে সেই পাহাড় বিলুপ্ত হয়ে যায়। এ কারণে ওই পাহাড়ের পাথর না থাকায় আর কষ্টিপাথরের মূর্তি করা হয় না। তাই আজ কষ্টিপাথরের গুণাগুণ, মূল্য অনেক বেশি। তিনি আরও জানান, এই পর্যটন কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় জনবল সংকট রয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরটি সরকারি ছুটির দিনসহ সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে রবিবার। সোমবার বিকাল ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এবং অন্যদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকে এটি। টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। কান্তজিউ মন্দির দেখতে আসা সুকুমার, স্বপ্না, নিরঞ্জন, কবিতা রায়সহ অনেকেই জানান, মন্দিরের নান্দনিকতা দেখে আমরা অভিভূত। আর কান্তনগর প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরটি জানার আগ্রহ অনেকটাই মেটাতে পারবে সবার।